গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য শেরপুরে সাড়ে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ

204

শেরপুর, ৬ আগস্ট ২০১৮ (বাসস) : গ্রামীণ উন্নয়নে জেলার ৫২টি ইউনিয়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি সাড়ে ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তহবিল থোক বরাদ্দকৃত এ অর্থ ইতোমধ্যে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে মৌলিক থোক বরাদ্দ (বিবিজি) হিসেবে ৫২টি ইউনিয়ন পেয়েছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং গত অর্থবছরে ভাল কাজ করার পুরষ্কার হিসেবে ৩২টি ইউনিয়নকে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ (পিবিজি) দেওয়া হয়েছে। বিশ^ব্যাংক ও জিওবি’র যৌথ অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগের লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি-৩) বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোপূর্বে এলজিএসপি-১ এবং এলজিএসপি-২ বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে এলজিএসপি-৩ বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেরপুর কালেক্টরেটের স্থানীয় সরকার শাখা হতে এমন তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলায় এলজিএসপি-৩ থোক বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে পেয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ৬৪৩ টাকা। তন্মধ্যে মৌলিক থোক বরাদ্দ (বিবিজি) ২ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৮ টাকা এবং বলাইয়ের চর, বাজিতখিলা, চরপক্ষিমারী ও রৌহা ইউনিয়ন বাদে অন্য ১০ ইউনিয়নে দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ (পিবিজি) দেওয়া হয়েছে ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৫ টাকা। নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২ ইউনিয়নে বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২২ টাকা। তন্মধ্যে বিবিজি বরাদ্দ ১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪২৬ টাকা এবং বাঘবেড়, যোগানিয়া, কলসপাড়, নয়াবিল, নন্নী ও রামচন্দ্রকুড়া-মন্ডালিয়াপাড়া ইউনিয়ন বাদে অন্য ৬ ইউনিয়নে পিবিজি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩২ লাখ ৪৬ হাজার ৪২৬ টাকা। শ্রীবরদী উপজেলার ১০ ইউনিয়নে বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ টাকা। তন্মধ্যে বিবিজি বরাদ্দ ১ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৬ টাকা এবং কাকিলাকুড়া, কুড়িকাহনিয়া, তাতিহাটি, শ্রীবরদী সদর ও সিংগাবরুনা ইউনিয়ন বাদে অন্য ৫ ইউনিয়নে পিবিজি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ টাকা। নকলা উপজেলার ৯ ইউনিয়নে বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৪ টাকা। তন্মধ্যে বিবিজি বরাদ্দ ১ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার ৬১১ টাকা এবং গৌরদ্বার ইউনিয়ন বাদে অন্য ৮টি ইউনিয়নে পিবিজি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ২১৩ টাকা। ঝিনাইগাতী উপজেলার ৭ ইউনিয়নে বরাদ্দ পেয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৯১ হাজার ৫৪২ টাকা। তন্মধ্যে বিবিজি বরাদ্দ ১ কোটি ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ঝিনাইগাতী সদর ও গৌরীপুর এ ২টি ইউনিয়নে পিবিজি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ১৯ হাজার ৮৪৮ টাকা।
জেলার এলজিএসপি-৩ বরাদ্দপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে শেরপুর সদরের তিনটি ইউনিয়ন। সর্বোচ্চ পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বরাদ্দ ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৩৩২ টাকা। এ ইউনিয়নের দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দের (পিবিজি) পরিমাণও সর্বোচ্চ ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫ টাকা। এর পরেই রয়েছে লছমনপুর ইউনিয়ন। যার বরাদ্দ ৩১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৩ টাকার মধ্যে দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দের পরিমাণ ৯ লাখ ৭ হাজার ৯৮৪ টাকা। আর তৃতীয় স্থানে থাকা কামারিয়া ইউনিয়নের ৭ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৩ টাকা দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ সহ মোট বরাদ্দ মিলেছে ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৬ টাকা। অপরদিকে, সবচেয়ে কম বরাদ্দপ্রাপ্ত ৯ ইউনিয়ন হলো-সদরের চরপক্ষিমারী, নালিতাবাড়ীর বাঘবেড়, যোগানিয়া, কলসপাড়, নয়াবিল, নন্নী ও রামচন্দ্রকুড়া-মন্ডালিয়াপাড়া, শ্রীবরদীর শ্রীবরদী সদর এবং ঝিনাইগাতীর হাতিবান্ধা ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের সবাইকে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৬ টাকা করে কেবলমাত্র মৌলিক থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের কোন দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ (পিবিজি) জোটেনি। তাছাড়া দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ মেলেনি ঝিনাইগাতীর কাংশা, মালিঝিকান্দা, নলকুড়া ইউনিয়নে।
এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের শেরপুর জেলা ফ্যাসিলিটেটর (ডিএফ) মো. আব্দুর রহিম জানান, এলজিএসপি বাস্তবায়নে এখন মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। আর্থিক বিধি-বিধান ও ইউনিয়ন পরিষদ অপারেশন ম্যানুয়েল যথাযথভাবে অনুসরণ করে স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে স্কিম গ্রহণ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশণা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এলজিএসপির কাজে অনিয়মের অভিযোগে শ্রীবরদী উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যানকে স্থানীয় সরকার বিভাগ বরখাস্ত করেছে।
শেরপুর কালেক্টরেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) এটিএম জিয়াউল হক বলেন, এলজিএসপির বরাদ্ধকৃত টাকা শেরপুরের গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নকে শক্তিশালী করবে এবং বরাদ্দকৃত টাকা সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তা শেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে তদারকি করা হবে।