চীন মিয়ানমারে নির্বাচনের পর রোহিঙ্গাদের নিয়ে ‘ত্রিপক্ষীয় আলোচনার’ উদ্যোগ নিবে

397

ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : বেইজিং ঢাকাকে আশ্বাস দিয়েছে যে, আগামী মাসে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের পর তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিতীয় দফা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ‘ত্রিপক্ষীয় আলোচনার’ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে এ কে আবদুল মোমেনের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে এই আশ্বাস দেন।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে নির্বাচনের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করার আগে প্রথমে একটি রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের আলোচনারও পরামর্শ দিয়েছেন।
ওয়াং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে জানান যে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সম্প্রতি চীনকে আশ্বাস দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখছে এবং নেপিদো বেইজিংকে আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা শিগগিরই এই বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা শুরু করবে।
চীনা রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে শিগগিরই ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় সিনিয়র পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতিমূলক আলোচনা শুরু করার বিষয়েও জোর দেন।
বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের মধ্যে এ জাতীয় প্রথম ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানের পর থেকে সেখানে পৌঁছে। জাতিসংঘ এটিকে ‘জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তক উদাহরণ’ এবং অন্যান্য অধিকার সংস্থা ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছিল।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠির জন্য মানবিক সহায়তা পর্যালোচনা করতে ভার্চুয়াল দাতা সম্মেলনে একত্রিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে টেলিফোন আলাপ অনুষ্ঠিত হলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, ব্রুনেই, কানাডা, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, কুয়েত, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, রোমানিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভিয়েতনাম এতে যোগ দেয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মনে করিয়ে দেন যে, রোহিঙ্গারা অস্থায়ী ভিত্তিতে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলাদেশ আর মোটেও এই বোঝা বইতে পারছে না। সুতরাং তাদের শিগগির তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
‘মানবতাকে নরক থেকে বাঁচাতে জাতিসংঘের ভূমিকা মিয়ানমারের তাদের প্রতি নীতিগত পদক্ষেপেও দৃশ্যমান নয়’ বলে হতাশা প্রকাশ করে শাহরিয়ার আলম রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে সহায়তার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল আর পম্পেও বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পি৫ সদস্যদের মিয়ানমারে সহিংসতার অবসানে এবং সহিংসতার শিকারদের সহায়তার ক্ষেত্রে অবদান রাখার বিশেষ বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী অস্ত্র ও মাদক পাচার বন্ধে সহযোগিতাসহ রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অংশীদারদের সাথে কাজ করছে।
মঙ্গলবার তার ভারত ও বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সঙ্কট নিরসনে চীনের কাছ থেকে ‘যতোটা ‘প্রত্যাশিত ছিল’ তার তুলনায় তারা ‘খুব সামান্য’ ভূমিকা রেখেছে।
এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে রাজ্যে তাদের নিজ বাসভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের এক নম্বর লক্ষ্য।
গতকালের দাতা সম্মেলনের পর ইউএনএইচসিআর এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠির জন্য প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল ঘোষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবিক সাহায্যের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।