শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা করোনা ঝুঁকি কমায়

276

ঢাকা, ২২ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তরা বলেছেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমন রোধে এয়ার ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থান ও কোভিড-১৯ : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে আশু করণীয়’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, এয়ার ইন ও এয়ার আউট পয়েন্টে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ব্যবহার করে করোনা সংক্রমন ঝুঁকি কমানো সম্ভব। একই সাথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে পর্যপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রেখে আর্কিটেক্ট প্লান করতে হবে।
ওয়েবিনারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. রনক আহসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপকমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষক বিকাশ চন্দ্র মন্ডল এবং কানাডার ডালহৌসি বিশ্বিবদ্যালয়ের গবেষক রবার্ট বাকাইনস্কি পিইঞ্জ।
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে কোভিড-১৯ অনেকটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আমাদের দেশ অত্যন্ত জনবহুল, আমাদের সম্পদও সীমিত। আর তাই আমাদের জন্য বিপদের আশঙ্কা অনেক বেশি। পল্লী অঞ্চলে এয়ার কন্ডিশনিং এর ব্যবহার সামান্য হলেও শহর অঞ্চলে ব্যক্তি পর্যায়ে, ব্যবসায়িক, সরকারি বা বেসরকারী সকল ক্ষেত্রে এইচভিএসি (হিটিং ভ্যান্টিলেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং) এর ব্যবহার অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘তাই এয়ার কন্ডিশনিং কোভিড-১৯ এর উপর কতটা প্রভাব ফেলছে বা কতটা ঝুঁকি তৈরি করছে, সেটি হালকা করে দেখার উপায় নেই। ঢাকা এতটাই জনবহুল যে আমাদের একটি ভুল বা অসাবধানতা কোভিড-১৯ এর মারাত্মক বিস্তৃতি ঘটাতে পারে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমাদের দেশে নতুন নতুন যেসব বিল্ডিং, হাসপাতাল, মার্কেট তৈরি হচ্ছে সেখানে হয়তো এইচভিএসি কিছুটা হলে স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ডিজাইন হচ্ছে কিন্তু পুরনো স্থাপনাগুলি সেভাবে তৈরি করা নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিল্ডিং করা হয়েছে এক উদ্দেশ্যে কিন্তু সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে যেমন প্রাইভেট ক্লিনিক, গার্মেন্টস ইত্যাদি। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এই সব ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেশি।
আবদুস সবুর বলেন, বিশ্ব আজ মহামারি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত। সে দিক থেকে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো রয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থান গুলোতে বিভিন্ন কারণে কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কি কি করণীয় তা আমাদের গবেষকরা বিস্তারিত তুলে ধরবেন। এই ওয়েবিনার থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা আমরা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করবো।
আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষক বিকাশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, কোন ভাইসরাসের ড্রপলেট যত বড় হয় তত তাড়াতাড়ি তা নিচে পরে যায়। কিন্তু কোন ভাইসরাসের ড্রপলেট যদি ছোট হয় তাহলে এটা বাতাসে ভেসে বেড়াবে এবং তত বেশি সময় নিবে মাটিতে পড়তে। এসি করোনা ভাইরাস ছড়ায় না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানের বাইরে থেকে কোন ভাইরাস যদি ভেতরে চলে আসে তাহলে সেই ভাইরাস দ্রুত যেন বাইরে বের করা যায় তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। যার জন্য পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরী।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরণের ফিল্টার রয়েছে যে গুলো দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানের জীবাণু বাইরে বের করে আনা সম্ভব। এর ফলে ঝুঁকি কমে আসবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় এসি ইনস্টল করলে বাতাস জীবাণুমুক্ত ও নিরাপদ থাকবে। আবদ্ধ জায়গায় বাতাস নিরাপদ বা জীবাণুমুক্ত রাখতে তিনটি প্রধান বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, এগুলো হলো- ভেন্টিলেশন, এয়ার ফিল্টারেশন ও ডিস্ট্রিবিউশন।