একক-অঙ্কের ক্যাশ আউট চার্জ নির্ধারণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

973

ঢাকা, ১৭ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : অধিক টাকা লেনদেনের ব্যয় প্রান্তিক মানুষদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এমএসই) এই পরিষেবার সুযোগ গ্রহন করা থেকে দূরে রাখার কারণে বিশেষজ্ঞরা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারীদের নগদ আউট চার্জ একক অঙ্কে হ্রাস করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তারা সরকারের চলমান ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রচারাভিযান বাস্তবায়নের জন্য ঊর্ধ্বসীমা আরোপ করে এমএফএস চার্জ হ্রাস করতে হস্তক্ষেপ করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিবি) প্রতি এই আহ্বান জানান।
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমবিএস অপারেটর স্বেচ্ছায় তা করবে না বলে ক্যাশ আউট চার্জ কমাতে বিবি’র হস্তক্ষেপের কোনও বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, এমবিএস অপারেটররা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যবসা করছে কারণ বিবি এখনও কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারেনি।
এছাড়াও, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-সিএবি) পরিচালক আশীষ চক্রবর্তী বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ক্যাশ আউট চার্জ অনেক বেশি। দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া উৎসাহিত করার জন্য এটি একক-অঙ্কের হওয়া উচিৎ।
বর্তমানে, ক্যাশ আউট চার্জ এক হাজার টাকার জন্য ১৮.৫০ টাকা যদিও এমএফএস এজেন্টরা ২০ টাকা নিচ্ছে।
এদিকে, গ্রাহকদের লেনদেন প্রক্রিয়া সহজ করতে বাংলাদেশ ডাকঘর (বিপিও) এর এমএফএস শাখা নগদ ক্যাশ আউট চার্জ হ্রাস করে প্রতি এক হাজার টাকার জন্য ৯ টাকা নিচ্ছে।
এই ন্যূনতম হার পেতে একজন গ্রাহককে নগদ অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে এবং ন্যূনতম ক্যাশ-আউটের পরিমাণ ২ হাজার ১ শ’ টাকা হতে হবে। ক্যাশ-আউট চাজের্র ওপরে, গ্রাহককে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১৫ শতাংশ হারে একটি সম্পূরক শুল্ক দিতে হচ্ছে।
তবে, কেউ যদি অ্যাপটি ব্যবহার না করে মোবাইল অপারেটরদের ইউএসএসডি প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যাশ আউট করতে যান, তবে এই হার এক হাজার টাকার জন্য ১২.৯৯ টাকা এবং এখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করা হবে।
ক্যাশ আউট চার্জ হ্রাস করতে নগদে এর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আশীষ চক্রবর্তী বলেছেন, এটি তাদের গ্রাহকদের সহায়তা করতে পারে। তিনি বলেন, তবে অন্যান্য এমএফএস অপারেটরদের চাপ অগ্রহ্য করে নগদ কতদিন এই অফার চালিয়ে যেতে পারবে।
আশীষ বলেন, অন্যদেরও নগদের এই পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিৎ। কারণ স্বল্প হারে ক্যাশ আউট চার্জ লেনদেনকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলতে এবং বহুগুণে এ শিল্পের আকার প্রসারিত করতে পারে।
নগদ চার্জ হ্রাস করলেও অন্যরা এখনো তা করতে অনিচ্ছুক। বরং তারা নগদের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।
নতুন ক্যাশ আউট চার্জ বান্তবায়ন করতে নাগাদ আগের অংশ থেকে তাদের আয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। তবে বাজারের অন্যান্য অপারেটররা এখনও আগের মতো ক্যাশ-আউট চার্জ করছে।
নগদ বলেছিল, ক্যাশ আউট চার্জ একক অঙ্কে নামিয়ে আনার পরেও এই বিভাগ থেকে তাদের আয় এখনও একই আছে।
তারা জানিয়েছে, আগের হারে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে যদি এক হাজার টাকা ক্যাশ-আউট হত, তবে এর আয়ের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৭৪ টাকা, যা এখন ০.০২ টাকার নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে।
নগদ অর্থের সম্পূর্ণ হিসাবের ক্ষেত্রে, এসএমএসের খরচ আগের মতো ০.০৬৪ টাকা এবং এই ব্যয় সকল এমএসএফ অপারেটরের মতোই।
নতুন চার্জ কাঠামোতে ডিস্ট্রিবিউটরদের জন্য রাজস্বের অংশও হ্রাস পেয়েছে। তবে এজেন্টদের আয় আগের মতোই রয়েছে। তদুপরি লেনদেন বাড়ার কারণে তাদের আয় ইতোমধ্যে আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নগদের নতুন চার্জ স্ট্রাকচারে এজেন্টরা আগের মতো এক হাজার টাকার নগদ- অর্থের জন্য ৪. ১০ টাকা পাচ্ছেন।
নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বাসসকে বলেন, তারা শুরু থেকেই অন্যান্য অপারেটরের তুলনায় কম চার্জ নিয়ে গ্রাহক-বান্ধব পরিষেবা দিয়ে আসছে।
একক অঙ্কের ক্যাশ আউট চার্জ দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত এক দশক ধরে বেশ কয়েকটি এমএফএস অপারেটর উচ্চ চার্জ আরোপ করে গ্রাহকের পকেট কাটছে।
কয়েকটি এমএফএস অপারেটররা গ্রাহকদের প্রতারণা করার জন্য শর্ত আরোপ করার কথা বলছে। তারা চার্জ হ্রাস করতে নারাজ। তারা বলেছে, অপারেটররা বিল পরিশোধের জন্য মাত্র পাঁচজন গ্রাহককে ক্যাশ-ব্যাক দিচ্ছে। কিন্তু প্রচারাভিযান চালাচ্ছে যে, তারা সবাইকে ১০০ শতাংশ ক্যাশ-ব্যাক সুবিধা দিচ্ছে।