বিশ্বকাপ বাছাই: নেইমারের হ্যাটট্রিকে ব্রাজিলের জয়, বলিভিয়াকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে আর্জেন্টিনা

282

সাও পাওলো, ১৪ অক্টোবর ২০২০ (বাসস) : নেইমারের হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১০জনের পেরুকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে ব্রাজিল। এর মাধ্যমে ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন নেইমার।
হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে নেইমার তার আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যা ৬৪’তে নিয়ে গেছেন যা রোনাল্ডোর চেয়ে দুটি বেশী। কিন্তু এখনো ৭৭ গোল করে তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রাখা কিংবদন্তী ফুটবলার পেলেকে ধরতে হলে নেইমারকে আরো কিছুটা কষ্ট করতে হবে।
দিনের আরেক ম্যাচে লটারো মার্টিনেজ ও জোয়াকুইন কোরেয়ার গোলে পিছিয়ে থেকেও বলিভিয়ার বিপক্ষে ২-১ বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা।
লিমার ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আন্দ্রে কারিলো ও রেনাটো টাপিয়ার গোলে দুইবার এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক পেরু। কিন্তু দুটি বিতর্কিত পেনাল্টির পর ইনজুরি টাইমে নেইমারের হ্যাটট্রিক পূরন, সাথে গোলপোস্টের খুব কাছে থেকে রিচারলিসনের বুদ্ধিদীপ্ত গোলে ২০২২ কাতার বিশ^কাপ বাছাইপর্বে সেলেসাওরা তাদের জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে।
ম্যাচের ৬ মিনিটের মধ্যে ২০ গজ দুর থেকে জোড়ালো ভলিতে কারিলো পেরুকে এগিয়ে দেন। তার আগে মারকুইনহোস বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পেরু গোলরক্ষক পেড্রো গালেসে এরপর ফিরমিনোকে হতাশ করার পর রিচারলিসনের হেড আটকে দেন। ব্রাজিল ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের করে নিলেও পেরুর দূরন্ত ফরোয়ার্ডরা কাউন্টার এ্যাটাক থেকে বিপদজনক হয়ে উঠেন। তারই ধারাবাহিকতায় ক্রিস্টোফার গঞ্জালেসের শট কোনমতে রক্ষা করেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক উইভারটন। কিন্তু ডি বক্সের ভিতর ইয়োশিমার ইয়োতুনের বিপক্ষে আদায় করা পেনাল্টি থেকে নেইমার গালেসেকে উল্টোদিকে পাঠিয়ে ২৮ মিনিটে সমতা ফেরান। ৫৯ মিনিটে টাপিয়ার দুর পাল্লার শটে বদলী খেলোয়াড় রডরিগো কাইয়োর সাথে ডিফ্লেকটেড হলে উইভারটন সামলে নিতে পারেননি। ফলে আবারো এগিয়ে যায় পেরু। কিন্তু খুব বেশীক্ষন স্বাগতিকরা এই লিড ধরে রাখতে পারেনি। কর্ণার থেকে ফিরমিনোর হেডে রিচারলিসন হালকা স্পর্শে বল জালে জড়ালে ৬৪ মিনিটে আবারো সমতায় ফেরায় ব্রাজিল। ম্যাচ শেষে সাত মিনিট আগে ডি বক্সেও ভিতর নেইমারকে বাজেভাবে ফাউল করে বসেন কার্লোস জামব্রানো। স্পট কিক থেকে এবারো কোন ভুল করেননি পিএসজি সুপারস্টার নেইমার। রিচারলিসনকে কনুই দিয়ে আঘাতে অপরাধে ৮৯ মিনিটে জামব্রানো লাল কার্ড পেলে ১০ জনের দলে পরিনত হয় পেরু। ইনজুরি টাইমের চতুর্থ মিনিটে পেরুর কফিনে শেষ পেরেকটি টুকে দিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন নেইমার
এদিকের বিশ^কাপ বাছাইপর্বে আবারো কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা। বৃহস্পতিবার ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-০ গোলের স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল আলবেসেলেস্তারা। কালও বলিভিয়ার লা পাজে হার্নান্দো সাইলসে কোনমতে জয় পেয়েছে আকাশী নীল জার্সিধারীরা। ২৪ মিনিটে মার্সেলো মোরেনো মার্টিনস যেভাবে বলিভিয়াকে এগিয়ে দিয়েছিলেন সেটা তাদের প্রাপ্য ছিল। কিন্তু বিরতির ঠিক আগেই লটারো মার্টিনেজের হাত ধরে সমতায় ফেরায় সফরকারীরা। আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক ফ্র্যাংকো আরমারি তার লাইন তেকে বেরিয়ে আসলে ছয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বলিভিয়া। কিন্তু মোরেনো মার্টিনসের হেড অল্পের জন্য পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ২৪ মিনিটে অবশ্য আর কোন ভুল করেননি মোরেনো মার্টিনস। আলেহান্দ্রো শুমাসেরোর বামদিকের ক্রসে আর্জেন্টাইন দুই সেন্টার ব্যাকের মধ্য দিয়ে লাফিয়ে উঠে আট গজ দুর থেকে হেডের সাহায্যে বলিভিয়াকে এগিয়ে দেন মোরেনো মার্টিনস। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে হোসে কারাসকোর কাট করা বলে মার্টিনেজ বলিভিয়ার গোলরক্ষক কার্লোস লাম্পেকে পরাস্ত করলে সমতা ফেরায় আর্জেন্টিনা। কালকের ম্যাচে লিওনেল মেসিকে পুরো ম্যাচে খুব একটা সড়ব দেখা যায়নি। মার্টিনেজের সহযোগিতায় ৭৯ মিনিটে কোরেয়া আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেবার পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করেন।
কুইটোতে লুইস সুয়ারেজের দুই গোল সত্বেও পুরো ম্যাচে আধিপত্য দেখানো ইকুয়েডরের বিপক্ষে হার এড়াতে পারেনি উরুগুয়ে। পুরোপুরি ম্যাচের নিয়ন্ত্রন ধওে রেখে উরুগুয়েকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বাছাইপর্বে প্রথম জয় তুলে নিয়েছে ইকুয়েডর। ১৫ মিনিটে এ্যাঞ্জেল মেনার ক্রসে মোয়েসেস কেইসেডো হেডের সাহায্যে ইকুয়েডরকে এগিয়ে দেন। এরপর উভয় দলের একটি করে গোল ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তায় অফসাইডের কারনে বাতিল করা হয়। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে উরুগুয়ের অভিজ্ঞ সেন্টার-ব্যাক দিয়েগো গোডিনের ভুলে মাইকেল এস্ট্রাডা ব্যবধান দ্বিগুন করেন।
বিরতির পর উরুগুয়ের আরো একটি গোল বাতিল করে দেয় ভিএআর। ৫২ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়ার ব্যাকহিল থেকে ২০ হজ দুর থেকে দলের হয়ে তৃতয় গোলটি করেন এস্ট্রাডা। ৭৫ মিনিটে গঞ্জালো প্লাটা উরুগুয়ের ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাজো ও গোলরক্ষক মার্টিন কাম্পানাকে পাশ কাটিয়ে বল জালে জড়ালে ইকুয়েডরের জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচের শেষের দিকে দুটি পেনাল্টি থেকে সুয়ারেজ দুটি গোল করলেও তা পরাজয় এড়ানোর জন্য যথেষ্ঠ ছিলনা। এনিয়ে উরুগুয়ের জার্সি গায়ে সুয়ারেজ রেকর্ড সর্বোচ্চ ৬১ ও ৬২তম গোল করলেন।
ইনজুরি টাইমে রাদামেল ফ্যালকাওয়ের গোলে চিলির বিপক্ষে কোনমতে ২-২ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে কলম্বিয়া।