বাকেরগঞ্জের সেই ৪ শিশু হাইকোর্টে, মামলার কার্যক্রম স্থগিত

184

ঢাকা, ১১ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় চার শিশুর বিরুদ্ধে রেফ অভিযোগে হওয়া মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে চার শিশু ও তাদের অভিভাবকদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আদেশ দিয়েছে আদালত।
আজ রোববার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীম সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত আগামী ২২ নভেম্বর আদেশের পরবর্তী তারিখ ধার্য রেখেছেন।
বেসরকারি টেলিভিশন সময়তে প্রচারিত সংবাদ ৮ অক্টোবর রাতে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। ধর্ষণের অভিযোগে আনা মামলায় বরিশাল আদালতে জামিন নাকচের পর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো চার শিশুকে জামিন দিয়ে অভিভাবকদের কাছে হাইকোর্ট আদেশ অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর সকালে পৌঁছে দেয়া হয়।
ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুর জামিন নাকচ করে ৮ অক্টোবর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পাঠানোর আদেশ দেয় বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এনায়েত উল্লাহর আদালত। ৭ বা ৮ বছর বয়সের এ শিশুদের মামলা ও জামিন সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় বরিশালের সংশ্লিষ্ট আদালতকে চার শিশুর জামিন নিষ্পত্তির আদেশ প্রদান করেন। আদেশ বিষয়ে অবহিত হয়ে বরিশালের আদালত ওই শিশুদের জামিন মঞ্জুর করে। হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র হতে ওই শিশুদেরকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে রাতের মধ্যেই তাদের অভিভাবকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যশোর থেকে যেতে পরদিন ৯ অক্টোবর সকাল হয়ে যায়।
হাইকোর্ট আদেশে ওই চার শিশু, তাদের অভিভাবক, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি, থানার শিশু বিষয়ক (এসআই) কর্মকর্তা, জেলা প্রবেশন অফিসারকে আজ ১১ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে বলা হয়। আদালতের নির্দেশ অনুসারে সংশ্লিষ্টরা আজ আদালতে হাজির হন। প্রথমে শিশুদের আদালতের খাসকামরায় নেয়া হয়। এরপর আদালত দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এজলাস কক্ষে শুনানি শুরু করে।
চার শিশুর অভিভাবক, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ওসি, থানার শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা প্রবেশন অফিসারের বক্তব্য একে একে শোনে আদালত। ওই সময় আদালতে গনমাধ্যমকর্মী ছাড়া অন্যদের রাখা হয়নি। তবে আদালতে শুনানিতে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। পরে আদালত এ আদেশ দেয়।
আদালত বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটকে ওই মামলা শুনানির জন্য তার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। ম্যাজিস্ট্রেট হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। শিশুদের ক্ষেত্রে অভিযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধি বিধান অনুসরণ বিষয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
গত মঙ্গলবার ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, মামলার আসামিরা ওই শিশুটির খেলারসাথী। রোববার ৪ অক্টোবর বিকেলে বাগানে খেলার সময় তাকে তিন আসামির সহযোগিতায় এক আসামি ধর্ষণ করে। মামলার আসামিদের একজনের বয়স ১১ ও বাকিদের বয়স ১০ বছর দেখানো হয়েছে। বাস্তবে শিশুদের বয়স আরও কম। শিশুদের অভিভাবকদের দাবী পূর্ব শত্রুতার জেরে মামলাটি আনা হয়েছে।