বাজিস-৪ : বান্দরবানে বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে লালচে বেগুনি ফল

128

বাজিস-৪
বান্দরবান- বেগুনি ফল
বান্দরবানে বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে লালচে বেগুনি ফল
বান্দরবান, ১১অক্টোবর, ২০২০(বাসস): জেলার লাইমি পাড়ার বাসিন্দা চমসাং বম। পাড়া থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে তার ফলদ বাগান । উঁচু নিচু পাহাড় ডিঙিয়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা খানেক। বর্ষকালের এ সময়ে তার বাগানের বেশির ভাগ গাছে ঝুলছে ছোট ছোাট গাঢ় সবুজ আর লালচে বেগুনি ফল। ফল পরিপক্ক হওয়ায় বাগানে দুজন পাহাড়ি যুবক গাছে উঠে লালচে বেগুনি ফলগুলো ছিঁড়ে থুরং (এক ধরনের বিশেষ ঝুড়ি) ভর্তি করছেন ।
এমন ফলের পরিচয় জানতে চাইলে ফল চমসাং বম জানান, এ ফলের নাম পাইন্যাগুলা । খেতে অনেক সু-স্বাদু । পাইন্যাগুলা ফল সাধারণত পাকা অবস্থায় সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া যায়। পাকা ফল দুই হাতের তালুর মধ্যে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নরম করে খেলে মিষ্টি লাগে।
তিনি আরো জানান, বেশির ভাগ গাছের বয়স ৮ থেকে ১০ বছর হবে। প্রত্যেকটি গাছের ফলন ভালো। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ মণ ফল পাওয়া যায়। এ ফলের চাহিদাও বেশি।
পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর কাছে পাইন্যাগুলা বিভিন্ন নামে পরিচিত। চাকমারা বলে পাইন্যাগুলা। রাখাইনরা বলে খরো গোলা, খুমি ভাষায় থিংগ্রং, বম ভাষায় রিয়ামচা, মারমা ভাষায় ট্যামাগ্রাই, ত্রিপুরা ভাষায় পাইন্যা মোলা, মারমা ভাষায় নে-রিশি।
চমসাং বমের মত পাইন্যাগুলা বা রিয়ামচা গাছের ফল পাড়তে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডাংলিয়ান বম । তিনি বলেন, প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা দামে পাইকারদের বিক্রি করছি। সবুজ ফল কালচে আকার ধারণ করলেই এ ফল গাছ থেকে ছিঁড়া হয়। গত বছরের মত এ বছরও ফলন ভালো হয়েছে। গাছ বড় হয়ে গেছে তেমন পরিচর্যা করতে হয় না।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, পাহাড়ে ও টিলায় এ ফলের গাছ ভালো জন্মে। বীজ থেকে ও গুটি কলম করে পাইন্যাগুলার চারা তৈরি করা যায়। বর্ষকালে চারা কলম তৈরির উপযুক্ত সময়। এ গাছের তেমন কোনো যতেœর দরকার হয় না। পাহাড়ের ঢালে চারা পুঁতে দিলেই কয়েক বছরের মধ্যে সেসব গাছ ফলবতী হয় ।
ফলবতী গাছের পাকা ফল কিনার জন্য সকাল থেকে বাগান মালিকের কাছে এসে হাজির পাইকার মো : বুলবুল। গত বছরের চেয়ে মণ প্রতি কিছু টাকা কমানোর জন্য দরকষাকষি করছেন বুলবুল । তিনি জানান, বান্দরবানের বাহিরে এ ফলের চাহিদা অনেক বেশি। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছি এ ফল কেনার জন্য । বাগান মালিক থেকে প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকায় কিনে নিয় । মণে ২০০ টাকার মত লাভ করে ঢাকা, চট্টগ্রামে বিক্রি করে দিয়।
লোভনীয় ফল হওয়ায় বান্দরবান বাজারেও এ ফল দাম দিয়ে বিক্রি করছে বিক্রেতারা । কেজি প্রতি বিক্রি করছেন ১২০-১৫০ টাকা।
পরিবারের সদস্যরা এ ফলের জন্য কয়েক দিন ধরে বিরক্ত করছে । তাই কিনলাম। দাম আছে মোটামুটি জানালেন বান্দরবান বাজারের খুচরা ক্রেতা সাইফুল আলম ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মে থেকে জুলাই মাসে পাইন্যাগুলা গাছে ফুল আসে। ফল পাকে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। এর ফল গোলাকার মার্বেলের মতো, খোসা মসৃণ। কাঁচা ফলের রঙ গাঢ় সবুজ। আর পাকলে ফলের রঙ লালচে বেগুনি হয়ে যায়। ফলের ভেতরে শাঁসের রঙ গোলাপি সাদা বা হালকা বাদামি। পুরো ফল খোসাসহ খাওয়া হয়। পাকা ফলের শাঁস বেশ মিষ্টি, টক ও সুস্বাদু।
পাইন্যাগুলা পুষ্টিতে ভরপুর এবং গাছ অপ্রচলিত ফল বলে জানালেন বান্দরবান কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক এ কে এম নাজমুল হক । তিনি আরো জানান, পাইন্যাগুলা একটি অপ্রচলিত ফল। একে লুকলুকিও বলা হয় । এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি । অপ্রচলিত ফল বিধায় এর আবাদ খুবই কম। তবে এর চাহিদা বেশি। পর্যটকরা এ ফল বেশি কিনে। কৃষকরা এর দামও ভাল পায় । পাহাড়ি এলাকায় এ ফলের আবাদ অনেক ভালো হয় ।
বাসস/সংবাদদাতা/১৪৫৫/নূসী