দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ মন্দার রেকর্ড, শ্রমজীবীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে : বিশ্ব ব্যাংক

340

ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতির উপর কোভিড-১৯ এর বিধ্বংসী প্রভাব অব্যাহত থাকায় এ অঞ্চল সবচেয়ে খারাপ মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এতে শ্রমিকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে, অন্যদিকে এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার লাখ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংক আঞ্চলিক হালনাগাদ তথ্যে এ কথা জানিয়েছে।
আজ প্রকাশিত সর্বশেষ দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক আলোকপাতে এই অঞ্চলজুড়ে প্রত্যাশার চেয়েও তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে বার্ষিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর ২০২০ সালে আঞ্চলিক প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতে ২০২০ সালে মার্চে শুরু হওয়া অর্থবছরে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে, এই অঞ্চলের মাথাপিছু আয় ২০১৯ সালের প্রাক্কলনের তুলনায় ৬ শতাংশের নিচে থাকবে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি মহামারীর কারণে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ক্ষতি পূরণ হবে না।
পূর্ববর্তী মন্দা এবং বিনিয়োগ ও রপ্তানি হ্রাস এ মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই সময়টা হচ্ছে ভিন্ন প্রকৃতির। দক্ষিণ এশিয়ার চাহিদার মূলধারা এবং অর্থনৈতিক কল্যাণের মূল সূচক মানুষের ভোগ প্রবণতা ১০ শতাংশেরও বেশি কমে যাবে বলে দারিদ্র্যের হার আরো বাড়বে। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় কিছু দেশের দরিদ্রতমদের জীবিকার ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টভিগ শ্যাফার বলেছেন, কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির মন্দা আশঙ্কার চেয়েও অনেক বেশি তীব্র হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং শ্রমজীবীরা হঠাৎ চাকরি ও মজুরি হারিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিক ত্রাণ বিতরণ মহামারীর প্রভাবকে লাঘব করেছে, কিন্তু সরকারগুলোকে অনানুষ্ঠানিক খাতের সংকট মোকাবেলার জন্য চৌকশ নীতির গ্রহন এবং তাদের সীমিত সম্পদ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বরাদ্দ করতে হবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ^ ব্যাংকের কান্ট্রি পিরেক্টও মার্সি টেম্বন বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তবে, প্রভাবগুলো হ্রাস করার জন্য সরকার যে নীতিগুলো নিয়েছে, সেগুলো সঠিক দিকে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একটি স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারকে তার রাজস্ব ও ঋণের অবস্থান রক্ষা, আর্থিক খাতের শক্ত অবস্থা গড়ে তোলা, দরিদ্র ও অসহায়দের রক্ষা করা এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকদের তিন-চতুর্থাংশ শ্রমজীবী অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের উপর নির্ভর করে। ফলে বিশেষ করে পর্যটন, খুচরা ব্যবসা এবং পরিবহন খাত সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, অননিুষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং ফার্মগুলোর কোভিড-১৯ এর অপ্রত্যাশিত ধাক্কা মোকাবেলা করার কোন সুযোগ নেই।
দরিদ্রদের ক্রমবর্ধমান খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে গুরুতর ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোভিড-১৯ সংকট আয় বন্টনের মাঝামাঝি সময়ে অনানুষ্ঠানিক অনেক শ্রমজীবী কর্মীর জন্য আঘাত হিসেবে দেখা দিয়েছে।
অল্প কিছু অনানুষ্ঠানিক কর্মী সামাজিক বীমার আওতায় পড়ে, তাদের সঞ্চয় বা আর্থিক সুবিধা আছে। এই প্রতিবেদনে বৃহত্তর উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং মানব পুঁজির সহায়ক সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা এবং নীতিমালা তৈরি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রচেষ্টায়, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন লাভ সরকারগুলোকে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠতে সহায়তা করবে। দীর্ঘমেয়াদে, ডিজিটাল প্রযুক্তি শ্রমজীবী কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরিতে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার বলেন, কোভিড-১৯ আগামী বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়াকে গভীরভাবে বদলে দেবে এবং তার অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী দাগ রেখে যাবে। কিন্তু স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের জন্য একটি উপায় রয়েছে। এই মহামারী এমন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে পারে যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে পারে। কারণ বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি আরও ডিজিটাল হওয়ার কারণে প্রযুক্তি সংক্রান্ত পরিষেবাগুলোতে তুলনামূলক সুবিধা এবং পর্যটন খাতে চাহিদা আরো বাড়তে পারে।