বাসস দেশ-৩৮
প্রতিমন্ত্রী-বিএসআরএফ-সংলাপ
ভূমিকম্প সহনীয় দেশ গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী
ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান বলেছেন, জাপানের সহায়তায় বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে ।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন ।
প্রধান তথ্য অফিসার (পিআইও) সুরথ কুমার সরকার অুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ।
ডা: মোঃ এনামুর বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্ভাব্য ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু ভূমিকম্প নিয়ে আমরা খুব বেশি কাজ করতে পারি নি। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কাজ নিয়ে আমরা আলোচনা-সেমিনার করেছি। ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্র গঠন করতে আমরা এতো দিন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি।’
জাপান একসময় ভূমিকম্প প্রবণ রাষ্ট্র ছিল এ কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমিকম্প হলেও সেখানে কোনো ভবন ধসের সংবাদ এখন আর পাওয়া যায় না। কারণ প্রতিটি ভবন ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। সেখানে ১০ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে ৭০তলা ভবন টিকে আছে। তাদের ভবনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে ভূমিকম্পে নষ্ট হবে না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপানের সাথে কয়েক দফা আলোচনার পর বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় করতে তারা তিন ধাপে ৫০ বছরের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে।
ডা.এনামুর বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল স্থাপনা ভূমিকম্প সহনীয় করতে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা দেবে জাপান । আমরা সে কাজটি শুরু করেছি। এ কাজটি করে দিতে পারলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ভূমিকম্প সহনীয় নিরাপদ রাষ্ট্র পাবে।’
তিনি বলেন,‘প্রথম ধাপে পুরান ঢাকার মতো অবকাঠামো ডিমোলিশ করা হবে এবং সেখানে নতুন ডিজাইন করে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করে উপকারভোগীদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হবে। এটার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে জাপান। দ্বিতীয় ধাপে হাইরাইজ ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে এবং এগুলো ভূমিকম্প সহনীয় না হলে রেক্টোফিটিংয়ের মাধ্যমে এগুলো স্ট্রেনদেনিং করা হবে। যেটা জাপান করেছে।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, তৃতীয় ধাপে জাপান সরকার ইঞ্জিনিয়ার এবং আর্কিটেকদের প্রশিক্ষণ দিবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা যাতে ১০ রিখটার স্কেলকে ল্যান্ডমার্ক ধরে নতুন যে ভবন হবে সেগুলো ডিজাইন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তিন ধাপের এই কাজের জন্য ফোকাল পয়েন্ট নির্বাচিত করা হয়েছে। করোনার কারণে জাইকার সব সদস্য দেশে চলে গেছে। তারা আসলে প্রথমে সমীক্ষা এবং পরে কাজ শুরু হবে।’
ডা. এনাম বলেন, ‘পুরান ঢাকার যে ভবনগুলোর প্রতœতাত্ত্বিক মূল্য আছে সেগুলো যদি রেট্রোফিটিং (পূর্বে নির্মিত বিল্ডিং বা স্ট্রাকচারে নুতন কিছু যোগ করে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া) করে ভূমিকম্প সহনীয় করা যায় তাহলে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জাপানীরা। আর কোনোভাবে যদি রেট্রোফিটিং করা না যায় এবং জীবনের ঝুঁকি থাকে তাহলে তারা আমাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’
কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সমীক্ষার পর তাদের সাথে আর্থিক ও কারিগরি বিষয়ে চুক্তি হবে এবং তারপর কাজ শুরু হবে।’
ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা দেয়ার বিষয়টি পৃথিবীতে উন্নতি লাভ করেনি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চীন ২০ সেকেন্ড আগে পূর্বাভাস দিলেও এটা খুব বেশি কার্যকর নয়। এটা নিয়ে সারা বিশ্বে কাজ চলছে।’ ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগে উদ্ধারকাজের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হবে বলে তিনি জানান।
দেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে ২০০ থেকে ২৫০ জন মানুষ মারা যায় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যার অধিকাংশই হাওর অঞ্চলে। আমরা বজ্রপাতের পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এটার কাজ চলছে এবং যন্ত্রপাতি আসলে ৪০ মিনিট আগে সংকেত দেয়া হবে। সংকেত দেয়ার পর তারা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে সেজন্য হাওরসহ বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে একতলা বিশিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসানোর পরিকল্পনা করেছি।’
কেন্দ্রীয়ভাবে দুর্যোগ মনিটরিং করার জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তেজগাঁওয়ে তিন একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন। সেখানে চীনের সহায়তায় ভবন তৈরি করা হচ্ছে।’
বন্যার সময় আশ্রয় দেয়ার জন্য ৪২৩টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ প্রায় শেষ হয়েছে জানিয়ে এনামুর বলেন, ‘এছাড়া ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র করাও শেষ হয়েছে। ৫৫০টি মুজিব কেল্লা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো প্রতিবন্ধী বান্ধব এবং সোলার সিস্টেমসহ সার্বিক সুবিধা আছে।’
বাসস/সবি/জেডআরএম/২১০০/ এমএন
Home 0সকল সংবাদ বাসস দেশ বাসস দেশ-৩৮ : ভূমিকম্প সহনীয় দেশ গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে...