নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও অপসারণে হাইকোর্টের রুলসহ নির্দেশনা

845

ঢাকা, ৫ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস) : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার বিষয়টি নজরে আনার পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. মহি উদ্দিন শামীম সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আজ রুলসহ আদেশ দেয়
আদেশে বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে ভিডিওটি পেনড্রাইভ বা সিডিতে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ওই নারীর নিরাপত্তা, জবানবন্দি নেয়া, দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক ঘটনায় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো অবহেলা আছে কি না তা অনুসন্ধানে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এডিসি) নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জেলার সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে আদালতকে প্রতিবেদন দিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জের ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে মতামত তুলে ধরেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, সম্পাদক ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ইয়াদিয়া জামান, জামিউল হক ফয়সাল এবং রাশিদা চৌধুরী নিলু, তানজীম আল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক একজন নারীকে বিবস্ত্র করে মারধর করছে। তাদের একজন পা দিয়ে ওই নারীর মুখ চেপে ধরেছে। বার বার আকুতি জানানোর পরও নির্যাতন করা বন্ধ করেনি যুবকরা। এক মাসেরও বেশি সময় আগের এই ঘটনার ভিডিও রোববার ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।
ওই নারীকে উদ্ধার করে রোববার রাতে নিজেদের হেফাজতে নেয় স্থানীয় পুলিশ। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, দাম্পত্য কলহের জেরে ওই নারী একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাবার বাড়িতে থাকছিলেন। দীর্ঘ দিন পর গত ২ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে দেখা করতে সেখানে যান তার স্বামী। সেদিন রাত ৯টার দিকে আসামিরা তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে এবং ওই নারীর স্বামীকে মারধর করে পাশের আরেকটি ঘরে নিয়ে বেঁধে রাখে। পরে তারা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তাতে বাধা দিলে আসামিরা তাকে নির্যাতন করে এবং মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্য ভিডিও করতে থাকে। ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা কাউকে কিছু জানালে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। ওই নারী কাউকে ঘটনাটি না জানিয়ে জেলা শহরের মাইজদীতে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেও আসামিরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ‘কুপ্রস্তাব’ দেয়। রাজি না হলে সেই রাতের ভিডিও তারা ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় বলে মামলায় বলা হয়। আসামিরা রোববার দুপুরে সেই ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওটি সরাতে আজ সোমবার আদালতের কাছে আরজি পেশ করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তখন আদালত তাকে লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলেন।