বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সরকার করোনাভাইরাস মোকাবেলার পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

135

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-কার্যনির্বাহী সংসদ-ভাষণ
সরকার করোনাভাইরাস মোকাবেলার পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিএনপি’র করা ঢালাও সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, অনেকেরই আমরা ভাষণ শুনি। অনেকে অনেক কথা বলে বা যেগুলো আমরা করে ফেলি বা নির্দেশনা দেই বা পদক্ষেপ নেই, তার ওপর আবার অনেককেই উপদেশ দিতেও দেখেছি।
তাঁর সরকারের করে দেওয়া স্বাধীন মত প্রকাশের অপব্যবহার করে অনেকেই পত্র-পত্রিকায় এবং ‘মিডিয়া টকশো’তে সরকারের বিষোধগার করে (অনবরত) গেলেও মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘কেউ আবার বিচার করে আওয়ামী লীগ কতটুকু করলো, আর কতটুকু করলো না। কিন্তু আয়নায় তারা নিজেদের চেহারা দেখে না,’ যোগ করেন তিনি।
দেশের বিভিন্ন এনজিও’র করোনাকালীন কোন ভূমিকা না থাকার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশেতো গরিব মানুষকে সেবা করার অনেক রকম প্রতিষ্ঠান, অনেক রকম কার্যক্রম আমরা দেখি। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়ে তাদের কোন কার্যক্রম আমরা দেখি নাই। এটা হলো বাস্তবতা। তখন সবাই ঘরে, মানুষের পাশে আর কেউ নাই। তবে, মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ থেকেছে কারণ এটা জনগণের সংগঠন।’
করোনার কারণে বিশ্বঅর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়লেও বাংলাদেশে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাঁর সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিয়েছি, যেটা একটা কঠিন কাজ ছিল। আমরা বলেছি খরচ করবো সীমিত আকারে, যেটুকু প্রয়োজন সেইটুকু। কিন্তু অর্থনীতি গতিশীল রাখার জন্য বাজেট আমরা ঠিক রেখেছি।’
সংকট মোকাবেলায় সর্বস্তরের মানুষের জন্য সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাচাই বাছাই করে তালিকা নিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষক, শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষদের কাছে নগদ অর্থ এবং সামগ্রী আমরা পৌঁছে দিয়েছি।’
কারণ সে সময় দুর্গত মেহেনতি মানুষের নগদ টাকার যেমন দরকার ছিল তেমনি বিভিন্ন সামগ্রী এবং খাদ্যেরও প্রয়োজন ছিল, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯-এর শুরুতেই আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম খাদ্য উৎপাদন আমাদের ঠিক রাখতে হবে। কারণ করোনার জন্য বিশ্বব্যাপী মন্দা আসবে আর মন্দার সঙ্গে কিন্তু খাদ্যাভাব এবং দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। কাজেই কৃষক যেন মাঠে থাকে, উৎপাদন করতে পারে এবং বাংলাদেশে যেন সে পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। আল্লাহর রহমতে সে অবস্থার সৃষ্টি বাংলাদেশে হয়নি।
তিনি ফসল তোলায় সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোয় পুনরায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি যখনই ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছি কৃষকদের কাছে যেতে হবে, ধান কাটতে সাহায্য করতে হবে। বিনা দ্বিধায় তারা ছুটে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সঙ্গে আমাদের আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব লীগ এবং কৃষক লীগসহ সবাই মাঠে নেমে গেছে। হাওড় অঞ্চলে ধান কাটতে লোক পাঠানো এবং তাদের থাকা খাওয়াসহ সব ধরনের ব্যবস্থা আমার নির্দেশে করেছে স্থানীয় প্রশাসন- তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মোকাবেলায় জেলা পর্যায় পর্যন্ত হাসপাতালগুলোকে উন্নত করা এবং অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখাসহ দুই হাজার চিকিৎসক ও তিন হাজার নার্স এবং টেকনিশিয়ান নিয়োগে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আমলাতান্ত্রিত জটিলতায় দুর্যোগকালীন যেন তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নে বিলম্ব না হয় সে জন্য সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘অর্থ (মন্ত্রণালয়), জনপ্রশান থেকে শুরু করে যাদের যাদের দরকার তাদের একই টেবিলে বসিয়ে একসাথে সিদ্ধান্ত দিয়ে, একসাথে ফাইল করে অন দ্য স্পট সই করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।’
ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু ফর্মালিটিজ শিথিল করেও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিছু ফর্মালিটিজ আমরা শিথিল করেছি। হ্যাঁ, সেগুলো পরে করবো, কিন্তু আগে আমার লোক নিয়োগ দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও একটা কথা স্বীকার করতে হবে তাদের তিনি যথন যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা সেভাবেই কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, তারা সেভাবে কাজ করেছে বলেই আমরা এই করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।
করোনাকালীন বিভিন্ন দেশে লকডাউনের সময় প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিদেশে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর পাশাপাশি বিশেষ বিমান পাঠিয়ে বিভিন্ন দেশে থেকে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। তারাতো আমাদের দেশের নাগরিক। কাজেই তাদের ভাল-মন্দ আমাদেরই দেখতে হবে।’
করোনাকালীন বিভিন্ন স্থানে সশরীরে যাওয়া না গেলেও তাঁর সরকারের করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক শক্তি হচ্ছে সব চেয়ে বড়। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে সেটা করোনা মোকাবেলায় যখন মাঠে নেমেছে, তখনই প্রমাণিত হয়েছে।’
করোনাকালীন দলের ৫২২ জন নেতা-কর্মী মৃত্যুবরণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এত বড় আত্মত্যাগ আর কোন দল কিন্তু করেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন সেই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রত্যেকের দোরগোঁড়ায় পৌঁছতে পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ যেন আমরা গড়তে পারি সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সম্মেলন হলেও হয়তো করোনার কারণে কমিটি আমরা করতে পারিনি। খোঁজ নিতে কিংবা যেতে পারিনি। কাজেই আমার মনে হয় এখন একটা সময়, সেসব কাজগুলো আমরা করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি-জামায়াতের আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার পুনরায় কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে আমরা যদি একটু বিচার করে দেখি কিভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হত্যা, নারী নির্যাতন, পাশবিক অত্যাচার, ঘর-বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও দখল করেছে। রেল, লঞ্চ, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন এবং ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে, যেগুলো আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সাবাইকে আমরা সহযোগিতা করেছি এবং অনেককে এখনও যেখানে যতটুকু পারছি সাহায্য করে যাচ্ছি।
সরকার, তাঁর দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো মুজিববর্ষে এক কোটি বৃক্ষরোপণ করবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও ইতোমধ্যে চলমান এই কর্মসূচিতে এক কোটির ওপর বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৮১৫/স্বব