বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (২য় ও শেষ কিস্তি) : সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্থাপনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে : প্রধানমন্ত্রী

513

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (২য় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা- পানিভবন
সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্থাপনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা আর সেটিকে অব্যাহত রাখেননি।
‘কমিশনবাজি আর নিজেদের পকেট ভারি করাই তাদের উদ্দেশ্য থাকায় বিমানের আর অগ্রগতি হয়নি’- এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রথমবার ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালিনই তাঁর সরকার চট্টগ্রামে বিমানবন্দর তৈরি করে সেটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে। সেইসাথে সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করাসহ ঢাকার বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রীজ থেকে শুরু করে কার পার্কিং নির্মাণ করে।
কারণ ’৯৬ সালে বিমানবন্দরে কোন বোর্ডিং ব্রীজ না থাকায় সে সময় বিমানে পায়ে হেঁটে গিয়ে চড়তে হতো বলেন তিনি।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব থেকে একটা আদর্শ জায়গা হতে পারে, যদি আমরা একে সেভাবে উন্নত করতে পারি।’
জাতির পিতা বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড (সুইজারল্যান্ড অবদি ইষ্ট) হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন বলেও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক এয়ার রুটের মধ্যে থাকায় আমাদের সে সম্ভাবনাটা রয়েছে। যদি আমরা সেটাকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে এয়ারলাইন্সই আমাদের অনেক টাকা উপার্জন করে দিতে পারে।
শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বিমান এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের প্রসংগ টেনে বলেন, ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা এবং সিলেট, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আরও উন্নত করার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যাতে নেপাল, ভূটান এবং ভারতসহ পাশ^বর্তী দেশগুলো ব্যবহার করতে পারে এবং পর্যটনের একটা বিশাল সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়।’ সঙ্গে বরিশাল এবং বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দর সহ আভ্যন্তরীন রুটের বিমানবন্দরগুলোও নতুন করে চালু করা হয়েছে, বলেন তিনি।
এভাবেই নৌপথ, সড়ক পথ, রেল পথ এবং আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ হবে দেশের অর্থনীতি তত গতিশীলতা পাবে, উন্নত হবে। পাশাপাশি মানুষের যাতায়াত ও সহজ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন রেলপথ সৃষ্টি এবং সংস্কার এবং রেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রেলপথের উন্নয়নের মাধ্যমেও দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছে তাঁর সরকার।
জেট ফুয়েল যাতে সরাসরি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আসতে পারে সেজন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজও তাঁর সরকার শুরু করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর গ্রীণরোডে প্রায় ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ তলা-বিশিষ্ট নবনির্মিত ‘পানি ভবনের’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভবনের যখন নামকরণ করি তখন বলেছিলাম পানি ভবনে যেন পানি থাকে। জলাধার থাকে এবং মূল পরিকল্পনা ও নকশাটি সেভাবেই করা হয়েছে।’
জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নতুন জলাধার সৃষ্টি এবং বিদ্যমান জলাধারগুলোতে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে পূর্ববর্তী সামরিক সরকারগুলোর বিরুদ্ধে দেশের জলাধার ধ্বংস করারও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান পানি ভবনের কাছে পান্থপথে এক সময় বিরাট বিল থাকলেও সেখানে কোন জলাধার না রেখে বক্স কালভার্ট করারও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে যত খাল, বিল, হাওর, পুকুর, নদী যা আছে সবগুলোর যাতে নাব্যতা থাকে, সেগুলো খনন করা, সেখানে পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে।
তাতে আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং মৎস্য উৎপাদনও বাড়বে। সাথে মানুষের চহিদাটাও আমরা পূরণ করতে পারবো, বলেন তিনি।
জলাধার বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘যে পানির জন্য এক সময় হাহাকার ছিল সেই হাহাকারটা বন্ধ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আমাদের দেশের মানুষকে সুপেয় পানি সরবরাহ করা।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের আওতায় এসেছে। ঢাকা শহরে পানির সমস্যা দূর করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিতে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা গবেষণার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কোনো কাজেই উৎকর্ষতা সম্ভব না।’
এক্ষেত্রে দেশের নদীগুলো ড্রেজিং এবং নাব্যতা বৃদ্ধিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে স্থাপনা নির্মাণ হোক না কেন সেখানে যেন অন্তত বৃষ্টির পানি যাতে সংরক্ষণ করা যায় সে জন্য যেন জলাধার থাকে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি বলেন, তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী স্থাপনা তৈরি হলে আমাদের পরিবেশটাও যেমন সুন্দর থাকবে তেমনি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেটি কমে যাচ্ছে, সেটিও আর কমবে না। দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি গণস্বাস্থ্যের জন্যও উপযোগী হবে।
তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিল বলেই আজকে করোনার মধ্যেও তাঁর সরকার গতিশীল রয়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে এবং সেগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে পারছে-এমন অভিমত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা নির্মিত এবং নির্মাণাধীন স্থাপনাগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের পরামর্শ দেন। তিনি নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর কাজ যথাসময়ে এবং যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্যও এ সময় সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬২০/এএএ