কুষ্টিয়া, ১ অক্টোবর, ২০২০ (বাসস): হেমন্তের বাতাসে দোল খাচ্ছে দিগন্ত বিস্মৃত রোপা আমন ধানের সবুজ ক্ষেত। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় এ মনোরম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। জেলায় এবারের মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, অনুকূল আবহাওয়া এবং রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় সেই সম্ভাবনা জেগেছে। ধান চাষিরা উল্লেখ করেন, এ বছর বৃষ্টিপাতের হার বেশি হওয়ায় ক্ষেতে সেচসহ অন্যান্য খরচ তুলনামুলক কম। একইসঙ্গে বৃষ্টির পানির সুবাদে ধানের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। ফলনের পর ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী চাষিরা। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউপির চুনিয়াপাড়া গ্রামের ধান চাষি মো. মিকাইল হোসেন এবার ছয় বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্ষেতের পাশে জিকে ক্যানেল রয়েছে। এর পানি দিয়ে আমরা ধান চাষ করি। বিঘাপ্রতি ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে আমার। আশা করছি, প্রতি বিঘায় ১৫-১৬ মণ ধান পাবো।’ একই এলাকার ধান চাষি মো. জিন্নাহ বলেন, ‘এবার সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। আমি নিজেই ক্ষেতের পরিচর্যা করি। পাশাপাশি কিছু শ্রমিক নেওয়া লাগে। এ বছর আবহাওয়া আমাদের অনুকূলে থাকায় ধান যথেষ্ট ভালো। আশা করছি, ফলনও ভালো হবে।’ ধান চাষি আব্দুর রহমান মোল্লাহ এবার তিন বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। তিনিও একই আশার কথা শোনালেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের চেহারা বেশ ভালো।’ উপজেলার কেস্টপুর গ্রামের ধান চাষি ইমারুল ইসলাম পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। এবার ভালো লাভের আশা আছে তার। তিনি উল্লেখ করেন, ‘ধান চাষে আমার বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা। আশা করছি, এবার প্রতি বিঘা থেকে ১৫ মণ করে ধান পাবো। এছাড়া বর্তমানে ধানের বিচালির দাম বেশ ভালো।’ স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেন, ‘এবার মাঠের অবস্থা বেশ ভালো। পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। তাই ধানের তেমন কোনও রোগবালাই নেই। ফলে এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, কুষ্টিয়ায় এবার ৮৮ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এটাকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আমাদের আশা, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদিত হবে।’ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কথায়, ‘এবারের আমন মৌসুমে ক্ষেতে তেমন রোগবালাইয়ের প্রভাব দেখছি না। ধানের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, কৃষকরা এবার অত্যন্ত লাভবান হবে।’