নড়াইলে মালটা চাষে স্বপ্ন পূরণ আফরোজার

379

নড়াইল, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জেলায় মালটার চাষ করে সফলতার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে মালটা চাষী আফরোজা আক্তারের। প্রায় পাঁচ একর জমির বাগান জুড়ে ইতিমধ্যে মালটা গাছে ফল এসেছে। আর মাত্র দেড় মাস পরেই পরিপক্ক মালটা বাজারজাত করতে পারবেন। এ বছর প্রথম গাছে ফল এসেছে। চার লক্ষাধিক টাকার মালটা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলী ইউনিয়নের কাঠাদুরা গ্রামের সৌদি প্রবাসী লাবলু সিকদারের স্ত্রী আফরোজা আক্তার। বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে পাশর্^বর্তী লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের লুটিয়া গ্রামে তাদের নিজস্ব জমিতে আড়াই বছর আগে শুরু করেন মালটার বাগান।
চাষী আফরোজা আক্তার জানান, তার স্বামী সৌদি প্রবাসী লাবলু সিকদারের অনুপ্রেরণায় মালটা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ইউটিউবসহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাল্টা চাষ সম্পর্কে ধারণা নেন। এক পর্যায়ে ভলো চারা কোথায় পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। চারার ব্যাপারে যোগাযোগ হয় ময়মনসিংহ জেলার একটি নার্সারীতে। সেখান থেকে ১হাজার ৩শ চারা এনে জমিতে শ্রমিক দিয়ে লাগানো হয় ।
নিবিড় পরিচর্যা আর যতেœ চারাগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এক পর্যায়ে এ বছর গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছর এক হাজার গাছে কম-বেশি ফল এসেছে। গাছ ভেদে ২০ থেকে ৫০টি পর্যন্ত ফল ধরেছে।
প্রথম বছর তুলনামুলকভাবে ফল কম ধরলেও সব মিলিয়ে প্রথম বছরে চার লক্ষাধিক টাকার মালটা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
চাষী আফরোজা আরো বলেন, মালটা গাছে মাঝে মধ্যে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। তবে এ ব্যাপারে ইউটিউবের পাশাপাশি লোহাগড়া উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করে তা দমন করা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় মালটা বাগানে সঠিকভাবে পরিচর্যা ও ফলন ভালো হলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হতে পারবো। তবে মালটা বাজারজাত নিয়ে দুর্ভাবনায় আছি। মালটা বাগানে যাতায়াতের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটির অবস্থায় খুব খারাপ। রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। এদিকে মালটা চাষের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় কৃষকদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চাষীরাই মালটা বাগান দেখতে ভিড় করছে এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। আগামীতে মালটা চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় একাধিক চাষী। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পেশার লোকজন মালটা বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন এবং নতুন বাগান তৈরির আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ইতনা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি আফরোজার মালটা বাগন দেখে উৎসাহিত হয়েছি নিজেও মালটার বাগন করব ভাবছি।
করফা গ্রামের মালেক বলেন, আফরোজার মালটা বাগন এ অঞ্চলের বেকার-যুবতীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে যে উচ্ছা থাকলে সবকিছুই করা সম্ভব।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ^াস বলেন, ‘ আমাদের তত্ত্বাবধায়নে চাষী আফরোজা প্রায় ৫ একর জমিতে মালটা চাষ করেছে। আমরা সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আশা করি এ বছর প্রায় ৫লক্ষ টাকার মালটা বিক্রি করা সম্ভব হয়। পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে নড়াইলের চাহিদার পাশাপাশি যশোর ও গোপালগঞ্জ জেলার চাহিদার কিছুটা হলেও পূরণ করতে সক্ষম হবে। এছাড়া আশপাশের এলাকাগুলোতে চাষীরা মালটা চাষে উদ্বুদ্ধ হবে।’
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, কৃষাণী আফরোজা আক্তারের মালটা বাগান তৈরির পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। তিনি কৃষি বিভাগের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে থেকে নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে মালটা চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। আজ এক হাজার গাছে মালটা ধরেছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ২০টি করে ফল আছে। উদ্যোক্তা আফরোজা আক্তারের যে পদক্ষেপ এবং কৃষি বিভাগের যে যোগসূত্র আশা করি আগামীতে মালটা চাষ সম্প্রসারণে দারুন ভূমিকা রাখবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।