নারায়ণগঞ্জের কিশোরী ‘জীবিত’ ফেরার ঘটনা: বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

257

ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী অনুযায়ী ‘গণধর্ষণের পর হত্যা’র শিকার নারায়ণগঞ্জের কিশোরী জীবিত ফেরার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে এই তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী অনুযায়ী গণধর্ষনের পর হত্যার শিকার নারায়ণগঞ্জের কিশোরী জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করেন আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির এবং মো.মিসবাহ উদ্দিন।
এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৭ আগস্ট আদালত আসামীদের জবানবন্দিসহ এ ঘটনায় করা অপহরণ মামলার সকল নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠাতে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক অপারেশন) আব্দুল হাইকে মামলার সিডিসহ ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। আর একই দিন মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা (উপ-পরিদর্শক) শামীম আল মামুনকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন আদালত। সে অনুযায়ী অপহরণ মামলাটির সকল নথি গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে পাঠান নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক অপারেশন) আব্দুল হাই এইদিন হাইকোর্টে মামলার সিডিসহ হাজির হন। আর মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা (উপ-পরিদর্শক) শামীম আল মামুন এদিন হাইকোর্টে ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। এরপর আদালত এ বিষয়ে শুনানি শেষ করে আদেশের জন্য আজ ২৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। তারই ধারাবাহিতায় আজ আদেশ দেন আদালত।
নারায়ণগঞ্জের ওই কিশোরীকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৪ জুলাই শহরের দেওভোগ এলাকার বাড়ি থেকে বের হয়ে ওই কিশোরী নিখোঁজ হয়। তাকে না পেয়ে প্রায় মাস খানেক পর ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন তার বাবা। মামলায় বলা হয়, আসামি আবদুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করতেন। এই মামলার পর পুলিশ ওই কিশোরীর মায়ের মুঠোফোনের কল লিস্ট চেক করে অটোরিকশা চালক রকিবের সন্ধান পায়। যে রকিবের নম্বর দিয়ে আবদুল্লাহ ওই কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এক পর্যায়ে পুলিশ অটোরিকশা চালক রকিব (১৯), আবদুল্লাহ (২২) ও খলিলকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিল্টন হোসেন ও বিচারিক হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তীকালে এই তিনজনকে কারাগারে নেয়া হয়। ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ৪৯ দিন পর ওই কিশোরী তার বাড়িতে টাকা চেয়ে ফোন করলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে। এর পর কিশোরীর স্বামী ইকবালকে আটক করা হয়। পরে ইকবাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, ‘তারা বিয়ে করে বন্দর এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছিলেন।’