শীতের সবজি চাষে জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত মেহেরপুরের কৃষক

450

॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ (বাসস) : শীতকালীন সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে মেহেরপুরের কৃষকরা। ধান পাট চাষে লোকসান হওয়ায় সবজি চাষে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। এজন্য কৃষিনির্ভর মেহেরপুরের কৃষকদের সময় নেই দু‘দ- কারো সাথে কথা বলার। কেউ হাতে কোদাল ও নিড়ানী। কারো হাতে বীজ। আবার অনেকের পিঠের পিছনে কীটনাশক দেওয়ার স্প্রে মেশিন। কেউ জমি প্রস্তুত করছে, দলবেঁধে আলুর বীজ বপন করছে কোন কোন জমিতে। কোন কোন কৃষককে সবজির ক্ষেত পরিচর্যা করতে দেখা গেছে । এভাবেই সবজির ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুর জেলার কৃষকরা। দম ফেলার সময় নেই এখন তাদের। সিংহভাগ কৃষকের ক্ষেতেই দিন কেটে যাচ্ছে। এত কর্মযজ্ঞ কেবল বেঁচে থাকার তাগিদে। সামান্য বাড়তি আয়ের আশায়। ধান-পাট চাষে টানা কয়েক বছর লোকসান গুণে এবার তারা শীতের সবজিতেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। করোনা আতংক নেই জেলার কোন কৃষকের মাঝে।
কৃষকের পরিশ্রম ফলও দিয়েছে। চারিদিকে সবজির সমারোহ। বাঁধাকপি, ফুলকপি, মূলা, করলা, লাল শাক, পালংশাক, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউ, শসা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ডাটা, চিচিঙা, পটল, কাঁচা মরিচ গাছে ছেয়ে আছে মাঠের পর মাঠ। শীতকালীন এসব ফসলের অধিকাংশই কৃষক নিয়মিত বাজারজাত করছেন। দামও পাচ্ছেন বেশ ভাল।
মেহেরপুরের বিভিন্ন জনপদ ঘুরে সবজিচাষী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য জানা গেল।
জেলা সদরের সবচেয়ে বড় সবজি চাষী ডাবলু হোসেন একাই প্রতিবছর শতাধিক বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করেন। এবারও তিনি শীতের আগাম সবজি চাষ করছেন ৬০ বিঘা জমিতে। এসব সবজির মধ্যে আছে ফুলকপি, পাতা কপি, ওলকপি, মরিচসহ অন্যন্য সবজি। বর্তমানে ৩৫ বিঘা জমিতে আলু চাষের জন্য জমি তৈরী করছেন। ডাবলু, রতন, টিটো, আতিকুর, মতিন, মনিরুল, বাশারসহ অনেক কৃষককের সাথে কথা হয়। এসব প্রন্তিক চাষীরা জানান, ধান-পাট চাষে টানা কয়েক বছরের লোকসান দেওয়ার পর এবার তারা ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। সবজি চাষে জমি ও পুঁজি, দুইই কম লাগে। এবার আগাম সবজির ফলনও ভালো হয়েছে। সবার মনেই নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। এবার আগাম সবজি চাষের মতো শীতের সবজি চাষেও লাভবান হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় মোট ১৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শীতকালীন সবিজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে। এ জেলার মাটি সবজিচাষের জন্য বড় উপযোগী। এজন্য জেলার মানুষ ধান পাটের চেয়ে বিভিন্ন জাতের সবজি ফলিয়ে থাকেন।
মুজিবনগর উপজেলার মহাজমপুর গ্রামের সবজি চাষী মনিরুল ইসলাম জানান- হত কয়েক বছর ধান পাটে লোকসান হওয়ায় তিনি এবার সবজি চাষ করছে। এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আলু লাগাবেন বলে জমি প্রস্তুত করছেন।
গাংনী উপজেলার সবজি গ্রাম খ্যাত সাহারবাটি গ্রামের সবজি চাষী আনিসুর রহমান জানান- তিনি এবার দুই বিঘা শিম, একবিঘা টমেটো, একবিঘা পটলের চাষ করেছেন এবং তিন বিঘা আলু চাষ করবেন বলে জমি প্রস্তুত করছেন। প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে এসব সবজি চাষে খরচ বাদে দুই লাখ টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জেলা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, মেরেহপুরের মাটিতে যে কোন ফসল ভালো ফলে। সবজি চাষ খ্যাত মেহেরপুর জেলায় গত কয়েক বছর সবজি চাষ কমে গিয়েছিল। দাম ভালো হওয়ায় আবার ও কৃষকরা এখন সবজি চাষকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। জেলার কৃষকরা সবজি চাষ করেই স্বাবলম্বী হচ্ছে। তিনি স্বীকার করেন জেলার চাষীরা সবজি চাষ সম্পর্কে অভিজ্ঞ।