বাসস ফিচার-১ : মেহেরপুরে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে ২ হাজার হত দরিদ্র পরিবার উপকৃত

232

বাসস ফিচার-১
মেহেরপুর-এবাএখা
মেহেরপুরে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে ২ হাজার হত দরিদ্র পরিবার উপকৃত
॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ১ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : জেলা ২ হাজার ৩০টি হতদরিদ্র পরিবারের বর্তমানে কোনটি স্বাবলম্বী, কোনটি আবার স্বাবলম্বী হওয়ার পথে রয়েছে। তবে উপকৃত হয়েছে সবাই। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর জীবন জীবিকার এই পরিবর্তন এসেছে একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে।
প্রকল্পটি এর মূল লক্ষ্য অনুযায়ী এটি দরিদ্র মানুষদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রকল্পের ২ হাজার ৩০ জন সদস্যের প্রায় ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকার সঞ্চয় জমা হয়েছে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩৮টি সমিতির মধ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। তাদের নিজস্ব সঞ্চয় তহবিলের বিপরিতে সমপরিমান বোনাস রয়েছে। সব মিলিয়ে সঞ্চয় জমা হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এই তহবিলের কোনও অর্থই সরকার কখনও ফেরত নেবে না।
সরেজমিনে বিভিন্ন প্রকল্প ঘুওে দেখা গেছে প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প অফিস থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ঋণ নিয়ে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, কবুতর পালন করেছেন। পরে তা বিক্রি করে লাভের টাকা রেখে ঋণও পরিশোধ করে দিয়েছেন। কেউ কেউ মুদি দোকানও দিয়েছেন।
গরু পালন প্রকল্পে রমেচা খাতুন
সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের পুরাতন মদনাডাঙ্গা গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি¦ অতিদরিদ্র দোয়াত আলীর স্ত্রী রমেচা খাতুন। ২০১৩ সালে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে গরিবের গাভি হিসেবে ছাগল পালন শুরু করে। পরের বছর ঋণের টাকা পরিশোধ করে ১৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে নিজস্ব টাকা মিলিয়ে গরু মোটা তাজা প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৫ সালে সেই গরু ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে কুড়ি হাজার টাকা লাভ করে। পরবর্তীতে ২৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজস্ব ২৫ হাজার টাকা যোগ করে দুটি গরু কেনে। বর্তমানে সেই গরুর দাম দেড় লক্ষ টাকা। রমেচা জানায়-‘এখানে থেকে ঋণ নিলে বেশি সুদ দিতে হয় না। সপ্তাহ, মাসে বা বছরে এককালীন ঋণ পরিশোধের সুবিধা থাকায় আমরা উপকার পেয়েছি।’ গ্রামের মানুষ এখন তাকে সমিহ করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন- ‘একটি বাড়ি একটি খামার থেকে তিনি যে উপকার পেয়েছেন তা বলার মত নয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে বিভিন্ন কাগজপত্র, সুদ, ঘুষ দিতে হয়। আর এই প্রকল্প থেকে তিনি সহজ শর্তে তিন দফায় ঋণ নিয়ে ছাগল থেকে গরু কিনেছেন। বর্তমানে গরু দুটির দাম দেড় লাখ টাকা। প্রকল্পটি আরও ৫ বছর আগে যদি সরকার করতো তাহলে আমরা আরও বেশি উপকৃত হতাম।’
পুরাতন মদনাডাঙ্গা গ্রামের অতি দরিদ্র কলিমদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন প্রকল্পের ৫২ নম্বর সদস্য। সে ২০১২ সালে সদস্য হয়ে ২০১৩ সালে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেয় প্রকল্প থেকে। সেই টাকায় গ্রামে ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসা শুরু করেন। সেই মুদি ব্যবসা থেকে তিন ছেলে মেয়ের লেখা পড়া করাচ্ছেন। মেটাচ্ছেন সংসারের অন্যান্য ব্যয়ভার। এখন সে স্বাবলম্বী।
প্রকল্পের সদর উপজেলা সমন্বয়কারী (ইউসিও) মো. মুসারদ্দিন জানান, বিনিয়োগের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। এতে বেশ সাফল্য এসেছে। তিনি আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এছাড়া দরিদ্রদের সমিতি প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে তাদের দারিদ্রমুক্ত করা হবে। এছাড়া প্রকল্পটির স্থায়ী রূপদানে সরকার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নামে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। যে ব্যাংকের মাধ্যমে জেলার সব দরিদ্র জনগণকেই দরিদ্রতা মুক্তিতে কাজ করবে। প্রকল্পের শুরু থেকে ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত সদর উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ৪০টি সমিতি গঠন করা হয়। যার সদস্য সংখ্যা ২ হাজার ২৬৩টি। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে সদস্যদের নিজস্ব টাকা ১ কোটি ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা সঞ্চয় আছে। প্রকল্প থেকে সদস্যদের বোনাস দেয়া হয়েছে ৯৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
বাসস/সংবাদদাতা/জেজেড/১৭১০/আরজি