জয় দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ শুরু করলো ম্যানচেস্টার সিটি

555

লন্ডন, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : উল্ফসের বিপক্ষে সোমবার ৩-১ গোলের জয় দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম শুরু করেছে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচের পর গার্দিওলা ইংলিশ মিডফিল্ডার ফিল ফোডেনকে ‘দুর্দান্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছন।
গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফাইনাল এইটে খেলার কারনে সিটির লিগ শুরু করতে কিছুটা দেরী হয়েছে। কাল থেকে তাদের মিশন শুরু হলেও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল ইতোমধ্যেই দুটি ম্যাচ খেলে শত ভাগ জয় তুলে নিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে গার্দিওলার দলকে প্রথম থেকেই সমান তালে লড়ে যেতে হবে। কাল হয়ত সেই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নেমেছিল গার্দিওলা শিষ্যরা। বিরতির আগেই কেভিন ডি ব্রুইনার পেনাল্টি ও ফোডেনের ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সফরকারী সিটি।
বিরতির পর ম্যাচের প্রায় পুরো নিয়ন্ত্রনই চলে যায় উল্ফসের কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৭৮ মিনিটে রাওল জিমিনেজ এক গোল পরিশোধ করেন। কিন্তু স্টপেজ টাইমে গাব্রিয়েল জেসুসের গোলে শেষ পর্যন্ত তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ে সিটিজেনরা।
জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকাকালীন গতমাসে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনায় ইংল্যান্ড দল থেকে ফোডেন ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যাসন গ্রীনউডকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেই ঘটনার পর এই প্রথম ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিলেন মিডফিল্ডার ফোডেন। করোনাভাইরাস প্রোটোকল ভঙ্গের দায়ে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের নেশন্স লিগের ম্যাচের পর ২০ বছর বয়সী ফোডেনের কারনে সিটিকে দারুন সমালোচিত হতে হয়েছে। কিন্তু তারপরেও গার্দিওলা মধ্য মাঠে এই তরুন মিডফিল্ডারের উপরই আস্থা রেখেছিলেন। ম্যাচ শেষে সিটি বস বলেছেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে ফোডেন দুর্দান্ত খেলেছে। তার কারনেই আমরা বল নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পেরেছি।’
এই জয়ে সিটি প্রিমিয়ার লিগে টানা ১০টি ম্যাচে জয় দিয়ে মৌসুম শুরু করার এ্যাস্টন ভিলার অতীত রেকর্ড স্পর্শ করেছে। স্বাভাবিকের তুলনায় প্রাক-মৌসুমে সময় কম পাবার পরেও প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নেয়ায় গার্দিওলা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব বেশী দৌঁড়াতে পারিনি। কারন স্বাভাবিক ভাবেই খেলোয়াড়রা বেশ পরিশ্রান্ত ছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে পারফরমেন্স ভাল ছিল। গত দুই সপ্তাহ যেভাবে কেটেছে তাতে আমার কিছু কিছু পজিশন নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ পজিশনে সফল ছিল। পুরো দলের পারফমেন্সে আমি খুশী। এই স্টেডিয়ামে খেলাটা যে কতটা কঠিন তা আমরা সবাই জানি। অনেক সময় নিজেদের সেরা কন্ডিশনে আসতে বেশ সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে এসে জয় নিয়ে বাড়ি ফেরাটা সত্যিই স্বস্তির।’
২০১৮ ও ২০১৯ মৌসুমে জয় করা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা পুনরায় ঘরে ফিরিয়ে আনাই এবার সিটি ও একই সাথে গার্দিওলার মূল লক্ষ্য। এই মৌসুমের সাথে সাথে গার্দিওলার সাথেও সিটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। যে কারনে এই বছরটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই বিবেচনা করছেন সিটি বস। গত মৌসুমে লিভারপুলের থেকে ১৮ পয়েন্ট পিছিয়ে শিরোপা হাতছাড়া করার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে লিঁওর কাছে পরাজিত হয় বিদায় নিতে হয়।
আগের মৌসুমে পিএফএ বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের তকমা পাওয়া ডি ব্রুইনা ২০ মিনিটে উল্ফস রক্ষনভাগকে ব্যস্ত করে তুলেন। বেলজিয়ান এই মিডফিল্ডার অনেকটাই একক প্রচেষ্টায় ডি বক্সের ভিতর ঢুকে পড়লে উল্ফসের মরোক্কান মিডফিল্ডার রোমেইন সেইস তাকে থামাতে গিয়ে ফাউল করে বসেন। রেফারি আন্দ্রে মেরিনার সিটিকে পেনাল্টি উপহার দিতে একটুও দেরী করেননি। স্পট কিক থেকে ডি ব্রুইনা গোল করে সিটিকে এগিয়ে দেন। আগের মৌসুমে দুইবারই উল্ফসের কাছে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে সিটিকে। কিন্তু কাল ছিল সিটির দিন। ৩২ মিনিটে আবারো তারা আঘাত হানে উল্ফসের জালে। ডি ব্রুইনার নিখুঁত একটি পাস থেকে রাহিম স্টার্লিংয়ের কাটব্যাকে ফোডেন ১২ গজ দুর থেকে ব্যবধান দ্বিগুন করেন। জেসুসের পাস থেকে ডি ব্রুইনা নিজের দ্বিতীয় গোলের দারুন একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু উল্ফস গোলরকক্ষক রুই প্যাট্রিসিও দারুন দক্ষতায় তা রুখে দেন।
প্রথমার্ধে একেবারেই অগোছালো উল্ফস বিরতির পর কিছুটা হলেও নিজেদের গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করে। ড্যানিয়েল পোডেন্সের একটি জোড়ালো শট অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। সিটি গোলরক্ষক এডারসনের মাথার উপর দিয়ে এরপর তার আরো একটি প্রচেষ্টা ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। পোডেন্সের ক্রস থেকে জিমিনেজ অবশ্য ৭৮ মিনিটে আর কোন ভুল করেননি। স্টপেজ টাইমে জেসুস শেষ পর্যন্ত সিটির জয় নিশ্চিত করেন।