বাজিস-২ : সুন্দরবনে বৃদ্ধি পেয়েছে মধু আহরণ ও মোম উৎপাদন

112

বাজিস-২
বাগেরহাট-মধু আহরণ
সুন্দরবনে বৃদ্ধি পেয়েছে মধু আহরণ ও মোম উৎপাদন
॥ মোঃ শাহ্ আলম টুকু ॥
বাগেরহাট, ২২ সেপ্টেমবর, ২০২০ (বাসস) : স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম।মধুতে জিংক ও ভিটামিন-সিসহ অনেক রোগ প্রতিরোধের উপাদান থাকায় করোনার পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের মধুর কদর বেড়েছে। করোনার পরিস্থিতিতে সুন্দরবনে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বনের অভ্যন্তরে বৃক্ষরাজিতে মৌমাছির আবাসস্থলও বৃদ্ধি পাওয়ায় এবছর মধু ও মোমের উৎপাদন বেড়েছে।সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ থেকে এ বছরে ১ হাজার ২‘শ ২০ কুইন্টাল মধু আহরণ করেছেন মৌয়ালরা । এসময় মোম উৎপাদন হয়েছে ৩‘শ৬৬ কুইন্টাল।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সুন্দরবন থেকে ১ হাজার ২‘শ ২০ কুইন্টাল মধু আহরণ করেছেন মৌয়ালরা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মধুর আহরণ হয়েছিল ৭‘শ ৪২ কুইন্টাল। অর্থ্যাৎ২০১৯-২০ অর্থ বছরে গেল বছরের থেকে ৪‘শ ৭৮ কুইন্টাল মধু বেশি আহরিত হয়েছে । এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মৌয়ালরা ৪‘শ ৮৮ কুইন্টাল মধু আহরণ করে ।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্বের পরিমানও বেড়েছে অনেক। এ অর্থ বছরে মধু থেকে রাজস্ব এসেছে ৯ লক্ষ ১৫ হাজার ৩‘শ ৭৫ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজস্ব ছিল ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮‘শ ৭৫ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ছিল ৩ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪‘শ ৮০ টাকা মাত্র।
এদিকে মধুর উৎপাদনের সাথে মোমেরও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এ বছর। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ৩‘শ৬৬ কুইন্টাল মোম উৎপাদন হয়েছে। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ১‘শ ৫০ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোমের উৎপাদন ছিল ২‘শ২৯ কুইন্টাল এবং রাজস্ব ছিল ২‘লক্ষ ২৯ হাজার ৬‘শ টাকা। ২০১৭-১৮ বছরে মোমের উৎপাদন ছিল মাত্র ১‘শ ৫৮ কুইন্টাল এবং রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪‘শ ৫৩ টাকা
সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান,মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে পাকস্থলীতে রাখে। তারপর সেখানে মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়। এরপর মুখ হতে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে জমা করা হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম। মধুর প্রধান উপকরণ সুগার। সুগার বা চিনি আমরা অনেকই এড়িয়ে চলি। কিন্তু মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ এ দুটি সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় এবং ফ্যাট হিসাবে জমা হয় না। এতে অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড, টিন, জিংক ও জৈব এসিড (যেমন-ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক এসিড এবং অক্সালিক এসিড), কতিপয় ভিটামিন, প্রোটিন, হরমোনস, এসিটাইল কোলিন, অ্যান্টিবায়োটিকস, ফাইটোনসাইডস, সাইস্টোস্ট্যাটিক্স এবং পানি (১৯-২১%) ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক এসিড, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-এ বা ক্যারোটিন ইত্যাদি বিদ্যমান। মধু এমন ধরনের ওষুধ, যার পচন নিবারক (অ্যান্টিসেপটিক), কোলেস্টেরলবিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়াবিরোধী ধর্ম আছে। নিয়মিত ও পরিমিত মধু সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়। একারণে করোনার পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের মধুর কদর বেড়েছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, গত ২৬ মার্চ গোটা সুন্দরবনে সব ধরনের পর্যটকসহ জেলে-বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সর্বোচ্চ সর্তকতা ‘রেড এ্যালার্ড’ জারি করে বন অধিদপ্তর। এ সময় সুন্দরবনে পর্যাটকসহ জেলে-বনজীবীরা না থাকায় প্র্রাণ ফিরে পেয়েছে সুন্দরবন ।এসময় সুন্দরবনে মৌমাছির আবাস স্থলও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সুন্দরবনে মধু আহরণ ও মোমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আশাকরি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
বাসস/সংবাদদাতা/১১৩০/নূসী