মেহেরপুরে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন

999

॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ (বাসস) : গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাশবন। ষড় ঋতুর এ দেশে ভাদ্র-আশ্বিনজুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরৎকাল এলেই দেখা যেত গ্রামবাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে কাশফুল। এখন সেগুলো আ তেমন চোখে পড়ছে না। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো একটার সঙ্গে আরেকটা। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেতো। মহা কবি কালিদাস শরৎ বন্দনায় বলেছিলেন ‘প্রিয়তম আমার, ওই চেয়ে দেখ, নব বধুর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’ তিনি ‘ঋতু সংহার’ কাব্যে আরও লিখেছেন ‘কাশফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালি ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নববধূর মতো শরৎকাল আসে।’ শরৎ এলেই আমরা হারিয়ে যেতে চাই কাশবনে। আর সে জন্য ছুটে যেতে পারি মেহেরপুর পুলিশ লাইনের পাশে খড়ের মাঠে। ষড় ঋতুর এ দেশে নগর কেন্দ্রিক সভ্যতায় শীত, গ্রীষ্ম এবং বর্ষা ছাড়া কখন কোন ঋতু এলো বা গেল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তার কোনো ছায়া পড়েনা। তবে কাশফুলের অতি ক্ষুদ্র পাপড়ি যখন জানালা দিয়ে উড়ে আসে কোনো এক ব্যস্ত সময়ে তখন ঠিক বোঝা যায় শরৎ এসেছে ।
কবি জীবনন্দ দাশ শরৎকে দেখেছেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে যাই না আর’। শরতের এ অপরূপ রুপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীকে আর দেখার প্রয়োজন নেই সিদ্ধান্ত নেন। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। শরৎবলতেই আমরা যেন কাশফুল বুঝি। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। মাঠ জুড়ে কাশফুলের কোমর দোলানো নৃত্য। এইতো শরতের বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে নদীর দু’ধারে, জমির আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। এখন গ্রামবাংলায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত। সাধারণ মানুষের বিনোদন-প্রকৃতিতে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
মেহেরপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্র ‘খড়ের মাঠ’ নামে পরিচিত পুলিশ লাইনের পাশে বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে ফুটে আছে কাশফুল। কাশবনের পাশ দিয়ে তৈরী কাটা খাল প্রকৃতিতে আরও সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুলেদের মেলা আর সাদা মেঘ নীল আকাশের নিসর্গ দেখতে সকাল বিকেল কত শত মানুষ ভিড় করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিত হচ্ছে শরৎ উৎসব। আমাদের এ নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা সময় নিজেকে বা প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কাশফুলের মেলায়।
লেখক ও প্রবীন সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম বলেন, কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজনও নেই। কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাটা, ডালি, ঝুড়ি তৈরি করতো। গ্রাম বাংলার মানুষ ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করতো। সেগুলো আর চোখে পড়েনা।