জয়পুরহাটে কচুর লতি চাষ : ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকদের

706

॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস): জেলার ব্র্যান্ডিং হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত লতিরাজ কচু এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশে। লতিরাজ কচু চাষ লাভ জনক হওয়ায় এখানকার কৃষকরা ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছেন। এ জন্য কচুর লতিকে এখান কার মানুষ রাজ লতি হিসেবে অভিহিত করে থাকে। পাঁচবিবি সদরের বটতলীতে শুক্রবার, মঙ্গলবার হাটবার ছাড়াও প্রতিদিনই বসে রাজলতি কচুর হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর জন্য ছোট বড় মিলে ১৫/২০ জন পাইকারী ক্রেতা প্রতিদিন সকালে লতি কিনতে এখানে জড়ো হয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এগুলো সরবরাহ করা হয়ে থাকে। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম লতিরাজ কচুর এ বাজারে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মণ লতির কেনা-বেচা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বস্তায় করে বাসের ছাদে এবং বড় ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে ঢাকাতে পাঠায়। কিছু ব্যবসায়ী ট্রেন যোগে খুলনা ও দৌলতপুর নিয়ে যায়। কচুর লতির এখন ভরা মৌসুম। প্রতিমণ কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৯শ টাকা পর্যন্ত। যদিও খুচরা বাজারে দাম অনেক বেশি। জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় পাঁচবিবি উপজেলায় অধিক হারে লতিরাজ কচু চাষ হয়ে থাকে। পাঁচবিবি উপজেলার আগাইর গ্রামের কৃষক মোসলেম উদ্দিন, জাহিদুল ইসলাম, রতনপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম, কেশবপুর গ্রামের কৃষক আবেদ আলী জানান লতি চাষ এখন বেশ লাভজনক। জয়পুরাটে উৎপাদিত এ লতি কয়েক বছর ধরে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২৫টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ওইসব দেশের বাঙালী অধ্যুষিত শহরগুলোতে লতিরাজ কচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জয়পুরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে লতিরাজ কচুর চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে লতিরাজ কচু চাষ করে খরচ বাদে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হয় বলে জানালেন কেশবপুর গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন। তিনি এবার ৪ বিঘা জমিতে লতি চাষ করেছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় লতিরাজ কচুর চাষ সম্প্রসারণের জন্য দেশের ১২০ টি উপজেলায় চারা সরবরাহ করেছেন তিনি। লতি বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে লতিরাজ কচু চাষে খরচ লাগে ১৮/২০ হাজার টাকার মতো , বিক্রি হয় এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্ষা মওসুমে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ধান, বেগুন, করলা, ডাটা ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও লতিরাজ কচুর কোন ক্ষতি হয়না। এতে কচুর গাছ সতেজ থাকে। যত বৃষ্টি তত লতি বাড়তে থাকে কচুর কান্ড থেকে। এ ছাড়া গরু-ছাগল এর কোন ক্ষতি করতে পারে না। উত্তরাঞ্চলের জেলা গুলোর মধ্যে শুধু মাত্র জয়পুরহাট জেলাতেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লতিরাজ কচুর চাষ হয়। কৃষি বিভাগ জানায়, জয়পুরহাট জেলায় এবার ১ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে লতিরাজ কচুর চাষ হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৩শ ৭৫ হেক্টর। আবার লতিরাজ কচুর লতি বিক্রি শেষ হলে গোড়া কেটে গাভীকে খাওয়ালে দুধ বেড়ে যায়। জয়পুরহাটে চাষ হওয়া এ লতিরাজ কচু উন্নতমানের হওয়ায় এর চাহিদা দেশ ব্যাপী। যা দেশের অন্য কোন অঞ্চলে পাওয়া যায়না। যদিও বর্তমানে চারা বিতরণের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় উন্নত জাতের এ লতিরাজ চাষের চেষ্টা চলছে। সে করণে এ লতিরাজ কচুর চাষ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে বিদেশেও। লতিরাজ কচুর পাইকারী ক্রেতা আমিনুর ইসলাম, খোকা মন্ডল, ফারুক আলম জানান, জয়পুরহাটের লতি উন্নত মানের হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয় এ লতি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শ ম মেফতাহুল বারি বলেন, লতিরাজ কচুর চাষ অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক লাভজনক হওয়ায় জেলা ব্র্যান্ডিং হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। জেলায় উৎপাদিত উন্নত জাতের এ লতিরাজ কচু বর্তমানে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করে অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশ।