বাজিস-২ : বাগেরহাটে চিংড়ি ঘেরে খাবার হিসেবে শামুক ব্যবহার হচ্ছে

168

বাজিস-২
বাগেরহাট-চিংড়ি ঘের
বাগেরহাটে চিংড়ি ঘেরে খাবার হিসেবে শামুক ব্যবহার হচ্ছে
॥ মোঃ শাহ্ আলম টুকু ॥
বাগেরহাট, ১৭ সেপ্টম্বর, ২০২০ ( বাসস) : জেলায় চিংড়ি ঘেরে চিংড়ির খাবার হিসেবে পরিবেশ বান্ধব শামুক ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে শামুক।ফলে পরিবেশ বিপযয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে।
শামুক পানি শোধনের কাজ করা এক জলজ প্রাণী।শামুক কৃষি জমির ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণসহ অনু খাদ্য হিসেবে কাজ করে।এছাড়া কৃষি জমির ফসল বিনষ্টকারী পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফসল রক্ষা করে।শামুক অন্যান্য জলজ প্রাণীর সাথে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। চিংড়ি ঘেরে সস্তায় এ শামুকের খাবার দিয়ে গুটি কয়েক চিংড়ি খামারি লাভবান হলেও বৃহত্তরভাবে কৃষি-জমির উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে এবং শামুক নিধন হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য থাকছে না। অপরিকল্পিত চিংড়ি খামারিদের কারণে আজ এ শামুক বিলুপ্তি পথে। এলাকার চিংড়ি চাষিরা চিংড়ির জন্য বাজারের মূল্যবান খাবার ক্রয় না করে হতদরিদ্র নারীদের দিয়ে কম-খরচে বিলের শামুক কুড়িয়ে ভেঙ্গে চিংড়ির খাবার দিচ্ছে। দরিদ্র নারীরা প্রতিদিন শত শত বস্তা শামুক কুড়িয়ে ভেঙ্গে চিংড়ি খামারিদের দিচ্ছে।অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খালি হাতে শামুকভেঙ্গে এসব হতদরিদ্র নারীরা রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
বাগেরহাট জেলার চিতলমারী ও ফকিরহাট উপজেলার গ্রামীণ জনপদের হতদরিদ্র নারীরা আয়-রোজগারের জন্য কোন কাজ না পেয়ে বিকল্প অবলম্বন হিসেবে বিলের শামুক ভেঙে সংসার চালায়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিতলমারী উপজেলার দুর্গাপুর, খড়মখালি, কৃষ্ণনগর সাবোখালিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে নারী শ্রমিকরা এক সাথে শামুকের খোলস তুলছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কাজ করছে নারীরা।
চিতলমারী উপজেলার গরীবপুর গ্রামের ভ্যান চালক বিধান রায়ের স্ত্রী বিথিকা রানী রায় শামুক ভেঙ্গে আয় করার বিষয়ে এ প্রতিবেদক কে বলেন,স্বামী ভ্যান চালিয়ে যে আয় করেন তা থেকে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচসহ সংসার চালাতে কষ্ট হয়।তাই এখানে দলের সাথে শামুক ভেঙ্গে রোজ মহাজনের কাছ থেকে ১০০-১২০ টাকা পাই। তা থেকে সংসারের চাহিদা কিছুটা হলেও লাঘব হয়। এ দলের নারী শ্রমিক উন্নতি রানী হীরা বলেন, আমরা ৫-৬ জনে দিনে ১২-১৪ বস্তা শামুকের খোলস খুলি। বস্তা প্রতি মহাজন (চিংড়ি খামারি) ৩৫ টাকা করে দেয়। যা এক সঙ্গে করে আমরা ভাগ করে নেই। আমার স্বামী ভ্যান চালক, তার একার আয়ে ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ পরিবারে চাহিদা মেটাতে পারে না। করোনার দুর্যোগ ভ্যানে যাত্রী কম হয়। ফলে ভাড়াও কম পায় করোনার শুরুতে মাত্র ১০ কেজি চাল পেয়ে ছিলাম ত্রাণ হিসেবে। তাই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শামুক ভেঙ্গে কিছু অর্থ আয় করি। অনুরুপ কথা বলেন খড়মখালি গ্রামের কৃষক অমৃত পোদ্দারের স্ত্রী সুলতা রানী পোদ্দার, কৃষ্ণনগর গ্রামের দিনমজুর উজ্জল গাইনের স্ত্রী মিনতি রানী গাইনসহ অন্য নারী শ্রমিকরা। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে শামুক ভাঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, পেটের দায়ে কাজ করি। শামুক ভাঙ্গতে গিয়ে দুই হাত ক্ষত হয়ে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়ি।
চিংড়ি খামারি মালিক ওই এলাকার সুজিত সিংহ, অসীম বিশ^াস ও সুমন রানা এ প্রতিবেদক কে বলেন, এখন এলাকায় আর তেমন একটা শামুক পাওয়া যায় না। তাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুর ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০-৬০ কেজি করে প্রতি বস্তা শামুক ৭-৮শ টাকা দরে ক্রয় করতে হয়। আর এ শামুক এলাকায় নিয়ে এসে স্থানীয় নারী শ্রমিকরা প্রতি বস্তা ৩৫ টাকা দরে খোলস খুলে দেয়।
বাগেরহাটের কৃষি অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সিকদার সরোয়ার আলম বলেন, শামুক কৃষি জমির ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণসহ অনু খাদ্য হিসেবে কাজ করে। কৃষি জমির ফসল বিনষ্টকারী পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফসল রক্ষা করে।এছাড়া শামুক পানি শোধনের কাজকরা সহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর সাথে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। অপরিকল্পিত চিংড়ি খামারিদের কারণে আজ এ শামুক বিলুপ্তি পথে।
বাসস/সংবাদদাতা/১১০০/নূসী