ক্ষতিপূরণের টাকা জমা দিলেন যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত এসআই জাহিদের পরিবার

165

ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি পল্লবী থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদের পক্ষে ক্ষতিপূরণের ২ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন তার পরিবার। এ ক্ষতিপূরণের টাকা মামলার বাদি পাবেন বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
বুধবার এসআই জাহিদের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর ঘাট শাখায় এ টাকা জমা দেন।
আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, আদালতের নির্দেশে ক্ষতিপূরণের ২ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। এখন যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
এরআগে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ থানায় নিয়ে জনি নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় পল্লবী থানার সাবেক এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদসহ ৩ পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন।
এছাড়া মামলার অপর দুই আসামির ৭ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের এটি প্রথম রায়।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- পল্লবী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ও এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু। যাবজ্জীবন কারাদন্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। এছাড়া তিন পুলিশ সদস্যের প্রত্যেককে ১৪ দিনের মধ্যে বাদিকে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৭ বছর কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, সোর্স সুমন ও রাশেদ। কারাদন্ডের পাশাপাশি তাদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত।
মামলার আসামিদের মধ্যে এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে। একই থানার এএসআই রাশেদুল ইসলাম জামিনে এবং এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু ও পুলিশের সোর্স রাসেল জামিনে নিয়ে পলাতক। রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া জামিনে থাকা এএসআই রাশেদুল আদালতে হাজির হন। আদালত তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া পলাতক দু’জনের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় সাদেকের ছেলের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ শুরু করেন। এ সময় জনি ও তার ভাই সুমনকে চলে যেতে বলেন। সুমন চলে গেলেও পরদিন এসে আবার আগের মতো আচরণ করতে থাকেন। তখন জনি ও তার ভাই তাকে চলে যেতে বললে সুমন পু্লশিকে ফোন করে তাদের ধরে নিয়ে যান। তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার লোকজন ধাওয়া দিলে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
পরে থানায় নিয়ে জনিকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে জনির অবস্থা খারাপ হলে ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পল্লবী থানার সাবেক এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এসআই আবদুল বাতেন, এসআই রাশেদ, এসআই শোভন কুমার সাহা, কনস্টেবল নজরুল, সোর্স সুমন ও রাসেল।
২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তকালে পুলিশের এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু, সোর্স সুমন ও রাশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। এ মামলায় ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।