রাষ্ট্র পরিচালনায় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দিক-নিদের্শনা তৈরির ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

1200

ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাষ্ট্র পরিচালনায় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দিক-নিদের্শনা তৈরির প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি গণভবনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। যেহেতু আমরা ক্ষমতায় আছি, তাই, পরবর্তী প্রজন্ম শুধু বর্তমানেই নয়, বরং ভবিষ্যতেও কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তার উপায় বের করার দায়িত্বও আমাদেরকেই নিতে হবে। আর সে লক্ষে আমাদেরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন যা করছে সময়ের প্রয়োজনে তা সংশোধন বা পরিবর্তন হতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানি, পরিবর্তন আসবেই। তা সত্ত্বেও যদি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি দিক-নিদের্শনা প্রস্তুত করে রাখা হয়, তবে যে কেউই ক্ষমতায় আসুক, তাদের জন্য কাজ করা সহজ হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৪ বছর উল্লেখ করে সবাইকে মনে করিয়ে দেন যে, ‘আমি আর কতদিন দেশ চালাব?’ তিনি আরো বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দেশ পরিচালনা সম্পর্কিত দিক-নিদের্শনা প্রস্তুত করতে হবে, যেন তারা পথ হারিয়ে না ফেলে।

ক্রমহ্রাসের আশঙ্কার মধ্যে সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতি মোটামুটি ভালো অবস্থায় রয়েছে।”
তিনি বলেন, “কেউ ভাবেনি যে, আমাদের রেমিট্যান্স বাড়বে। যখন আমরা ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছি (রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য) তখন রেমিট্যান্স বেড়েছে এবং আমাদের রিজার্ভ এখন ৩৯.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।”
সরকার ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি বিশাল বাজেট ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতো বিশাল আকারের বাজেট ঘোষণা করা কোন ছোট বিষয় নয়। আমরা জানি না করোনাভাইরাসের মুখে আমরা কতটুকু বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবো, তবে আমার ইচ্ছা ছিল এই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেয়া, যদি সবকিছু ঠিকঠাক মতো এগিয়ে যায় তাহলে আমরা এটি সম্পূর্ণরূপে অর্জনে সক্ষম হবো। যদি না এগোয় তাহলে সেটাও আমরা দেখবো, তবে আমরা কিছুতেই পিছপা হবো না। আমরা আমাদের অর্থনীতি চলমান রাখতেই বাজেট দিয়েছি।”
তিনি বলেন, বাজেটে ৬ শতাংশ ঘাটতি স্থির করা হয়েছিল, যদিও প্রয়োজনে এটি ১০ শতাংশ করার বিষয় ভাবা হয়েছিল, তবে এটির প্রয়োজন হয়নি।

মহামারির মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের চাকরি হারানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক বাংলাদেশী চাকরি হারানোয় এটা আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছে, তবে তারা আমাদের দেশের নাগরিক হওয়ায় আমরা তাদের বিশেষ বিমানে দেশে ফিরিয়ে এনেছি।”
দেশে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পূর্বাভাসে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কথা বলা হয়েছিল, এখনো কিছু নদ-নদীর পানির প্রবাহ উপচে পড়ছে, নদী ভাঙন (বন্যার কারণে) আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছি, আমরা কঠোরভাবে চেষ্টা করছি।” এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড্রেজিংয়ের পরে প্রধান নদীগুলোর নাব্যতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নদী ভাঙন কমানোর লক্ষ্যেই মূলত ডেল্টা প্লান ২১০০ তৈরি করা হয়।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরু থেকেই উদ্ভুত সংকট মোকাবেলায় সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে এবং জনগণের বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক এবং অন্যান্যদের ভোগান্তি লাঘবে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ, নগদ সহায়তা এবং অন্যান্য সহযোগিতার কথা ঘোষণা করে।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে ক্ষমতায়, তারা সাধারণ মানুষের কল্যাণের চিন্তা করছে এবং সেভাবে তাদের সহায়তা করছে। এটা করার আর কেউ নেই। তারা বরং এটি থেকে কিভাবে সুবিধা নেয়া যায় সেটিই ভাবতো। তবে আমরা জনগণের কল্যাণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
জনগণের পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের নীতি এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এটি শিখিয়েছেন।” কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ত্রাণ পৌঁছে দিতে, দাফনের ব্যবস্থা করতে, কৃষকদের ধান কেটে দিতে এবং অসহায় মানুষের কাছে অন্যান্য সহায়তা পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে। অন্য দলগুলো (বিশেষত বিএনপি) তাদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে মুখে চাপাবাজি করছে।
তিনি এই সংকটকালে জনগণের সহায়তায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টার জন্য আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগের মতো সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এবং সরকারি কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক নীতি রয়েছে। “আমরা এটি মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দলের নীতিমালা অনুসারে প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।” এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১০-২০২০ পরিকল্পনা এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ২০২১-২০৪১ পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্লান ২১০০ প্রণয়ন এবং বিশাল বাজেট ঘোষণা করা হয়।
করোনাভাইরাসজনিত কারণে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমরা দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি ছাড়াও সরকার বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করেছে।
তিনি বলেন, “আমরা এ সব মোকাবেলায় কার্যকর ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে দেশের শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, দেশের রফতানি থেমে গিয়েছিল। এ অবস্থায় সরকার পর্যায়ক্রমে শিল্পকারখানা খুলে দিয়েছে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পগুলোকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কৃষির জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্ব খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে।
আলোচনার শুরুতে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য শহীদ, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শহীদ এবং সম্প্রতি মারা যাওয়া নেতা-কর্মী বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।