চট্টগ্রামে দুদকের মামলায় ওসি প্রদীপ কারাগারে

340

চট্টগ্রাম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (সাময়িক বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।
একই সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী প্রদীপ কুমার দাশের জামিন আবেদন জানালে আদালত ২০ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
আজ সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে শুনানি শেষে প্রদীপকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখায় এবং কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরে তাকে ফের করাগারে পাঠানো হয়। দুদক পিপি মাহমুদুল হক বাসস’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এরআগে, দুপর ১টার দিকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রদীপ কুমার দাসকে চট্টগ্রাম আদালতে নিয়ে আসা হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর তাকে কক্সবাজার আদালত থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে।
দুদক পিপি মাহমুদুল হক জানান, টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে দুদকের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর আদালতের কাছে একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, শুনানির সময় আসামি প্রদীপের পক্ষের আইনজীবীরা দুদকের এ মামলা থেকে প্রদীপকে জামিন দিতে আদালতের কাছে আবেদন করেন। আদালত এ বিষয়ে আগামি ২০ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চুমকি কারণ পেশায় একজন গৃহিণী। তিনি কোথাও চাকরি করতেন না। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট দানপত্র দলিল মূলে নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা এলাকায় জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। শ্বশুরের কাছ থেকে প্রদীপের স্ত্রীর উপহার পাওয়া বাড়ি নিয়ে দুদকের তদন্তে দেখা যায়, চুমকি কারণকে তার পিতা একটি বাড়ি দানপত্র করে দিলেও তার অন্য ২ ভাই ও ১ বোনকে কোনো বাড়ি দানপত্র করেননি। এতে প্রতীয়মান হয়, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অর্জিত আয় গোপন করার উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও হস্থান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে ওই বাড়ি নির্মাণ করে রূপান্তরপূর্বক পরে চুমকি কারণের নামে দানপত্র করে নিয়ে প্রদীপ দাশ ভোগদখল করছেন। প্রদীপের গৃহিণী স্ত্রী চুমকি কারণ কমিশন ব্যবসায়ি হিসেবে ২০১৩-১৪ সালে প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। পরে মৎস্য ব্যবসায়ী ও বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তিনি ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ কর বছরে আয়কর রিটার্নে কমিশন ব্যবসা বাবদ ব্যবসার মূলধন ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেখান। তবে দুদক তদন্ত করে দেখেন, কমিশন ব্যবসার লাইসেন্স, সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বা অন্য কোনো রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেনি।
১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন প্রদীপ কুমার দাশ। এসআই পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করতে লাগামগহীন হয়ে পড়েন প্রদীপ। তার সম্পদ দৃশ্যমান হতে থাকে ২০০২ সালের পর। প্রদীপের সব সম্পত্তিই তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। যার বিশ্বাসযোগ্য কোনো উৎস নেই বলে জানিয়েছে দুদক।