বাসস ক্রীড়া-৭ : শেষ পর্যন্ত প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বাদ পেলেন থিম

143

বাসস ক্রীড়া-৭
টেনিস-ইউএস ওপেন
শেষ পর্যন্ত প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বাদ পেলেন থিম
যুক্তরাষ্ট্র, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ (বাসস) : এবারের ইউএস ওপেনের আগে সাত বছরের টেনিস ক্যারিয়ারে তিনবার গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছিলেন অস্ট্রিয়ার ডোমিনিক থিম। তিনবারই ফাইনালে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হন তিনি। অবশেষে ফাইনালের গেড়ো কাটাতে পারলেন থিম। এ বছরের ইউএস ওপেনে পুরষ এককে ফাইনাল জিতে ক্যারিয়ারে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পেলেন নিলেন ২৭ বছর বয়সী থিম। গতরাতে দ্বিতীয় বাছাই থিম ২-৬, ৪-৬, ৬-৪, ৬-৩, ৭-৬ (৮/৬) গেমে হারিয়েছেন পঞ্চম বাছাই জার্মানির অ্যালেক্সান্ডার জেভরেভকে। ফাইনালটি শেষ হতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা ২ মিনিট। করোনার কারনে গ্যালারিতে বসে এই প্রজন্মের নতুন তারকাদের এমন শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি দেখার সুযোগ পেলেন না দর্শকরা। টিভি সেটের সামনে বসে আপসোসটা নিশ্চয়ই করেছেন টেনিস প্রেমিরা।
এবারের আসরের শুরু থেকে ছিলেন না বিশ্ব টেনিসের দুই তারকা সুইজারল্যান্ডের রজার ফেদেরার ও স্পেনের রাফায়েল নাদাল। তবে খেলেছিলেন সার্বিয়ার নোভাক জকোভিচ। তাই শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেভারিট ছিলেন জকোভিচ। কিন্তু শেষ ষোলো থেকে বিদায় ঘটে তার।
তাই বিগ-থ্রির বাইরে ২০১৪ সালের পর আবারো নতুন কোন ইউএস চ্যাম্পিয়নকে দেখার অপেক্ষায় ছিলো বিশ্ব। ফেদেরার-নাদাল-জকোভিচের বাইরে ২০১৪ সালে ফ্লাশিং মিডোতে নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্ব দেখেছিলো ক্রোয়েশিয়ার মারিন চিলিচকে। এবারের ফাইনালে থিম-জেভরেভ ওঠায় নতুন কারও হাতে ইউএস ওপেনের শিরোপা উঠবে এটিই নিশ্চিতই ছিলো।
জেভরেভের বিপক্ষে ফাইনালে এগিয়েই ছিলেন থিম। কারন এর আগে তিনবার গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে, আর এ বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। কিন্তু কোন আসরেই সেরা হতে পারেননি থিম। তবে ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতাটা ভারীই ছিলো তার। পক্ষান্তরে এই প্রথমবার ফাইনালে উঠেন জেভরেভ।
ফেভারিটের তকমা না থাকলেও, ফাইনাল জয়ের স্বপ্ন ছিলো ২৩ বছর বয়সী জেভরেভের। প্রথম সেট জিতে নেন তিনি। ৬-২ ও ৬-৪ গেমে জয় পান জেভরেভ। তাই আবারো ফাইনাল হারের দুঃস্মৃতি ফিরে আসে থিমের সামনে। কিন্তু এবার আর শিরোপা জয়ের সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাননি থিম।
খেলার ধরন পাল্টে নিয়ে জেভরেভকে চাপে ফেলে দেন থিম। সেই চাপ সামলাতে পারেননি জেভরেভ। তাই তৃতীয়-চতুর্থ সেট জিতে ম্যাচে সমতা আনেন থিম। ৬-৪ ও ৬-৩ গেমে সেট দু’টি জিতেন তিনি। ফলে চার সেট শেষে ম্যাচে ২-২ সমতা আসে। শেষ সেটটি শিরোপা নির্ধারনীতে রুপ নেয়।
এই সেট জিতলেই প্রথমবারের মত স্বপ্নের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতবেন থিম বা জেভরেভ। বিষয়টা জানা ছিলো দু’জনেরই। শেষ সেটে ¯œায়ু চাপে পড়েননি কেউই। দুর্দান্ত এক লড়াই প্রদর্শন করেন তারা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সেটটি গড়ায় টাইব্রেকারে। শেষ পর্যন্ত তীব্র মানসিক শক্তি ও দৃঢ়তায় ফাইনল জিতেন থিম।
১৯৪৯ সালে সর্বশেষ ইউএস ওপেনের ফাইনালে প্রথম দুই সেট হেরেও শেষ পর্যন্ত জয়ের কীর্তি গড়েছিলেন পাচো গঞ্জালেস। এবার সেই পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটালেন থিম। আর ২০০৪ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে গাস্তন গডিওর পর এই প্রথম কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে প্রথম দুই সেট হেরেও শেষ পর্যন্ত জয়ের নজির গড়লেন থিম।
ম্যাচ শেষে নিজের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের আনন্দটা একা নেননি থিম। জেভরেভের সাথে একরকম ভাগাভাগিই করেছেন তিনি, ‘দারুন এক ম্যাচ। ৪ ঘন্টার ম্যারাথন লড়াই। আমি মনে করি, এমন ম্যাচে দু’জন বিজয়ী হলেই খুব বেশি ভালো হত। কারন আমরা দু’জনই ভালো খেলেছি। আমাদের দু’জনেরই জয় প্রাপ্য। শেষ সেটে ট্রাইব্রেকারে যাবার পরও শেষ মূর্হুতে জেভরেভের হার, এটিকে আমি হার বলতে রাজি নই। খেলার নিয়মের কারনে একজনকে তো জিততে হবে, সেটিই হয়েছে।’
আট বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত কোন গ্র্যান্ড স্ল্যামে ফাইনালে উঠেও হতাশায় পুড়তে হলো জেভরেভকে। তিনি বলেন, ‘ফাইনাল ম্যাচ যে এতটাই উপভোগ্য হবে আমি বুঝতে পারিনি। প্রথমবারের মত ফাইনাল খেলার রোমাঞ্চ ভর করেছিলো। তবে চাপ অনুভব করিনি। দারুন খেলেছে থিম। জয়-শিরোপার তার ভাগ্যেই লেখা ছিলো। তবে শিরোপার কাছে গিয়েও হেরে যাওয়াটা সত্যিই অনেক বেশি হতাশার। ম্যাচটি যদি সরাসরি বা ৩-১ সেটে হারতাম, এতটা হতাশ হতাম না। নিজের সর্বোচ্চ দিয়েও হারতে হলো।’
বাসস/এএমটি/১৫৫৫/স্বব