জয়পুরহাট, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : জেলায় বর্তমানে রোপা আমন ধানের ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
স্থানিয় কৃষি বিভাগ সূত্র বাসস’কে জানায়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার এ পদ্ধতির নামই ‘পার্চিং’। এ ‘পার্চিং’ পদ্ধতি ফসলের পোকা দমনের জন্য ব্যয় বিহীন এবং পরিবেশ বান্ধব। এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন খরচ ও কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ জেলার কৃষকদের মাঝে। কৃষকরা বর্তমানে তাদের আমন ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৭২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৭১ হাজার ৪১০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ হয়েছে ৫ হাজার ৩শ ১০ হেক্টর জমিতে এবং উফশী জাতের ধান রোপণ হয়েছে ৬৫ হাজার ৪০০ হেক্টর ও স্থানিয় জাতের রয়েছে ৭শ হেক্টর জমিতে। পার্চিং দুই প্রকার ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডালকে জমিতে পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং। জেলায় এবার প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে লাইফ ও ডেট পার্চি এর ব্যবহার হচ্ছে। কৃষকেরা তাদের আমন ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে দেয়। বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ৮টি বাঁশের আগা, কঞ্চি, ডাল ও ধইঞ্চার ডাল পুঁতে রাখা হয়। এসব ব্যবহারের ফলে শালিক, বুলবুলি, ফিঙ্গেসহ বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি পাচিংয়ের উপরে বসে সেখান থেকে উড়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয় বলে জানায় কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মহামারী করোনা প্রাদূর্ভাবের মধ্যেও জেলার কৃষকেরা যথাসময়ে তাদের জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেন। রোপণকৃত চারাগুলো এখন সবুজ ও সতেজ হয়ে উঠায় কৃষকদের মনে প্রশান্তি এনে দিয়েছে। ধানের জমিতে পাচিং পদ্ধতির মাধ্যমে শালিক, বুলবুলি ও ফিঙ্গে পাখি বসে ধানের ক্ষতিকর পোকাগুলো খেয়ে ফসল রক্ষা করছে। ফলে কৃষকদের কীটনাশকের ব্যবহার কমে গেছে। সেই সঙ্গে বালাইনাশকের ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ দূষণ মুক্ত হচ্ছে। কালাই উপজেলার সাঁতার গ্রামের কৃষক তৌফিকুল ইসলাম , সড়াইল গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, তারা সম্পূর্ণ ক্ষেতে “পার্চিং” পদ্ধতি করেছেন। বিঘা প্রতি আমন ধানের ক্ষেতে ৫টি গাছের ছোট ডাল, বাঁশের কঞ্চি এবং ৩টি জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে দিয়েছেন। এতে করে ফিঙ্গে, শালিক ও বুলবুলি ওই ডালে বসে খেতের ক্ষতিকর পোকা ধরে খেয়ে ফেলছে। নান্দাইল গ্রামের কৃষক খাজা মিয়া ও বালাইট গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, “পার্চিং”-এর পদ্ধতির ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ কম হচ্ছে এবং কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শ ম মেফতাহুল বারী বলেন, এক সময় পোকা দমনে কীটনাশকই ভরসা ছিল কৃষকদের। এখন পার্চিং পদ্ধতিই আশা জেগেছে কৃষকদের মাঝে। বর্তমান পার্চিং পদ্ধতিতে পোকার বংশ বিস্তার কম হচ্ছে। সেই সঙ্গে জমিতে জৈব সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা পড়ে জমি উর্বরতা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।