বিশ্বরেকর্ডের ম্যাচে কাল ভারতের মুখোমুখি ইংল্যান্ড

248

বার্মিংহাম, ৩১ জুলাই ২০১৮ (বাসস) : টেস্ট ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য এক বিশ্বরেকর্ড করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। প্রথম দল হিসেবে আগামীকাল এক হাজারতম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামছে ইংলিশরা। ইংল্যান্ডের বিশ্বরেকর্ডের ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভারত। জয় দিয়ে বিশ্বরেকর্ডের ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে চায় ইংল্যান্ড। পক্ষান্তরে সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকেই নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতে চায় ভারত। বার্মিংহামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় শুরু হবে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম টেস্ট।
১৮৭৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে ইংল্যান্ড। এরপর এখন অবধি ৯৯৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে তারা। তাই ১ হাজারতম ম্যাচ খেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ইংলিশরা। ভারতের বিপক্ষেই নিজেদের রেকর্ডের ম্যাচ খেলতে নামছে ইংলিশরা।
তবে ব্যাকফুটে থেকেই টেস্ট সিরিজ শুরু করতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। কারণ সর্বশেষ তিন টেস্ট সিরিজের সবক’টিতেই হেরেছে ইংলিশরা। ২০১৭ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের লজ্জা পায় তারা। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে গিয়ে টেস্ট খেলে সিরিজ হারলেও, দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলো ইংলিশরা। গেল মে মাসে অনুষ্ঠিত দু’ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পিছিয়ে পড়েও ড্র করতে সক্ষম হয় তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট সিরিজে ভালো করতে না পারলেও ১ হাজারতম টেস্টে ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই অন্যরকম এক অনুভূতি মনের মধ্যে কাজ করছে। শততম বা পাঁচতম ম্যাচ নয় হাজারতম টেস্ট খেলতে নামবো আমরা। আমি বা যারা এই টেস্টটি খেলতে নামবে সবাই ভাগ্যবান। ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে হবে আমাদের। এজন্য ভালো পারফরমেন্স দরকার। যাতে হাজারতম টেস্টেই জয় তুলে নিতে পারি আমরা। এ ম্যাচে ভাল পারফরমেন্স দেখিয়ে জয় তুলে নেয়াই আমাদের লক্ষ্য।’
স্মরণীয় টেস্টে ভালো ফল অর্জন করতে ইংল্যান্ডকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে মনে করেন দলটির সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। ভারতের বোলিং লাইন-আপ ইংল্যান্ডকে সমস্যায় ফেলতে পারে বলে জানান তিনি, ‘ভারতের বেশক’জন বৈচিত্র্যময় বোলার রয়েছে। বিশেষভাবে পেসাররা। যারা সম্ভবত অস্বাভাবিক। তাদের পেস বোলিং-এর গভীরতা অনেক শক্তিশালী। গেল দশ বছর ধরে আমি তাদের বিপক্ষে খেলছি। একটা সময় পাঁচ বা ছয় জন ভিন্ন ধর্মী পেসার খেলানোর বিকল্প তাদের হাতে ছিল না। অতীতে যা অভিজ্ঞতার চেয়ে ভিন্ন কিছু আগামী ছয় সপ্তাহে দেখা যাবে।’
কুকের নেতৃত্বেই ভারতের বিপক্ষে ২০১২ ও ২০১৪ সালে টানা দু’টি সিরিজ জয় করে ইংল্যান্ড। ২০১২ সালে ভারতের মাটিতে চার ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে এবং ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জিতে নেয় ইংলিশরা।
তবে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের টেস্ট রেকর্ড মোটেও ভালো নয়। এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৭টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে ভারত। জিততে পেরেছে মাত্র ৩টিতে। ১৯৭১, ১৯৮৬ ও ২০০৭ সালে। ১১ বছর আগে ইংলিশদের মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছিলো ভারত। অতীত রেকর্ডের কথা মাথায় রেখে কাল থেকে শুরু হওয়া সিরিজে আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলার হুমকি দিয়ে রাখলেন ভারতের কোচ রবি শাস্ত্রী, ‘আমরা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলবো। আমরা বিদেশের মাঠে সেরা দল হয়ে উঠতে চাই। সেই দক্ষতা আমাদের আছে। বিদেশে আমরা সাদা বলের ক্রিকেটে খুব ভাল করছি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে লাল বলের ক্রিকেটেও ভাল খেলেছি। সেই খেলাটাই খেলতে চাই। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হল, লাল বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলা।’
টেস্ট লড়াইয়ে নামার আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি করে টি-২০ ও ওয়াডে ম্যাচের সিরিজ খেলেছে ভারত। টি-২০ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলেও, ওয়ানডে সিরিজ হেরে যায় ভারত। তবে টেস্ট সিরিজের আগে টি-২০ ও ওয়ানডে লড়াইয়ে ভারতের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে বলে মনে করেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি, ‘পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের আগে তিনটি করে টি-২০ ও ওয়ানডে খেলেছি আমরা। এতে আমরা কন্ডিশনের সাথে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছি। আশা করি, টেস্ট সিরিজে সমস্যা হবে না। তারপরও টেস্ট সিরিজ বড় চ্যালেঞ্জ হবে। যেমনটা গত সফরে হয়েছিলো। তবে এবারের চিত্রপট ভিন্ন হবে। কারন দলের খেলোয়াড়রা নিজেদের উজার করে দিতে পুরোপুরি প্রস্তত। আশা করি, দল হিসেবে আমরা ভালো খেলতে পারবো এবং ভালো ফল অর্জন করতে পারবো।’
এদিকে, প্রথম টেস্টের আলোচনার তালিকায় রয়েছে বার্মিংহামের পিচও। গেল কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরম পড়ছে ইংল্যান্ডে। এ অবস্থায় পিচ থেকে স্পিনাররাই সুবিধা পাবেন বলে আশা করা হয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎই বদলে গেল আবহাওয়া। গতকাল দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টি হয়েছে ইংল্যান্ডে। স্বাভাবিকভাবে অনুশীলনই করেনি ভারত। তাই আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় পিচ থেকে পেসাররাই সুবিধা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে হাসি ফুটেছে ইংল্যান্ড বোলারদের মুখে।
তবে এমনটা মানতে রাজি নন ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। তার মতে, ‘পিচ প্রস্তুতকারকরাও সঠিকভাবে বলতে পারবে না প্রথম টেস্টে পিচ কী রকম ব্যবহার করবে।’
তবে কন্ডিশনের সাথে যারা মানিয়ে নিতে পারবে তারাই ভালো করবে বলে মনে করেন ব্রড, ‘খেলা শুরু হবার পর ফিল্ডিং পাওয়া দলকে বুঝতে হবে- ব্যাটসম্যানদের কোন বল সমস্যায় ফেলতে পারে। স্পিন, রিভার্স সুইং নাকি ইন সুইং! সেভাবেই নিজেদের মানিয়ে খেলতে হবে। কন্ডিশন বুঝে ব্যাটিং-বোলিং করতে হবে।’
ভারত দল (সম্ভাব্য) : বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), আজিঙ্কা রাহানে (সহ-অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, মুরালি বিজয়, চেতেশ্বর পুজারা, করুন নায়ার, দিনেশ কার্তিক (উইকেটরক্ষক), ঋষভ পান্থ (উইকেটরক্ষক), রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবিন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব, হার্ডিক পান্ডিয়া, ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ সামি, উমেশ যাদব, জসপ্রিত বুমরাহ ও শারদুল ঠাকুর।
ইংল্যান্ড দল (সম্ভাব্য) : জো রুট (অধিনায়ক), মঈন আলী, জেমস এন্ডারসন, জনি বেয়ারস্টো, স্টুয়ার্ট ব্রড, জস বাটলার, এলিস্টার কুক, স্যাম কারান, কিয়েটন জেনিংস, ডেভিড মালান, জেমি পোর্টার, আদিল রশিদ ও বেন স্টোকস।