ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি হবে : প্রধানমন্ত্রী

654

ঢাকা, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর বর্বরোচিত ও জঘন্য হামলার কারণ ও এর পেছনের মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রী’র প্রশ্ন-উত্তর পর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের (সংসদ সদস্যদের) বলতে পারি যে এই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, সেই সব অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি হবে এবং আমি এর নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এর পেছনে মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে। এই ঘটনার তদন্তে কোন ধরনের ত্রুটি নেই। এর সুষ্ঠু তদন্ত হবে।’
এ সময় হারুন ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির মতো একটি কমিটি গঠন করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। কারণ স্থানীয় তদন্ত কর্মকর্তারা যথাযথ তদন্ত করতে পারবে না বলে তার সন্দেহ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আমার দৃষ্টিতে অপরাধীর একমাত্র পরিচয় সে একজন অপরাধী। আমি কখনোই অপরাধী কোন দলের তা দেখব না। এমনকি তারা যদি আমার দলের সদস্যও হয়, তবুও আমি তাদের রেহাই দেব না এবং আমি এই আদর্শ নিয়েই চলছি। আপনারা (সংসদ সদস্য) ইতোমধ্যেই এটা বুঝেছেন।’ ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলার ঘটনাকে দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্তের পর আরো অপরাধীকে গ্রেফতার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘অনেকে ধারণা করছেন যে এটি একটি চুরির ঘটনা। এই ঘটনার সাথে জড়িত প্রত্যেকটি বিষয়ে যথাযথভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী অপরাধীদের আশ্রয় দেয়া বা রক্ষা না করার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘যারা অপরাধ করে ও যারা অপরাধীদের রক্ষা করে, উভয়ে সমান অপরাধী।’
সংসদ নেতা বলেন, ইউএনও ওয়াহিদাকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা নিয়ে আসা হয় এবং তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঘোড়াঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সস্থ ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসস্থানে এই হামলায় ওয়াহিদা ও তার বাবা ওমর আলী গুরুতর আহত হন।
ওয়াহিদা এখন ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার পরদিন (শুক্রবার) র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসাদুল হক ও তার দুই সাথী নাবিউল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাসকে দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। দিনাজপুরের একটি আদালত তাদের সকলের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুন ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলার ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের লোকদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দলের নেতাকর্মীদের দোষ দেয়া ঠিক না। করোনা ভাইরাস, সাইক্লোন আমপান ও বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিতে তারা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। বিএনপি সরকার ১৯৯১ সালের সাইক্লোনের পর দুর্গত মানুষের জন্য কিছুই করেনি।
পিছনের ঘটনা টেনে না আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হারুনের আবেদন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথ বেছে নিতে হবে।’
বগুড়া- ৬ আসনের বিএনপি দলীয় এমপি গোলাম মোহম্মদ সিরাজের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। ওয়াহিদার উপর হামলার ঘটনায়ও এর ব্যতিক্রম হবে না। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তাঁকে ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দায়মুক্তি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার এই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি দেশের ৫০০টি স্থানে একই সাথে বোমা হামলা এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করেন।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুস শহীদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী “মুজিব বর্ষে” দেশে কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না এই লক্ষ্যে তাঁর সরকার প্রত্যেক গৃহহীনকে গৃহ এবং সংলগ্ন ভূমি প্রদানে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আদর্শ গ্রাম ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের অধীনে ১,১৪০.২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ২ হাজার ৭০৪ টি গ্রামে ইতোমধ্যেই ১ লাখ ১৮ হাজার ২১৩ টি পরিবার পূনর্বাসন করা হয়েছে এবং আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪০ টি পরিবারের পূনর্বাসন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে উদ্বাস্তু ৪ হাজার ৪০৯ টি পরিবারকে পূনর্বাসনের লক্ষ্যে কক্সবাজারের খুরুশকুল এলাকায় ১৩৯ টি পাঁচতলা ভবন নির্মানের কাজ অব্যাহত রয়েছে এবং ইতোমধ্যেই ২০টি ভবনে ৬০০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মুজিব বর্ষে” কেউ গৃহহীন থাকবে না এই নীতিতে সরকার দেশব্যাপী সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের ঘর ও জমি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই আশ্রয়ন প্রকল্প ২ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, সরকার এ পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০ টি গৃহহীন পরিবারের তালিকা তৈরি করেছে এবং সরকার ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১ টি পরিবারের পূনর্বাসনে আধাপাকা গৃহ নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে, এতে প্রতিটি গৃহ নির্মানে ব্যয় হবে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সরকার সকল জেলার ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা সংগ্রহ করেছে।
যাতে কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রী এ সব পরিবারের তথ্য প্রদানে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সরকার যাচাই বাছাইয়ের পরে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে কিভাবে দিনের কার্যক্রম শুরু করেন এ বিষয় জানতে চেয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজ খোঁজেন এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন এবং পরে নিজে কিংবা শেখ রেহানা বা পুতুলের (সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল) তৈরি চা অথবা কফি পান করেন।
“ঘুম থেকে ওঠার পরে প্রথমে আমি ফজরের নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজের সন্ধান করি। পরে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করি। পরে আমি নিজে তৈরি করে কিংবা আমার ছোটবোন অথবা আমার মেয়ে পুতুল যিনি আগে ঘুম থেকে ওঠেন তার তৈরি করা চা বা কফি পান করি। তিনি আরো বলেন, ‘পরে কিছুক্ষণ মর্নিওয়াক করি এবং কখনো কখনো মাছ ধরার জন্য একটি বড়শি নিয়ে গণভবনের লেকের পাশে বসি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা এমনকি গৃহকর্মী, গাড়ি চালক ও রিকশাচালকদের প্রতি ভালো আচরণ করেন এবং সম্মান প্রদর্শন করেন এবং তাদের পরিবারের কাছে বিশেষ করে বাবার কাছে তাঁরা এ শিক্ষাই পেয়েছেন।


ঢাকা ১১ থেকে নির্বাচিত সরকারি দলের সদস্য একেএম রহমতউল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিশ্বাস করে টেকসই সমুদ্র সম্পদ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই ,এ জন্যই তিনি ভার্চুয়াল সমুদ্র সংলাপে তিন দফা প্রস্তাব রেখেছেন।
তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এবং ফ্রেন্ডস অফ ওশান অ্যাকশন গত ৩ জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত “ভার্চুয়াল ওশান ডায়ালগস” এ বিষয় সুচিন্তিত এবং কৌশল ভিত্তিক প্রস্তাব উত্থাপনের আহবান জানায়। এই প্রস্তাব ডায়ালগ সফল করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিভাবে সমুদ্র সম্পদ আহরণ করা যায় এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে কিভাবে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করা যায় এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য সুইডেনের উপপ্রধান মন্ত্রী ইসাবেলা লোভিন এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত পিটার থমসন এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ডমিনিক ওয়াগরে’র আমন্ত্রনে বাংলাদেশ এই সম্মেলনে যোগ দেয়।