ইউরোপীয়ান হেভিওয়েটরা জয় দিয়ে নেশন্স লিগ শুরু করেছে

206

প্যারিস, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ (বাসস) : ইংলান্ড, বিশ^ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল ও বেলজিয়ামের মত ইউরোপীয়ান হেভিওয়েট দলগুলো জয় দিয়ে উয়েফা নেশন্স লিগের মিশন শুরু করেছে। যদিও করোনাভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ বন্ধ থাকায় তার কিছুটা প্রভাব ম্যাচগুলোতে দেখা গিয়েছে।
আইসল্যান্ডকে ১-০ গোলে পরাজিত করতে ইংল্যান্ডকে স্টপেজ টাইমের পেনাল্টি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিলিয়ান এমবাপ্পের একমাত্র গোলে একই ব্যবধানে সুইডেনকে পরাজিত করেছে ফ্রান্স। ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর অনুপস্থিতিতে অবশ্য পর্তুগালকে বড় জয় তুলে নিতে সমস্যায় পড়তে হয়নি। বিশ^কাপের রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে দারুন সূচনা করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ডেনামার্ককে ২-০ গোলে পরাজিত করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বিশ^ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল বেলজিয়ামকে।
বৃহত্তম শহর রেজাভিকে লিগ-এ’র গ্রুপ-টু’র প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে আতিথ্য দিয়েছিল আইসল্যান্ড। স্টপেজ টাইমের প্রথম মিনিটে রাহিম স্টার্লিংয়ের পেনাল্টিতে কোনমতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা। এর মাধ্যমে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি হতাশাজনক পরাজয়ের হাত থেকেও রক্ষা পায় গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ৭০ মিনিটে কাইল ওয়াকার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গেলে বাকি সময়টা ১০জন নিয়েই খেলতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। স্টপেজ টাইমের শেষ মিনিটে বিরকির বিয়ারনাসন স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হলে সমতায় ফিরতে পারেনি আইসল্যান্ড।
চার বছর আগে ইউরো ২০১৬’এ আইসল্যান্ডের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হবার ঘটনাটা ছিল ইংল্যান্ডের ফুটবলীয় ইতিহাসে অন্যতম লজ্জাজনক পরাজয়। যদিও এবারের ইউরো ২০২০ বাছাইপর্বে সবক’টিতে জয়ী হয়ে প্রথম দল হিসেবে মূল পর্বের টিকিট পায় ইংল্যান্ড। দীর্ঘ ১০ মাস পর প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে খেলোয়াড়রা স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা হলেও নার্ভাস ছিল। প্রথমার্ধে হ্যারি কেনের একটি গোল অফ-সাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। আইসল্যান্ডের কঠিন রক্ষনভাগের সামনে ইংলিশ ফরোয়ার্ডরা বারবার হতাশ হয়েছেন। তবে ৮৯ মিনিটে ডিফেন্ডার সেভির ইনগাসন স্টার্লিংয়ের শট হাত দিয়ে ব্লক করায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন। ৭৮ মিনিটে কেনের পরিবর্তে মাঠে নামেন ম্যাসন গ্রীনউড। কেনের অনুপস্থিতিতে স্পট কিক মারার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন স্টার্লিং।
ম্যাচ শেষে সাউথগেট বলেছেন, ‘লাল কার্ডটা ছিল ম্যাচের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। কারন ১০জন নিয়ে একটি ম্যাচ জয় করা মোটেই সহজ নয়। অযথাই লাল কার্ড পেয়েছেন ওয়াকার। আমরা এখান থেকে জয় নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু ম্যাচের শেষে এই উপলব্ধি হয়েছে যে আরো অনেক উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।’
এই গ্রুপের আরেক ম্যাচে কোপেনহেগেনে স্বাগতিক ডেনমার্ককে ২-০ গোলে পরাজিত করে শুভ সূচনা করেছে বেলজিয়াম। এর ফলে গত চার বছরে এই প্রথম ঘরের মাঠে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল ডেনিসরা। একইসাথে নতুন কোচ কাসপার হালমান্ডের অধীনে এটা ড্যানিশদের প্রথম পরাজয়।
অবসরে যাওয়া ভিনসেন্ট কোম্পানী ও তৃতীয় সন্তান জন্মের কারনে পরিবারের সাথে থাকায় কেভিন ডি ব্রুইনাকে ছাড়াই কাল মাঠে নেমেছিল বেলজিয়াম। ম্যাচের নয় মিনিটে ড্রিয়ের মার্টিনসের ফ্রি-কিকে ডিফেন্ডার জেসন ডেনায়ার গোল করে বেলজিয়ামকে এগিয়ে দেন। লিঁও ডিফেন্ডারের এটি ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল। ৭৭ মিনিটে নাপোলি স্ট্রাইকার মার্টিনস দলের ব্যবধান দ্বিগুন করেন।
স্টোকহোমের সোলনা ফ্রেন্ডস এরিনাতে কিলিয়ান এমবাপ্পের একমাত্র গোলে বিশ^ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। ৪১ মিনিটে দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলক্ষক রবিন ওলসেনকে পরাস্ত করেন এমবাপ্পে।
ম্যাচ শেষে ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ্যম বলেছেন, ‘ম্যাচের পারফরমেন্স অসাধারণ ছিল না। তবে জয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর দল মাঠে ফিরেছে এটাই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ফিটনেস লেভেল বিবেচনা করলে জয়টা সত্যিই জরুরী ছিল।’
পোর্তোয় আঙ্গুলের প্রদাহের কারনে স্বাগতিক দলে ছিলেন না সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। কিন্তু ক্রোয়েশিয়াকে বিধ্বস্ত করতে পর্তুগালের কোন সমস্যাই হয়নি। ৪১ মিনিটে হোয়াও ক্যান্সেলোর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল পর্তুগাল। এরপর ৫৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন দিয়োগো জোটা। ৭০ মিনিটে হোয়াও ফেলিক্সের গোলের পর স্টপেজ টাইমে দলের হয়ে শেষ গোলটি করেন আন্দ্রে সিলভা। ফেলিক্স বলেছেন, ‘দীর্ঘ সময় পরে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। কিছু খেলোয়াড় সরাসরি ছুটি কাটিয়ে দলে যোগ দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও পুরো দলই দুর্দান্ত খেলেছে।’
এদিকে ক্রোয়েশিয়া দলে ছিলেন না লুকা মড্রিচ ও ইভান রাকিটিচ। এই দুজন একসাথে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ২৩৩টি ম্যাচ খেলেছেন। স্বাগতিকদের হয়ে ব্রুনো পেটকোভিচ স্টপেজ টাইমে একটি সান্তনাসূচক গোল দিয়েছেন।