বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : করোনাকালে তিস্তা পাড়ের মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্থল হয়ে ওঠে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো

138

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
করোনা-কমিউনিটি ক্লিনিক
করোনাকালে তিস্তা পাড়ের মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসার স্থল হয়ে ওঠে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো
ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : করোনা ভাইরাস বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবন-যাত্রায় এনে দিয়েছে বিরাট পরিবর্তন। মানুষ এখন জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। বিশ্ব এই করোনা ভাইরাসের কারণে টালমাটাল, সবকিছুই হয়ে পড়েছে স্থবির।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শণাক্ত হয়। এর আগে থেকেই বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়। মার্চের শেষ সপ্তাহ হতে শুরু হয় লকডাউন। প্রায় আড়াই মাস পর কিছুটা শিথিল হয় লকডাউন। কিন্তু এই পুরোটা সময় সাধারণ মানুষকে তাদের শারিরীক অন্যান্য রোগ নিয়ে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ এ সময় প্রায় সব প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলো তাদের সেবা কার্যক্রম সীমিত করে ফেলে।
তবে এ সময় সাধারন মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হয় কমিউনিটি ক্লিনিকের কারনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ফসল এই কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে মানুষ নিয়েছে চিকিৎসা সেবা।
নীলফামারী জেলার জলঢাকা এবং ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর পাড়ে বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ এই করোনাকালীন সময়ে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে পারেনি। কারণ তাদের বাড়ি থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার। এছাড়াও ওই সময় চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এসব এলাকার সাধারন মানুষ অতটা দূরে স্বাস্থ্য সেবার জন্য যেতে পারেনি। এ অবস্থায় পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হয়ে উঠে তাদের একমাত্র ভরসাস্থল। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্য সেবা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে চর এলাকার মানুষগুলোর।
কিসমত চর এলাকার বাসিন্দা রাহেলা খাতুন বলেন, কিছুদিন আগে হঠাৎ করে তার ছয় বছর বয়সী মেয়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রচন্ড পেট ব্যাথা করত। আর মেয়ে কিছুই খেতে চাইত না। তখন মেয়েকে তার বাবা শহরে নিতে চাইলে কোন গাড়ী না পেয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসে। পরে পাশের বাড়ির আব্দুল চাচা তাদের পরামর্শ দেয় পার্শ্ববর্তী পাগলাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার। তার কথায় আমরা সেখানে মেয়েকে নিয়ে যাই। পরে দুই দিন ওষুধ সেবনের পর মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠে।
আমার মেয়ের পর স্বামীও সেখান থেকে চিকিৎসা করায়। তার দীর্ঘদিন ধরে বদহজমের সমস্যা ছিল। ক্লিনিকের দেওয়া ওষুধে সে-ও এখন অনেক সুস্থ বোধ করে।
একই এলাকার বাসিন্দা রমিজ মিঞা বলেন, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিকের রোগী। এছাড়াও তার রয়েছে বিবিধ সমস্যা। তিনি সব সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ গিয়ে চিকিৎসা করান। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি আর সেখানে যেতে পারেন না। তাই আমরা দু’ভাই মিলে বাবাকে পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম। এখন বাবা অনেকটা সুস্থ। প্রতিদিন রাস্তায় হাঁটাচলাও করছেন। বড় কোন রোগ না হলে তিনি এখন থেকে এই কমিউনিটি ক্লিনিকেই চিকিৎসা করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মহাব্বত হোসেন বলেন, আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৯০ থেকে ১১০ জন রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এছাড়াও করোনাকালীন লকডাউনের সময় প্রায় ২০জন গর্ভবতী নারী স্বাস্থ্য সেবা নিতে এসেছেন।
তিনি বলেন, এ সময় প্রত্যেক স্বাস্থ্য কর্মী অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেছেন। এসময় অমরা সবাই পিপিই পড়ে কাজ করেছি।
জলঢাকা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হাসান মো. রেজানুল কবীর বলেন, তারা এ সব কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কার্যক্রম খুব কঠোরভাবে মনিটর করছেন। কারণ বর্তমান সরকার এই স্বাস্থ্য খাতকে অধিক প্রাধান্য দিয়েছেন, যাতে করে সাধারন মানুষ তাদের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পান।
তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি ৩০টি ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। উপজেলার সবগুলো কমিউনিটি ক্লিনিকে পর্যাপ্ত পরিমান ওষুধ রয়েছে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/কেটিকে/আহো/১১৩১/স্বব