বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করছে সরকার

152

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
ইন্টারনেট-শিশু
শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করছে সরকার
ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান ছাড়া বর্তমান দুনিয়ায় কিছুই চিন্তা করা যায় না। অনেকেই বলে থাাকেন, ‘বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ’। কথাটি নিতান্তই সত্যি। অবশ্য সব কিছুরই ভাল-মন্দ থাকে। বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় বিজ্ঞানের জয়যত্রায় যা মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে তা হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের কারণে পুরো পৃথিবীই এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। আবার এ ইন্টারনেটের কারণে অনেকেই বিপথগামীও হচ্ছে। ইন্টারন্টে ছাড়া যেহেতু পৃথিবী অচল। তাই এর নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবা দরকার। বিশেষ করে আগামী দিনে যারা দেশ তথা বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে সেই ভবিষ্যত প্রজন্ম বা আজকে যারা শিশু তারা যাতে নিরাপদ ইন্টারনেট পেতে পারে সে ব্যবস্থাও করা দরকার। এ জন্য ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ প্রবক্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইন্টারনেট দুনিয়ায় শিশুদের নিরাপদ রাখতে সরকার ইতোমধ্যেই প্যারেন্টাল কন্ট্রোল গাইড লাইন তৈরি করেছে এবং তা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত তা তা সর্বস্তরে চালু হয়নি। তবে কেউ কেউ বা কোন কোন কোম্পানী সরকারের নির্দেশমত ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। দেশে ব্রডব্যান্ড(উচ্চগতি) ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটি এই সেবা চালু করেছে। কিন্তু মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো এখনো এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। কবে নাগাদ চালু করবে তাও জানা যায়নি। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের আশা, শিগগিরই মোবাইল অপারেটরগুলো পরিপূর্ণভাবে এই ব্যবস্থা চালু করবে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলে অপারেটরদের বাধ্য করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি আরো জানান, আইএসপিগুলো এখনই বাস্তবায়ন না করলেও কোন সমস্যা হবেনা। লাইসেন্স নবায়ন করার সময় এটা করতে বাধ্য করা হবে। যারা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল চালু করবেনা তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না। প্রসঙ্গত, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল হলো সেই প্রযুক্তি, যা শিশুদের জন্য আপত্তিকর বা অনুপুযুক্ত হতে পারে এমন ওয়েবসাইট ব্লক বা ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ফিল্টার কিভাবে করতে হয় তার ব্যবস্থা করে।
গত বছর দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিডিকম অনলাইন প্যারেন্টাল প্রযুক্তি চালু করে। এরই মধ্যে আম্বার আইটি, অগ্নি সিস্টেমস, অপটিম্যাক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ সেবা চালু করেছে।
সংশ্লিস্টরা বলছেন, কোন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল অপারেটর নিজের ইচ্ছেতে এটা চালু করতে চায়না। কারণ কেউ চায়না তার ব্যবসায় লাভের অংশ কমে যাক। মূলত সরকারের নির্দেশনা দেয়ার পর আইএসপিগুলো প্যারেন্টাল কন্ট্রোল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। অভিভাবকরা চাইলে আইএসপিগুলো প্যারেন্টাল সেবা দিচ্ছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই প্যাকেজ অফার করেছে। মূলত বাবা-মায়ের সচেতনতার অভাবেই প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেবাটি জনপ্রিয়তা পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন ইন্টারনেট ব্যবসার সাথে জড়িতরা। তবে প্রচার-প্রচারণাকেও দুষছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আমি যত বেশি ডিজিটাল হচ্ছি, আমার তত বেশি ডিজিটাল সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই নিরাপত্তার হুমকিটা আসলে বহুমাত্রিক। আমি এতদিন বলে এসেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই শুধু নিরাপত্তা ঝুঁকি নয়, আমার চারপাশের সবকিছু- মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল যখন আমি কাজ করছি তখন এটাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, পেমেন্ট সিস্টেমও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এমনকি ওয়েবসাইটও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এই যে, সামগ্রিক ঝুঁকিটা বাড়ছে, এই ঝুঁকিটা কমানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে সচেতনতা। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের জন্য এই গাইডলাইন।’
মন্ত্রী আরো বলেন,‘এটা দেয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে-আমাদের অভিভাবকরা যেন নিজ নিজ সন্তানদের তাদের মত করে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। আমি নিয়ন্ত্রনের কথা বলছি এ জন্য যে, নিয়ন্ত্রনটা আমার উদ্দেশ্য নয়, বিষয়টা হলো মনিটর করা। অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েদের বাবা-মায়েরা এটা ঠিক করে দেয় কার সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে, কার সঙ্গে নয়। কারণ বন্ধুর প্রভাব জীবনে এসে পড়ে। এই বাবা-মায়েরা যাতে মনিটর করতে পারে এটা সে জন্য।’
তিনি বলেন, আপনার হাতে যদি একটা ডিজিটাল হাতিয়ার থাকে তবে আপনি আপনার সন্তানকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিতে পারবেন। আমি এ জন্যই নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছি। ফলে ২৪ ঘন্টা ইন্টারনেট খোলা রাখলেও কোন সমস্যা নেই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মোবাইল অপারেটররা মনে হয় এখনো শুরু করেনি। তবে আমি যখন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল গাইডেন্স অর্ডার দিয়েছি তখন আমি করার জন্যই দিয়েছি। আমরা প্রথম স্তর বলেই ওই সব জায়গায় এখনো কড়াকড়ি আরোপ করিনি। একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে আমরা কড়াকড়ি আরোপ করব। আইএসপিগুলোর লাইসেন্স ইস্যুর শর্ত হলো প্যারেন্টাল কন্ট্রোল গাইডেন্স চালু করা।
এ বিষয় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সাধারন সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমাদের সদস্যরা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেবাদানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। অভিভাবকরা চাইলেই তারা সেবা দিতে পারবে। অনেকে এ সেবা দিচ্ছেও। তবে গ্রাহকদের কাছ থেকে অনুরোধ আসতে হবে। অনুরোধ পেলেই আইএিসপিগুলো এ সেবা দেবে। ইউজার লেভেল থেকেও তারা অনুরোধ পাচ্ছেন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএসপিবিও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেবে।
এই সেবাদানে প্রথম উদ্যোগ গ্রহনকারী প্রতিষ্ঠান বিডিকম অনলাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর বলেন, একে আমরা বলি নিরাপদ ইন্টারনেট সেবা। আমরা এক বছর আগেই এ সেবা দিতে শুরু করেছি। সাড়া মোটামুটি ভাল। এ সেবা দিতে আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তারপরও আমরা দিচ্ছি। আমরা এখন প্রমোশনাল অফারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল রাউটার ফ্রি দিচ্ছি। এটা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই দিচ্ছি। কারণ আমরা ইথিকাল বিজনেস পলিসি মেনে চলি।
অভিভাবকদের কাছ থেকে সাড়া কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাল। তবে আরো ভাল হতে পারত। তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠান ৫৩টি ক্যাটাগরিতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেবা দিচ্ছে। তিনি বলেন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেবায় যে ৫৩টি ক্যাটাগরি বেছে নেয়া হয়েছে তাতে তাদের ইন্টারনেট সেবা সম্পুর্ণ নিরাপদ। শিশুদের হাতে ইন্টারনেট তুলে দিয়ে অভিভাবকরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। কোনো এডাল্ট(পর্নো সাইট), জুয়ার সাইট, সহিংস কোন দৃশ্য, ধর্মীয় উগ্রবাদ ইত্যাদি লিংক তথা ভিডিওচিত্র আসবেনা।
আলমগীর আরো জানান, কন্টেন্ট ফিল্টার ও কন্টেন্ট ব্লক এই দুইভাবেই আমরা নিরাপদ ইন্টারনেট দিচ্ছি। এছাড়া আমরা বাড়ির বড়দের জন্য একটা এসএস আইডি ও পাসওয়ার্ড দিচ্ছি। যেটা ওপেন। সব কিছু ব্রাউজ করা যাবে। আর শিশুদের জন্য দিচ্ছি আরেকটি এসএসআইডি। যেটা দিয়ে শিশুরা তাদের উপযোগী সব কিছু দেখতে পাবে। এছাড়া কন্টেন্ট ব্লকিং মোডে ইন্টারনেট সংযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করা যাবে। ধরা যাক, দিনের বিভিন্ন সময়ে গৃহশিক্ষক, গানের শিক্ষক আসেন। এছাড়া বাড়ির সন্তানটির পড়ার জন্যও সময় বরাদ্দ রয়েছে। আগে থেকে সেই সময় অনুযায়ী নির্দেশনা দেয়া থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে সময় ইন্টারনেট সংযোগ শিশুদের জন্য বিচ্ছিন্ন থাকবে। চাইলেও ওই সময় ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া যাবেনা।
আম্বার আইটি লিমিটেডের এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তাদের প্রতিষ্ঠান পৃথক কোন হার্ডওয়্যার সরবরাহ করছে না। ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার সময় একটি প্যানেল তৈরি করে দিচ্ছে। সেই প্যানেলে লগ ইন করে গ্রাহক কী চান আর কী চান না তা নির্ধারন করে দিতে পারছেন। ফলে একজন বাবা-মা জানেন তার সন্তান কি দেখছে। এখন কাজ সেরে বাসায় ফিরে তারা মনিটর করতে পারছেন-তার সন্তান কোন কোন সাইটে গিয়েছে ইউটিউবে কী দেখেছে।
মোবাইল অপারেটরগুলো প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেবাদানে পিছিয়ে রয়েছে। মোবাইল অপরাটের রবি কিছু দিন আগে এই সেবা চালু করলেও এখন বন্ধ রেখেছে। অন্য অপারেটরগুলো এ ব্যপারে এখনো উদ্যোগী হয়নি বলে জানা গেছে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/এসডিজি/আহো/০৯০০/এবিএইচ/এসএইচ