কক্সবাজার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে রিমান্ড শেষে আজ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষিকে তৃতীয় বারের মত আবারও আজ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে র্যাবের একটি দল প্রদীপকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে তাকে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন আদালত। এরআগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকেল ৪ টার দিকে আদালত চত্বর থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা কারাগারে। সোমবার চতুর্থ দফায় তাঁকে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পরও সাবেক ওসি প্রদীপ স্বীকারোক্তি দেয়নি। ১৫ দিনের পর আর রিমান্ড চাওয়ার আইনগত সুযোগ নেই। তাই নিয়ম মতে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বীকারোক্তি না দিলেও ওসি প্রদীপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তার দেয়া এসব তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ করা হবে।
মামলার প্রধান আসামি এসআই লিয়াকত ও এএসআই নন্দ দুলাল এবং এপিবিএন’র তিন সদস্য এই পর্যন্ত ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষিকে তৃতীয় বারের মত আবারও তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এই আসামিদের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ’র আদালতে হাজির করে আরও চার দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানী শেষে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকার নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দীন ও মোহাম্মদ আইয়াস। সিনহা হত্যা ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে র্যাব টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকা থেকে গত ৯ আগস্ট তাদের গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সম্পর্কে অধিকতর তথ্য যাচাইয়ের জন্য এই তিন আসামিকে আবারও রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। অন্য আসামীদের দেয়া কিছু তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে আসামি ওসি প্রদীপকে বুধবার জেল গেটে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আসামি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে সাক্ষাত না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হয়নি। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। বুধবার কারাগারে গিয়ে প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তদন্ত কমিটি।’
তিনি বলেন, তদন্তে যে তথ্য পাওয়া যাবে তা বিশ্লেষন করতে দু’এক দিন সময় লাগবে। আশা করছি বর্ধিত সময় আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের পুর্বেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।
এদিকে গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলায় পুলিশের ৯ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, এপিবিএনের তিন সদস্য ও পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।