বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় কিস্তি) : ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কারবালার বিয়োগান্তক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে : প্রধানমন্ত্রী

187

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় কিস্তি)
শেখ হাসিনা-আশুরা
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কারবালার বিয়োগান্তক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনী ফারুক, রশিদ, নূর, হুদা, শাহরিয়ার, মোসলেউদ্দিন, রাশেদ, পাশা, খায়রুজ্জামান এবং এরকম আরো কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমি জানি না জাতির পিতাকে হত্যা করে তারা (হত্যাকারীরা) কি জঘন্য আনন্দ পেয়েছে… এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তারা কি পেয়েছে এবং কার কাছ থেকে তারা এত বড় সাহস পেয়েছে?
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা আরও প্রশ্ন করেন, জাতির পিতার অপরাধ কি ছিল?
তিনি বলেন, এটাই কি তার অপরাধ ছিল যে, তিনি একটি জাতির স্বাধীনতা নিয়ে এসেছিলেন এবং আত্মপরিচয় লাভের সুযোগ দিয়েছিলেন। এটাই কি তার অপরাধ ছিল, তিনি জনগণকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং একটি উন্নত জীবন উপহার দিতে চেয়েছিলেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান নামে রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপক অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) সংগ্রাম করেছেন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেখা গেলো যে, বাঙালিরা শোষিত ও বঞ্চিত হচ্ছে এবং তিনি বাঙালিদের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত করার জন্য সংগ্রাম শুরু করেন এবং এই সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৪৮ সালে যখন আমাদের মাতৃভাষা ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বারবার জেলে গেছেন। কেন তিনি তার জীবনে এতো আত্মত্যাগ করেছেন? এই আত্মত্যাগ ছিল শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণের জন্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী সংগ্রাম করেছেন এবং তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেন, তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, কিন্তু তারা মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি এবং তারা একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এই লক্ষ্য অর্জন করতে একটি পরিকল্পিত উপায়ে প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি ধাপে ধাপে এগিয়ে গেছেন এবং বারবার বাঙালিদের দাবি উত্থাপন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, কিন্তু তিনি নিজের দিকে তাকাননি বা নীতি ও আদর্শের সঙ্গে আপোস করেননি। কারণ তিনি জনগণ ও তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছেন এবং এই দাবি স্বাধীনতাপ্রেমী জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে, ছয় দফা দাবিতে তাদের স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সেই মূহুর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন যখন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বাঙালিদের উপর হামলা শুরু করেছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতিকে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার উপায় সম্পর্কে নির্দেশনা দেন এবং বাঙ্গালী জাতি এসব নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল।
শেখ হাসিনা স্মরণ করেন, জাতির পিতা যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি বলেন, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে এবং তাকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানে কারাগারে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু যে বেদনা ও কষ্ট পেয়েছিলেন সেবিষয়ে তিনি সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট ছাড়া আর কারো সঙ্গে কথা বলেননি।
তিনি (বঙ্গবন্ধু) একটি সাক্ষাৎকারে ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে কিছু কথা বলেছিলেন এবং আমরা তার কাছ থেকে (ফ্রস্ট) জেনেছিলাম যে, বঙ্গবন্ধুর পিঠে এবং মাথা থেকে পা পর্যন্ত রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল।
চলবে/বাসস/এসএইচ/এসই/১৯২৪/-শআ