পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে কার্যকর উপায় কমিউনিটি ভিত্তিক ডে-কেয়ার

1609

ঢাকা, ৩০ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামে এ বছর বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন কারনে ২২ জন লোক মারা গেছে, যার মধ্যে ১৭ জনই শিশু। মৃত্যুর হারের দিক থেকে যা শতকরা ৮০ শতাংশ।
গত কয়েক বছরে পানিতে পড়ে অথবা পানিবাহিত রোগে শিশু মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়ে চলেছে যা সত্যিই দুঃখজনক।
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি উপজেলার রমনা ইউনিয়নের বসবাসকারী রাফিজা বেগম (ছদ্মনাম) সম্প্রতি তার শিশুকে হারিয়েছেন। এ বছর বন্যার কারনে বসত ভিটা ছেড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি ওয়াপদা বেড়িবাধে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। একদিন তিনি তার কোলের শিশুকে সাথে নিয়ে রান্না করছিলেন। সে সময় তার দশ বছরের কন্যা শিশু বাধের উপর খেলছিল। খেলাধুলার এক পর্যায়ে বাচ্চাটি নদীর পানিতে পড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ওই শিশু সন্তানের লাশ নদী থেকে উদ্ধার করে।
বন্যা কবলিত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা হরহামেশায়ই ঘটছে। মূলত বন্যার কারনে অনেক পরিবার বসত-ভিটা ফেলে রাস্তায় অথবা বেড়িবাধে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। পরিবারের সব কিছু ফেলে তারা আশ্রয় নিচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জনের অফিস সূত্রে জানা যায়, মৃত ২২ জনের মধ্যে ১৭ জনই শিশু যা মৃত্যুহারের দিক থেকে শতকরা ৮০ শতাংশ।
যদিও অন্য বন্যা কবলিত এলাকায় শিশু মৃত্যুর সঠিক কোন তথ্য নেই, তবুও ধারনা করা হচ্ছে প্রায় সব এলাকার চিত্র প্রায় একই ধরনের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যে ক’টি দেশে শিশু মৃত্যুর হার বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। মূলত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যায়ই বেশি।
গত ১১ মে প্রকাশিত জন হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্স ইউনিটের এক গবেষনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে পানিতে ডুবে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুহার প্রায় ৪২ শতাংশ।
ব্লুমবার্গ স্কুলের ইন্টারন্যাশনাল হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং এই গবেষনার প্রধান লেখক ওলাকুনলে আলোঙ্গে বলেন, এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুর মধ্যে প্রতি ঘন্টায় প্রায় দু’জন শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে। এ সব অঞ্চলে পানিতে ডুবে মৃত্যুহার কমাতে কমিউনিটি-ভিত্তিক ডে-কেয়ার খুব কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মত দেন।
সমীক্ষায় দেশে ৩২০০টি ডে-কেয়ার স্থাপন করা হয় এবং ৬৪,০০০ শিশুর উপর গবেষনা পরিচালিত হয়। সমীক্ষায় বলা হয় বাংলাদেশের একেবারে গ্রামীণ এলাকায় কমিউনিটির নেতৃত্বে যদি ডে-কেয়ার স্থাপন করা যায়,তবে নয় থেকে ৪৭ মাস বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রায় ৮৮ শতাংশ কমে যাবে।
পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সব খবর কিন্তু প্রকাশ হয় না। বিশেষ করে বড় কোন দুর্যোগের সময় যেমন বন্যা। মূলত, বেশির ভাগ দূর্ঘটনা ঘটে যখন শিশুরা একলা খেলে অথবা তাদের সম বয়সী অন্যদের সাথে খেলে যাদের উদ্ধার করার মত সামর্থ্য থাকে না।
ইউনিসেফের প্রোজেক্ট অফিসার সুমনা শাহফিনাজ বলেন, মায়েরা অনেক সময় তাদের সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকে। হয়ত তাদের একাধিক সন্তান রয়েছে। একজনের দিকে নজর দেওয়ার সময় অন্য আরেকজন নজরের বাইরে থাকে। আর তখনই ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা। মূলত পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনায় দেখা যায়, হয়তো মা পারিবারিক কোন কাজে ব্যস্ত ছিল। অথবা কাজের জন্য বাইরে ছিল।
কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক রেজাউল করীম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই অঞ্চলের বন্যা কবলিত এলাকায় শিশুদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মূলত পর্যাপ্ত নজরদারীর অভাবে শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। যদি পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিত তবে এই মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হত।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ জনপ্রতিনিধিরা সাধারন মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।