বাসস-ইউনিসেফ ফিচার-৩ : ডায়রিয়া প্রতিরোধ করুন, সুস্থ থাকুন

118

বাসস-ইউনিসেফ ফিচার-৩
ডায়রিয়া-প্রতিরোধ
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করুন, সুস্থ থাকুন
ঢাকা, ২৯ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : এক সময় এদেশে ডায়রিয়া মহামারি আকারে দেখা দিত। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম মানুষ মারাও যেত। এখন আর সেদিন নেই। খাবার স্যালাইনের মাধ্যমে এই রোগ দমনের ব্যাপারে ব্যাপক গণসচেতনতার কারণে ডায়রিয়া এখন আর মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে না। ডায়রিয়া পীড়িত এলাকায় আইসিডিডিআরবি’র আবিস্কৃত খাবার স্যালাইন বহু মানুষের জীবন রক্ষা করে চলেছে। এর মধ্যে শিশুরা উল্লেখযোগ্য।
এখন দেশের বেশির ভাগ জেলাতেই বন্যার পানিতে ভরে গেছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেই দেখা যাবে পানি বাহিত অনেক রোগ। বন্যা ও বর্ষণজনিত রোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বর্তমান মৌসুমে আমাদের দেশে সাধারণত তিন মাস থেকে ১২ বছরের শিশুরা ডায়রিয়া, কলেরা, জ্বর, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। কারণ, একদিকে আবহাওয়ার পরিবর্তন, অন্যদিকে অপ্রত্যাশিত বন্যা ও বর্ষণ।
নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকদের মধ্যে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে গরিব মা-বাবা শিশুদের প্রতি যতেœ দায়িত্বশীল হতে পারেন না বা সঠিক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করতে পারে না। ফলে, অনেক শিশু অকালেই মারা যায়।
সম্প্রতি গরমের কারণে রাজধানী ও এর আশপাশে ডায়রিয়র প্রকোপ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি)-র ঢাকাস্থ হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির হার বেশ বেড়েছে। ডাক্তারদের মতে, সারা বছর ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে, গত কয়েকদিনে গরম আবহাওয়ার কারণে রোগীর সংখ্যাও অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগীদের ৪০ শতাংশ শিশু। এদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কলেরার রোগী রয়েছে। ঢাকার বাইরের অনেক জেলায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হাত না ধুয়ে কোনো কিছু খেলে বা বাসি, পঁচা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হতে পারে। অনেকেই ওয়াসার সরবরাহকৃত লাইনের পানি পান করে। পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু বেশি ছড়ায়। তাই, পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে নিরাপদ। আবার কেউ কেউ রাস্তাঘাটে খোলা খাবার এবং শরবত খেয়েও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বারবার পাতলা পায়খানা হলে, বমি হলে, ঝুঁকি না নিয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীকে ভর্তি হতে হবে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বার বার পাতলা পায়খানা করার ফলে শরীর থেকে পানি ও লবন বেড়িয়ে যায়। এর ফলে, রোগী পানি শূন্য হয়ে পড়ে। সে কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া শুরু হলে আধা সের/লিটার বিশুদ্ধ পানিতে এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন ভালোভাবে গুলিয়ে রোগীকে খাওয়াতে হবে। রোগীর যতবার পাতলা পায়খানা হবে ততবারই খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যে কোন ঔষধ এবং পানের দোকানেও আজকাল খাবার স্যালাইনের প্যাকেট পাওয়া যায়। একবার বানানো খাবার স্যালাইন ৬ (ছয়) ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়। এরপর প্রয়োজন হলে আবার নতুন করে খাবার স্যালাইন বানাতে হবে।
শিশুর ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ বেশি করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া, বড়দের স্বাভাবিক সবধরণের খাবার খাওয়াতে হবে। তবে, তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ভাতের মাড়, ডাবের পানি, চিড়ার পানি, লবন-গুড়ের শরবত, খাবার স্যালাইন, বিশুদ্ধ খাবার পানি খাওয়াতে হবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে রোগীদের বিশেষভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ডায়রিয়া একটি সাধারণ রোগ। আজকাল ডায়রিয়া বা কলেরায় মৃত্যুর হার খুবই কম হয়। কিন্তু আক্রান্ত হলে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেই সঙ্গে কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই, সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমেরও উচিত ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং টাটকা খাবার খেতে হবে। পঁচা ও বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। বাজারের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। এ সময় শিশু ও বৃদ্ধদের আটসাট পোশাক না পরে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। পোশাক সুতির হলে বেশি ভালো হয়। মনে রাখতে হবে ’প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’। তাই, আমাদের রোগের চিকিৎসার চেয়ে তা প্রতিরোধের উপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/মোহার/আহো/১৮০৯/আরজি/এসএইচ