বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : ‘গিগস’-এ স্বাবলম্বী ফ্রিল্যান্সার মৌরি

146

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
ফ্রিল্যান্সিং-স্বাবলম্বী
‘গিগস’-এ স্বাবলম্বী ফ্রিল্যান্সার মৌরি
ঢাকা, ২৩ আগস্ট, ২০২০ (বাসস): চাকরি আর সংসার নিয়ে ভালোই চলছিল মৌরীর। পুরো নাম মোরশেদা মৌরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এবং এমবিএ শেষ করে অন্য অনেকের মত চাকরী জীবন শুরু করেন তিনি। কিন্তু সন্তান হওয়ার পর থেকে ভালোভাবে চাকরি করতে পারছিলেন না। মন পড়ে থাকত সন্তানের দিকে। আবার সারাদিন অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে হতো ক্লান্ত হয়ে। এরপর আছে রান্নাবান্নাসহ সংসারের আরো ব্যস্ততা। এভাবে কিছুদিন চলার পর সিদ্ধান্ত নিলেন- আগে সন্তানের দেখভাল। তারপর অন্য কিছু। স্বামীর সাথে পরামর্শ করে ছেড়ে দিলেন চাকরি।
সন্তান যখন একটু বড় হল তখন আবার চাকরির চিন্তা-ভাবনা শুরু করল। কিন্তু মন মানছিল না। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলেন ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করবেন। আগে থেকেই জানা ছিল আইটি বিষয়ক ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ। তাই বাসায় বসেই অর্থ উপার্জনের পথ বেছে নিলেন।
মৌরী বলেন, কিছুদিন এ কাজ করার পর ভেবে দেখলাম অন্য নারীদেরও আমি এই ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখাবো। তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই খুলে ফেললাম ‘গিগস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুধুমাত্র নারীদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করি।
তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক মাসের বেসিক কোর্স করাই। এছাড়াও দুই বা তিন মাস মেয়াদী এডভান্স কোর্সও করাই। মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিংসহ সব মিলিয়ে কম্পিউটার বিষয়ে ১২টি কোর্স করাই। প্রথমে আমি পরিচিত গন্ডির মাধ্যমে এ কাজ শুরু করি। সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিই। সেই পোস্ট দেখেই অনেকে যোগাযোগ করে। শুরুর দিকে আমি নিজেই প্রশিক্ষণ দিতাম। পরে প্রশিক্ষণার্থী বেড়ে যাওয়ায় প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। এখন পাঁচজন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। মূলত অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ফলে যে কেউ তার নিজের সুবিধা অনুযায়ী ক্লাস করতে পারে।
তিনি বলেন, প্রতি মাসেই এখান থেকে আমার ভালো একটি আয় হচ্ছে। সব খরচ বাদ দিয়ে এবং প্রশিক্ষকের সম্মানী দিয়ে এখন প্রতি মাসে আমার ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার থাকে। আবার যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা কোর্স শেষ হওয়ার পর নিজেরা কাজ শুরু করছে। তাদের আয়ও ভালো হচ্ছে।
মৌরী বলেন, আমার এখানে অনেক কম অর্থে মেয়েরা প্রশিক্ষণ নিতে পারে। মূলত মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতেই এই প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতেই আমার এ প্রচেষ্টা। আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যতটুকু সম্ভব, করার চেষ্টা করছি। তারাও উপকৃত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার ইচ্ছে আছে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কিছু করা। তাদেরকে যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারি তবেই আমার এ কাজের সার্থকতা।
শুধু মৌরি একা নন ইচ্ছে করলে ঘরে বসে এভাবে অনেক নারীই হতে পারেন নিজে স্বাবলম্বী, হতে পারেন উদ্যক্তা। আবার অন্য নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করতে পারেন। বিশেষ করে পড়াশোনা শেষ করার পর মেয়েরা যদি এভাবে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তুরতে পারে তবে দেশ, সমাজ তথা দেশের অর্থনীতিতে রাখতে পারে অবদান।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/আহো/১৩০০/-স্বব