দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমেছে, বেড়েছে সুস্থতা

311

ঢাকা, ২১ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৬৭তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে সংক্রমণের হার কমেছে। পাশাপাশি সুস্থতার হার বেড়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৯৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৪০১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৪৬৭ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৪ হাজার ৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৮৬৮ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম।
দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ২০ হাজার ৪৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৬০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৬২৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৩৭১ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিল ৩ হাজার ২৫৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১৫ জন।
আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ২ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪১ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৮৬১ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ১৯ আগস্ট থেকে মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ১৫৫ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ১৭৬ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ২১টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৯১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৩ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ৫৯ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ১১৬টি বেশি কম পরীক্ষা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৩৯ জনের মধ্যে পুরুষ ২৭ জন এবং নারী ১২ জন। এখন পর্যন্ত মোট পুরুষ মারা গেছেন ৩ হাজার ৪৬ জন; যা ৭৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আর নারী মারা গেছেন ৮১৫ জন; যা ২১ দশমিক ১১ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৬ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সের মধ্যে রয়েছেন ২৫ জন।
এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর শতকরা হারে দেখা গেছে, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৯ জন, যা শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩৫ জন, যা শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯৪ জন, যা ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২৪৩ জন, যা ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫১৬ জন, যা ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ৮১ জন, যা ২৮ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী মারা গেছেন ১ হাজার ৮৭৩ জন; যা ৪৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ২৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ৩ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ১ হাজার ৮৫৪ জন; যা ৪৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৬৩ জন; যা ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ২৫১ জন; যা ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ৩১৬ জন; যা ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ১৫১ জন; যা ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ১৮৩ জন; যা ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ১৬০ জন; যা ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৩ জন; যা ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৫৮০ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ২৯৫ জন। আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৫৭৬ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৩২১ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৬১৬ জনকে।
প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৩৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৫২ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৮১ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৩ হাজার ৭২৯ জন।
ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৩৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২৪৩ জন ও শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৭৯৪টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩০৭টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি রোগী আছে ২১৫ জন ও শয্যা খালি আছে ৯২টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭৮২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৩২ জন ও শয্যা খালি আছে ৫৫০টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২২ জন ও শয্যা খালি আছে ১৭টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৪৩৬টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮১৪ জন ও শয্যা খালি আছে ৫ হাজার ৬২২টি এবং আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৯টি ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১০৫ জন ও শয্যা খালি আছে ৯৪টি । সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৫৫টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ২৮৯ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৯৬৬টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৪৫টি, রোগী ভর্তি আছে ৩৪২ জন এবং খালি আছে ২০৩টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫৮৩টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৪১৩টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৭৬টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে। এছাড়া www.dghs.gov.bd এর CORONA কর্ণারে “করোনা বিষয়ক অভিযোগ প্রেরণ” লিঙ্ক অথবা http:/app.dghs.gov.bd/covid19-complain লিঙ্ক ব্যবহার করে করোনা বিষয়ক যেকোন অভিযোগ পাঠানো যাবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার সংখ্যা, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৭৬৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭২১ জন, রংপুর বিভাগে ১৬৪ জন, খুলনা বিভাগে ১৯১ জন, বরিশাল বিভাগে ১০৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৬৬ জন, সিলেট বিভাগে ৪৮২ জন এবং ময়মনসিংহে ২৯ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৩৫৮টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৪০ হাজারটি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫, এই নম্বরে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ২১২টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৭০টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১২টি।
করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ২৬৩ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৭১৯ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৪ হাজার ৯৭০ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ লাখ ৮ হাজার ৯৮৭ জন এবং এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৪ হাজার ২১২ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার ২২০ এবং এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৫৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।