লিঁওকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে দূরন্ত বায়ার্ন

271

লিসবন, ২০ আগস্ট ২০২০ (বাসস) : ফরাসি ক্লাব লিঁওকে কঠিন এক শিক্ষা দিয়ে লিসবনে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে ৩-০ গেলে জয়ী হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। আগামী রোববার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ আরেক ফরাসি চ্যাম্পিয়ন প্যারিস সেইন্ট-জার্মেই(পিএসজি)। ম্যাচের প্রথমার্ধে দুই গোল করেছেন জার্মান তারকা সার্জি গ্যানাব্রি। ম্যাচ শেষের দুই মিনিট আগে বায়ার্নের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন রবার্ট লিওয়ানদোস্কি।
এস্তাদিও হোসে আলভালদেতে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যাবার দুটি দারুন সুযোগ হাত ছাড়া করার খেসারত দিতে হয়েছে লিঁওকে। মেমফিস ডিপে এবং কার্ল টোকো-একাম্বির হাত ধরে শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারতো লিঁও। কিন্তু এই সুযোগ নষ্ট করার মিনিট খানেকের মধ্যে গ্যানাব্রি দারুন এক শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে ফরাসি ক্লাবটিকে। ম্যাচের ১৮ মিনিটে একক দক্ষতায় চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বায়ার্নকে এগিয়ে দেন গ্যানাব্রি। ৩৩ মিনিটে এই জার্মান উইঙ্গার ব্যবধান দ্বিগুন করেন। গ্রুপ পর্বে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে ৭-২ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে চার গোল করেছিলেন গ্যানাব্রি। এবারের আসরে এই নিয়ে নয় ম্যাচে ৯টি গোল করলেন এই জার্মান মিডফিল্ডার। ম্যাচ শেষের দুই মিনিট আগে মৌসুমের ৫৫তম গোলটি করেন পোলিশ ফরোয়ার্ড লিওয়ানদোস্কি।
এ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি আসরে ১০ ম্যাচে সর্বমোট ৪২ গোল করলো বেভারিয়ান্সরা। এর মধ্যে বার্সেলোনা বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ৮-২ গোলের উড়ন্ত জয়ের ম্যাচটি দীর্ঘদিন সমর্থকদের মনে গেঁথে থাকবে।
ম্যাচ শেষে বায়ার্ন কোচ হান্সি ফ্লিক বলেছেন, ‘আমরা জানতাম এই ম্যাচটা বেশ কঠিন হবে। প্রথমে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা হলেও ভাগ্যের প্রয়োজন ছিল। মূলত সার্জিই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে।’
এবারের মৌসুমে বায়ার্ন তাদের সবগুলো ইউরোপীয়ান ম্যাচে জয়ী হয়েছে। কিন্তু এই পরিসংখ্যান হাই ভোল্টেজ ফাইনালে পিএসজির বিপক্ষে যে খুব একটা কাজে আসবে না তা সহজেই অনুমেয়। দুর্দান্ত এক ফাইনালের অপেক্ষা করতেই পারে বায়ার্ন-পিএসজিসহ পুরো বিশে^র ফুটবল সমর্থকরা। যদিও পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যে কারনে সমর্থকদের অনুপস্থিতি অবশ্যই দুই শিবিরেই অনুভূত হবে।
ফরাসি মৌসুমে সপ্তম স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছে লিঁও। করোনাভাইরাসের কারনে একটু আগে ভাগেই লিগ ওয়ান মৌসুম শেষের ঘোষনা দেয়া হয়। লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি আরেক সেমিফাইনালে জার্মান ক্লাব আরবি লিপজিগতে ৩-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেছে।
বায়ার্নের কানাডিয়ান মিডফিল্ডার আলফোনসো ডেভিস বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে স্বপ্ন সত্যি হবার মতই ঘটনা। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা এবং পরবর্তীতে ফাইনালে উন্নীত হওয়া, এর থেকে একটি খেলোয়াড়ের বড় প্রাপ্তি আর কিছুই হতে পারেনা। এটাই আমার কাছে সবকিছু।’
ষষ্ঠ ইউরোপীয়ান কাপ জয়ের লক্ষ্যে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা মাঠে নামবে। সর্বশেষ সাত বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছিল বায়ার্ন। এই নিয়ে ১১তম ফাইনালে উঠলেও এই প্রথম পিএসজির মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
এদিকে দ্বিতীয়বারের মত সেমিফাইনালে খেলা লিঁওর জন্য পরাজয়টা ছিল দারুন হতাশার। ২০১০ সালে প্রথমবার সেমিফাইনালেও বায়ার্নের কাছে পরাজিত হয়েই বিদায় নিতে হয়েছিল লিঁওকে। অথচ রুডি গার্সিয়ার দল নক আউট পর্বে জুভেন্টাস ও ম্যানচেস্টার সিটির মত জায়ান্টদের বিদায় করে দিয়েই শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছিল। এখন নতুন লিগ ওয়ান মৌসুমে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই হবে লিঁওর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে একটি বিষয় তাদের জন্য দারুন হতাশার। ২৪ বছর পর এই প্রথমবারের মত ২০২০/২১ মৌসুমে ইউরোপীয়ান ফুটবলে খেলতে পারবে না লিঁও। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয়ী হতে পারলেই কেবল তাদের সামনে সুযোগ ছিল পুনরায় এই আসরে ফিরে আসার। সেমিফাইনালে দুটি সুযোগের অন্তত একটিও যদি শুরুতেই কাজে লাগাতে পারতো ম্যাচের ভাগ্য হয়ত পরিবর্তিত হতেও পারতো।
ক্যামেরুনের ইন-ফর্ম ফরোয়ার্ড টোকো একাম্বি বলেছেন, ‘বায়ার্নকে অভিনন্দন। আমি তাদেরকে অপরাজেয় মনে করিনা। আমাদেরও গোলের ভাল সুযোগ এসেছিল। সব মিলিয়ে আমরা ভাল খেলেছি।’
ম্যাচের শুরুতে বায়ার্ন বেশ ঝুঁকি নিয়ে খেলা শুরু করেছিল। প্রতিপক্ষকে সামনে রেখে তারা কিছুটা পিছনে নেমে রক্ষনাত্মক কৌশল অবলম্বন করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় চার মিনিটে প্রথম সুযোগটি পায় লিঁও। থিয়াগো আলচানতারার পাস কেড়ে নিয়ে ম্যাকেন্সে ক্যাকুরেট ডিপের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। ম্যানুয়েল নয়্যারকে পাশ কাটিয়ে তার কার্লিং শট জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। ১৩ মিনিট পরেই লিঁও ডুবোয়িসের পাস থেকে টোকো-একাম্বি দুইবারের প্রচেষ্টার গোল করতে ব্যর্থ হন। এর ৪৯ সেকেন্ডের মধ্যেই লিঁও পিছিয়ে পড়ে। মধ্যমাঠ থেকে জসুয়া কিমিচের বাড়নো পাসে ডানদিক থেকে গ্যানাব্রি একাই বল নিয়ে চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকে তার বা পায়ের জোড়ালা শটটি আটকাতে পারেননি এ্যান্থনি লোপেজ। এরপরই ম্যাচের চেহারা পাল্টে যায়। ৩৩ মিনিটে ইভান পেরিসিচের লো ক্রসে লিওয়ানদোস্কির শট লোপেজ আটকের দিলেও ফিরতি বলে গ্যানাব্রি ব্যবধান দ্বিগুন করেন।
বদলী খেলোয়াড় ফিলিপ কুটিনহোর একটি গোল অফ-সাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। ৮৮ মিনিটে কিমিচের ফ্রি-কিক থেকে হেডের সাহায্যে দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন লিওয়ানদোস্কি।
এনিয়ে টানা ২০টি ম্যাচে জয় তুলে নেবার পাশাপাশি টানা ২৯টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে বায়ার্ন। ডিসেম্বর থেকে বায়ার্নের এই যাত্রা শুরু হয়েছে। এর কয়েক সপ্তাহ আগে ফর্মহীনতার কারনে তারা কোচ নিকো কোভাচকে বরখাস্ত করেছিল। ফ্লিকের অধীনে বদলে যাওয়া বায়ার্ন এখন মৌসুমের সবচেয়ে বড় শিরোপাটি থেকে আর মাত্র এক ম্যাচ দুরে অবস্থান করছে।