দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমেছে, বেড়েছে সুস্থতা

425

ঢাকা, ১৯ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৬৫তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে সংক্রমণের হার কমেছে। পাশাপাশি বেড়েছে সুস্থতার হার।
গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ৬৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৭৪৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৪১৩ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৪ হাজার ৬৩০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ২০০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।
দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৯১৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৮ জন।
আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ৫ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪৬ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৭৮১ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৪ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৩৫ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৩৬১টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৯১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৭৮ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ৬৩০ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৪৮টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের ৩৪ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৮৭ জন পুরুষ; যা ৭৯ শতাংশ এবং ৭৯৪ জন নারী মারা গেছেন; যা শতকরা ২১ শতাংশ। ২৪ ঘন্টায় ৩৮ জন হাসপাতালে এবং বাড়িতে ৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব ২৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন ও ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। বয়সের হিসেবে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়াদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে রয়েছে ১৯ জন; যা দশমিক ৫০ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩৫ জন; যা দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯২ জন; যা ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২৩৮ জন; যা ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫১১ জন; যা ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ৬৮ জন; যা ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে রয়েছেন ১ হাজার ৮১৮ জন; যা ৪৮ দশমিক ০৮ শতাংশ।
বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২১, চট্টগ্রামে ৩, রাজশাহীতে ৩, খুলনায় ৭, বরিশালে ৩, রংপুরে ৩ এবং ময়মনসিংহে ১ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ১ হাজার ৮১২ জন; যা ৪৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৫০ জন; যা ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ২৫০ জন; যা ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ৩০৯ জন; যা ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ১৪৭ জন; যা ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ১৭৪ জন; যা ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ১৫৭ জন; যা ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৮২ জন; যা ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৩৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২০ হাজার ২৮০ জন। আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘন্টায় ৭৫৫ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৯৯০ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৬৪ হাজার ২৭০ জনকে।
প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘন্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৪৭ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৮৬ জন এবং এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ২০ হাজার ২৮৯ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪২ জনকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৩ হাজার ৪৫৩ জন।
ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৩৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২৩০ জন ও শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৮০৭টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩০৬টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি রোগী আছে ২১৩ জন ও শয্যা খালি আছে ৯৩টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭৮২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৫১ জন ও শয্যা খালি আছে ৫৩১টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি আছে ২২ জন ও শয্যা খালি আছে ১৭টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৪৩৬টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮০৭ জন ও শয্যা খালি আছে ৫ হাজার ৬২৯টি এবং আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৯টি ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯১ জন ও শয্যা খালি আছে ১০৮টি । সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৫৫টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ২৮৮ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৯৬৭টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৪৪টি, রোগী ভর্তি আছে ৩২৬ জন এবং খালি আছে ২১৮টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫৬৩টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৪১১টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৬০টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে। এছাড়া www.dghs.gov.bd এর CORONA কর্ণারে “করোনা বিষয়ক অভিযোগ প্রেরণ” লিঙ্ক অথবা http:/app.dghs.gov.bd/covid19-complain লিঙ্ক ব্যবহার করে করোনা বিষয়ক যেকোন অভিযোগ পাঠানো যাবে।
গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থতার সংখ্যা, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ১৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩৭ জন, রংপুর বিভাগে ২৫৪ জন, খুলনা বিভাগে ৩৬১ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬০ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩৭ জন, সিলেট বিভাগে ২৭৯ জন এবং ময়মনসিংহে ৩০ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮৮টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৫৪৮টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫, এই নম্বরে ফোন এসেছে ২৭৫টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৪১১টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৯১ লাখ ১১ হাজার ৭০৯টি।
করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৯১ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ২ লাখ ২০ হাজার ৬৯ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৩ হাজার ৫৬৭ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৮ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ২৩৩ জন এবং এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৬১ হাজার ৯০৩ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৮ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫৭ এবং এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৭১ হাজার ৬৩৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।