প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পিএসজি

250

লিসবন, ১৯ আগস্ট ২০২০ (বাসস) : একপেশে সেমিফাইনালে জার্মানির আরবি লিপজিগকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে (প্যারিস সেন্ট জার্মেই)পিএসজি। লিসবনে অনুষ্ঠিত দর্শকশুন্য ম্যাচে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের হয়ে গোল তিনটি করেছেন মারকুইনহোস, এ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া ও হুয়ান বার্নাট।
প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল পিএসজি। আর এই দুই গোলেরই যোগানদাতা ছিলেন নেইমার। লিসবনের এস্তাদিও দা লুজে আরো একবার নিজেকে সামনে থেকে প্রমান করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। গত সপ্তাহে আটালান্টার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে যেভাবে পিএসজির জয়ে সহায়তা করেছিলেন কালও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। ৫৫ মিনিটে বার্নাটের গোলে পিএসজির জয় নিশ্চিত হবার পাশাপাশি লিপজিগের স্বপ্নভঙ্গ হয়। পুরো ম্যাচে জার্মানির দলটি কোনভাবেই বিশে^র সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়কে রুখতে পারেননি। নেইমার ছাড়াও পিএসজির প্রায় সব খেলোয়াড়রাই কাল ছিল অপ্রতিরোধ্য। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে অতীত ব্যর্থতাকে পাশ কাটিয়ে প্রথমবারের মত ফাইনাল নিশ্চিত করার পথে যোগ্য দল হিসেবেই টিকে রয়েছে পিএসজি।
২০১৭ সালে বার্সেলোনার কাছে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত হবার তিক্ত অভিজ্ঞতা এখনো মনে রেখেছে ফরাসি সমর্থকরা। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয়ান আসরের অভিজ্ঞতাও খুব একটা মধুর নয়। গত বছর শেষ ১৬’র লড়াইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটির জন্য মালিকপক্ষ এতদিন যা করে এসেছে সেই আস্থার প্রতিদানই যেন শেষ পর্যন্ত পেল।
২০০৪ সালে শুরু হওয়া ইউরোপের এলিট ক্লাব প্রতিযোগিতায় মোনাকোর পর প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠলো থমাস টাচেলের দল। নয় বছর আগে লিগ ওয়ানের মধ্য সারির একটি দলের মালিকানা নেবার পর কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টের অধীনে গত বেশ কয়েক বছর যাবতই ফ্রান্সের এক নম্বর দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে পিএসজি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের থেকে এখন তারা মাত্র এক ম্যাচ দুরে রয়েছে, যে শিরোপাটি সত্যিকার অর্থেই বিশে^র যেকোন ক্লাবের জন্য একটি স্বপ্নের শিরোপা।
করোনভাইরাসের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ ফুটবলের ২০১৯-২০ মৌসুম শেষ করার লক্ষ্যে লিসবনে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সবগুলো ম্যাচ সিঙ্গেল লেগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। যে কারনে বদলে যাওয়া ফর্মেটে প্রতিটি দলকেই বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। কোন ধরনের ভুলের সুযোগ এখানে নেই। তার উপর সমর্থকদের অভাব তো রয়েছেই। সব ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে যারা জয় করতে পারবে তারাই সামনে এগিয়ে যাবে। পুরো ৯০ মিনিট লড়াই করার মানসিকতা নিয়েই এই ধরনের ম্যাচে মাঠে নামতে হবে।
কিন্তু কালকের ম্যাচটিতে কোন দিক থেকেই পিএজির সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি লিপজিগ। জুলিয়ান নাগেলসম্যানের তরুণ্য নির্ভর দলটি এই প্রথমবারের মত কোন ইউরোপীয়ান আসরের সেমিফাইনালে পা রেখেছিল। মূল দলের সাতজন খেলোয়াড়ই ছিলেন ২১ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। ফাইনাল এইট শুরু হবার আগে দলের মূল তারকা টিমো ওয়ার্নারকে চেলসির কাছে বিক্রি করার খেসারতই যেন দিতে হলো লিপজিগকে।
১৩ মিনিটে এগিয়ে যাবার আগে নেইমারের শট পোস্টে লাগলে হতাশ হতে হয়েছিল পিএসজিকে। বক্সের ঠিক বাইরে নেইমার ফ্রি-কিক আদায় করে নেন। ডি মারিয়ার নেয়া ফ্রি-কিকে মারকুইনহোস ১৩ মিনিটে পিএসজিকে এগিয়ে দেন। টাচেলের দলে মূলত মিডফিল্ডার হিসেবেই খেলে থাকেন এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। ম্যাচে তিনি খুব একটা গোল পাননা। কিন্তু আটালান্টার বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে তিনি পিএসজির হয়ে সমতা ফিরিয়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞার কারনে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা হয়নি ডি মারিয়ার। হাঁটুর ইনজুরি কাটিয়ে মূল একাদশে আরো ফিরেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তিন জনের আক্রমনভাগে এমবাপ্পে,নেইমার ও মাউরো ইকার্দির সাথে যোগ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে ইনজুরি আক্রান্ত গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের পরিবর্তে খেরতে নামা সার্জিও রিকোকে খুব কমই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ফ্রি-কিক থেকে নেইমার প্রায় গোল করেই বসেছিলেন। কিন্তু আবারো তার শটটি পোস্টে লেগে ফেরত আসে। বিরতির আগে লিপজিগের গোলরক্ষক পিটার গুলাসি পিএসজিকে দ্বিতীয় গোল উপহার দেন। তার বাজে একটি পাস থেকে নেইমারের ফ্লিকে ডি মারিয়া ব্যবধান দ্বিগুন করেন।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে মূলত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। রাইট-ব্যাক পজিশনে নোর্দি মুকিয়েলের বিপক্ষে ফাউলের আবেদন করেছিল লিপজিগ। কিন্তু ডাচ রেফারি বিওর্ন কুইপার্স খেলা চালিয়ে যাবার সঙ্কেত দেন। এই সুযোগে ডি মারিয়ার ক্রসে বার্নাটের হেডে পিএসজির জয় নিশ্চিত হয়।
১৯৯৩ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম শিরোপা জয় করেছিল মার্সেই। ২৭ বছর পর দ্বিতীয় ফরাসি দল হিসেবে এখন পিএসজির সামনে মর্যাদাকর এই শিরোপা জেতার সুযোগ এসেছে।