জাতীয় শোক দিবসে লন্ডন হাইকমিশনের স্মারক অনুষ্ঠানে জাতির পিতার প্রতি ব্রিটিশ মন্ত্রী ও এমপিদের শ্রদ্ধা নিবেদন

320

ঢাকা, ১৬ আগস্ট ২০২০ (বাসস) : জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে লন্ডন হাই কমিশন আয়োজিত স্মারক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ মন্ত্রী ও এমপিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনাতাসনীমের সভাপতিত্বে স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও ব্রিটিশ মিনিস্টার ফর লন্ডন এবং স্মল বিজনেস, কনজ্যুমার ও লেবারবিষয়ক মন্ত্রী পল স্কালী।
লেবার পার্টির চেয়ার মিস্ এঞ্জেলা রেইনার এমপি,বাংলাদেশ বিষয়ক সর্ব দলীয় সংসদীয় গ্রুপের চেয়ার এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ট্রেড এনভয় রুশনারা আলী এমপি, জার্মানির বিখ্যাত কার্লশ্রুহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জামাতা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সহকর্মীও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শহীদ হোসেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়ির প্রতিবেশী নেওয়াজ আহমেদ, প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রবাসী সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় সদস্য সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিবিসি’র বাংলা বিভাগের প্রধান সাবির মোস্তাফা ২০০৪ সালে বিবিসি’র জরিপে বঙ্গবন্ধুকে “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি” হিসেবে ঘোষণা সম্পর্কে তাঁর অপূর্ব অভিজ্ঞতার স্মৃতি চারণ করেন।
এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবীণ ও নবীন বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানঅতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উচ্চ আয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতো। তবে তাঁর নিমর্ম হত্যা কান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি থামানো যায়নি। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে এক উচ্চ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উন্নয়নের অনেক সাফল্য রয়েছে যা গর্বের সঙ্গে বলা যায়। এসবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে দ্রুতসাফল্য অর্জন করেছে তা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য”। তিনি আশা করেন আগামী বছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য উচ্চ পর্যায়ে সরকারি সফরের আয়োজনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টিইমাম বঙ্গবন্ধুকে অতুলনীয় মহান নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচুকরে দাঁড়াবার গৌরব দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নপূরণকরে যেতে পারেননি। তবে আমরা সৌভাগ্যবান যে আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার চিন্তা ও আদর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশকে‘ সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ট সম্পকের্র কথা উল্লেখ করে আশা করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোভিড মহামারী পরবর্তী সময়েও দু‘দেশের মধ্যে এ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।
হাইকমিশনার সাইদা মুনাতাসনীম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীর এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ দিবসটি আমরা পালন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দারপ্রান্তে।এ দু‘টি ঘটনা বাঙালি জাতির ইতিহাসে উজ্জল মাইলফলক।
তিনি ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের সাথে বঙ্গবন্ধু প্রগতি, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অর্ন্তভূক্তি মূলক যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন তা উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সেই মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠিত গভীর সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর ২০২১ সালে উদযাপন করবে।
ব্রিটিশ মিনিস্টার পল স্কালী বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং জাতীয় শোক দিবস পালনে বাংলাদেশের মানুষ ও সমগ্র বাঙালি জাতির প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী স্যারএডওয়ার্ড হিথের সাথে বঙ্গবন্ধু’র অর্ন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু দলমতনিরপেক্ষভাবে যুক্তরাজ্যে লেবার ও কনজারভেটিভ উভয় দলের নেতৃবৃন্দেরসাথেই সুন্দরসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের আগে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে সব বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন সে সব উল্লেখ করে ব্রিটিশ মন্ত্রী একই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন।
লেবারপাটির চেয়ারএঞ্জেলা রেইনা লেবারলিডারস্যারকির স্টারমার-এর প্রতিনিধিহিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁকে এশিয়ার মহান নেতা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি স্যারহ্যারলড উইলসনের সাথে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডকে স্যার উইলসন সেসময়ে তাঁর ব্যক্তিগত অপূরনীয় ক্ষতি হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন।
রোশনারা আলী বলেন, ১৫ আগস্ট কেবল শোকের নয়, এদিনআমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষানিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার তিনি জন্য যে আপোষহীন সংগ্রাম ও পরম ত্যাগকরে গেছেন সেসব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়ে নতুন প্রজন্মকে ও সচেতন করতে পারি।
আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ও সুপরিকল্পিত উপায়ে তরুণ সমাজের কাছে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন, যাতে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিকনীতি-আদর্শ সঠিক ভাবে অনুসরণ করতে পারে। তিনি বঙ্গবন্ধুর মূল্যবোধ ও সোনারবাংলার স্বপ্নবাস্তবায়নে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ড. শহীদ হোসেন ভিয়েনা থেকে অনুষ্ঠানে যোগদিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর প্রবাসে তাঁর দুই কন্যার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তাঁর স্মৃতিচারণ করেন। ঢাকা থেকে যোগদানকারী নেওয়াজ আহমেদ ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁর মর্মান্তিক স্মৃতির বর্ণনা দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার ভূমিমন্ত্রী ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরেপবিত্র কোরান, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠকরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজা কেরা হয়। অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার ভূমিমন্ত্রীকে নিয়ে জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘‘Asian Affairs’’ এর বিশেষসংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন। স্মারক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর একটি প্রমাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সকালে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। এরপর জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
স্মারক অনুষ্ঠানে হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, মিনিস্টার (কনস্যুলার) মোঃ লুৎফুল হাসান, সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রশীদ, মিনিস্টার (প্রেস) আশিকুন নবী চৌধুরী, মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) এ,এফ,এম, জাহিদুল ইসলাম, কমার্শিয়াল কাউন্সিলার এস, এম, জাকারিয়া হক, কাউন্সিলার (পলিটিক্যাল) দেওয়ান মাহমুদুল হক, কাউন্সিলার ও দূতালয় প্রধান স্বদীপ্ত আলম, সহকারী সামরিক উপদেষ্টা লেঃকর্ণেল সোহেল আহমেদ, প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা) এ,এফ, এম, ফজলেরাব্বী, প্রথম সচিব (পলিটিক্যাল) মাহফুজা সুলতানা, প্রথম সচিব (পলিটিক্যাল) এ,কে,এম, মনিরুল হক ও এ্যাটাসে (কনস্যুলার) এইচ, এম, ফয়সাল আহমেদসহ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।