সিনহা হত্যাকান্ড : গণশুনানীতে ৯ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য গ্রহণ

334

কক্সবাজার, ১৬ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : কক্সবাজারের টেকনাফে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে আয়োজিত গণশুনানীতে ৯ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ কার্যালয়ে এই গণশুনানী শুরু হয়। এরআগেই সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীকে নিবন্ধন করে গণশুনানীর নির্দিষ্ট কক্ষে নিয়ে যায় তদন্ত দল। দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলে। তদন্তকারী দলের সদস্যরা তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। প্রত্যক্ষর্দীদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
সূত্র জানিয়েছে- শুনানীতে সাক্ষ্য দিতে নিবন্ধনভুক্ত ১১ জনই টেকনাফ বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা। বেলা সাড়ে ১১টা হতে বক্তব্য গ্রহণ শুরু করে তদন্ত দল। শুনানীতে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রতিনিধি লে. কর্ণেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত প্রতিনিধি অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৯টা হতে গণশুনানী স্থলে আসা শুরু করেন স্থানীয় লোকজন। বক্তব্য দিতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রেশন বুথে যান। গণশুনানী উপলক্ষে শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশে এলাকা কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেছে আইন শৃংখলা বাহিনী।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিনহা হত্যাকা-ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন তারা। এই হত্যাকা- পরিকল্পিত, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে। কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত। ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব প্রশ্ন অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, এসব প্রশ্নের জবাব মিললেই ঘটনার সবকিছু স্পষ্ট হবে।
শুনানীতে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন অংশ নিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাধীনভাবে কথা বলতে সুযোগ দিতে এই গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়।
এরআগে শনিবার শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্ট এলাকা পরিদর্শন করেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম। সেখানে তিনি বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদি হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।
এরমধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব।
রিমান্ডভূক্তরা হচ্ছেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।
এরআগে একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুটি, রামু থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। এই ৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছে সিনহার সঙ্গি সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রাণী দেবনাথকে। তারা জামিনে রয়েছেন।