বাসস ক্রীড়া-১ : ম্যানচেস্টার সিটিকে হতবাক করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে লিঁও

134

বাসস ক্রীড়া-১
ফুটবল-চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
ম্যানচেস্টার সিটিকে হতবাক করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে লিঁও
লিসবন, ১৬ আগস্ট ২০২০ (বাসস) : বদলী খেলোয়াড় মুসা ডেম্বেলের দুই গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিকে ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত করে শেষ চার নিশ্চিত করেছে ফরাসি ক্লাব লিঁও।
লিসবনের এস্তাদিও হোসে আলভালাদেতে ম্যাচের ২৪ মিনিটে ম্যাক্সেল করনেটের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লিঁও। দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে ৬৯ মিনিটে সিটির পক্ষে সমতা ফেরান কেভিন ডি ব্রুইনা। কিন্তু ৭৫ মিনিটে ডেম্বেলে বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেন। মাঠে নামার চার মিনিটের মধ্যে লিঁওকে আবারো এগিয়ে দেন এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। রাহিম স্টার্লিংয়ের হতাশাজনক একটি মিসের পর ম্যাচ শেষের তিন মিনিট আগে লিঁওকে ঐতিহাসিক জয় উপহার দেন ডেম্বেলে।
সব প্রত্যাশার বিপক্ষে গিয়ে যে দলটি মার্চের পর থেকে মাত্র দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছে এবং বাতিল হওয়া ফরাসি মৌসুমে সাত নম্বরে থেকে লিগ শেষ করেছে তারাই এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো। বুধবারের সেমিফাইনালে যেখানে তাদের জন্য আগে থেকেই অপেক্ষায় আছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ। রুডি গার্সিয়ার দলের জন্য এটি একটি স্বপ্নের যাত্রা হয়েই থাকবে। আগের রাউন্ডে জুভেন্টাসকে বিদায় করার পর এবার সিটিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে লিঁও। আর শেষ চারে আরেক জায়ান্ট বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচটি সহজ না হলেও দিনটি লিঁওর হতেও পারে।
সেল্টিকের সাবেক স্ট্রাইকার ডেম্বেলে ফ্রেঞ্চ টেলিভিশন চ্যানেল আরএমসি স্পোর্টকে বলেছেন, ‘আমরা এখনো টিকে আছি। এর অর্থ হচ্ছে আমরাও অসাধরন একটি দল। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যাবার পরিকল্পনা করেছিলাম। একবারে কোন লক্ষ্যস্থির করিনি। বায়ার্নের বিপক্ষে এখন আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’
লিঁওর বিপক্ষে গার্দিওলার দলকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। বিশেষ করে ঘরের মাঠে গত মৌসুমে এই ক্লাবটির কাছে গ্রুপ পর্বে পরাজিত হয়েছিল সিটিজেনরা। কিন্তু তারপর দুই বছর কেটে গেছে এবং লিঁও ছেড়ে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন।
আগের দিন বায়ার্নের কাছে বার্সেলোনার ৮-২ গোল বিধ্বস্ত হওয়ার ম্যাচটি থেকে এখনো পুরো ফুটবল বিশ^ বেরিয়ে আসতে পারেনি। গার্দিওলার অধীনে সিটিজেনদের বিদায়ে এবার ইংলিশ সমর্থকদের হতাশা বাড়লো। এই নিয়ে টানা তৃতীয় আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেবার পর সিটির ইউরোপীয়ান শিরোপা জয়ের অপেক্ষা আরো দীর্ঘায়িত হলো।
গার্দিওলা বলেছেন, ‘এটা ফুটবল। হয়তোবা একদিন আমরা কোয়ার্টার ফাইনালের গন্ডি পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। দুর্দান্ত কিছু খেলোয়াড় থাকা সত্বেও এবার আমরা সেটা করতে পারলাম না। তবে আশা করছি ভবিষ্যতে ঠিকই একদিন আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’
গত মৌসুমে অল-ইংল্যান্ড ফাইনালে টটেনহ্যামকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছিল লিভারপুল। আর এবার সেমিফাইনালে কোন ইংলিশ দলই টিকে থাকলোনা। তার পরিবর্তে ফ্রাংকো-জার্মান দ্বৈরথে মুখর হবে এবারের শেষ চারের লড়াই। আরেক সেমিফাইনালে প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইর প্রতিপক্ষ আরবি লিপজিগ। যে কারনে অলÑফ্রান্স কিংবা অল-জার্মান ফাইনালের একটি সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে।
রক্ষনভাগে তিনজনকে নিয়ে গার্দিওলা তার দলীয় কৌশল সাজিয়েছিলেন। ফার্নান্দিনহো ও অমারিক লাপোর্তের সাথে যোগ দিয়েছিলেন তরুণ স্প্যানিয়ার্ড এরিক গার্সিয়া। লাইন-আপ থেকে বাদ পড়েছিলেন ফিল ফোডেন। প্রথমার্ধে খুব কমই সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছিল সিটি। গার্সিয়া আক্রমনভাগে ক্যামেরুনের ২৭ বছর বয়সী এ্যাটাকার কার্ল টোকো-একাম্বির উপরই ভরসা রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শুরু থেকেই সেই দায়িত্ব শতভাগ পালন করার চেষ্টা করেছেন আরেক ফরোয়ার্ড করনেট। তারই ধারাবাহিকতায় ২৪ মিনিটে সিটি গোলরক্ষক এডারসন তার লাইন থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসলে করনেট দারুন এক গোলে লিঁওকে এগিয়ে দেন। এর মাধ্যমে সিটির বিপক্ষে নিজের দুর্দান্ত রেকর্ড আরো একবার প্রমান করলেন আইভরি কোস্টের এই তরুন ফরোয়ার্ড। গত মৌসুমে দুইবারের মোকাবেলায় করনেট সিটির বিপক্ষে তিন গোল করেছিলেন।
বিরতির পর ডি ব্রুইনার দূরন্ত ফ্রি-কিক অল্পের জন্য সমতা ফেরাতে পারেনি। গোল পরিশোধের লক্ষ্যে ফার্নান্দিনহোর পরিবর্তে রিয়াদ মাহারেজকে নামানো হয়। ৬৯ মিনিটে মাহারেজ-স্টার্লিংয়ের সহায়তায় বেলজিয়ান তারকা ডি ব্রুইনা সিটিকে সমতায় ফেরান। ঐ মুহূর্তে খুব কম সংখ্যক সমর্থকই মনে করেছিল এই ম্যাচে সিটিকে বিদায় নিতে হবে। ম্যাচের নিয়ন্ত্রনও মোটামুটি সিটির দখলেই ছিল। লিঁও কোচ গার্সিয়া মেমফিস ডিপের পরিবর্তে ডেম্বেলেকে মাঠে নামান। তার এই সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত লিঁওকে জয় উপহার দিয়েছে। হুমেস অরার বাড়ানো বলে এডারসনকে পরাস্ত করতে কোন ভুল করেননি ডেম্বেলে। সিটির আবেদনে ভিএআর রিভিউ করে শেষ পর্যন্ত লিঁওকে গোল উপহার দেয়া হয়। ইকে গুনডোগানের সহায়তায় স্টার্লিং ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি নষ্ট না করলে ঐ সময়ই হয়ত সিটি সমতা ফেরাতে পারতো। ৮৭ মিনিটে অরারের একটি শট এডারসন রুখে দিলেও ফিরতি বলে ডেম্বেলে লিঁওর হয়ে দুর্দান্ত জয় নিশ্চিত করেন।
বাসস/নীহা/১৪৪০/স্বব