বাসস দেশ-২ (প্রথম কিস্তি) : ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের ষড়যন্ত্র উদঘাটনে কমিশন গঠনের পরামর্শ আরেফিনের

190

বাসস দেশ-২ (প্রথম কিস্তি)
আগস্ট আরেফিন
১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের ষড়যন্ত্র উদঘাটনে কমিশন গঠনের পরামর্শ আরেফিনের
॥ মলয় কুমার দত্ত ॥
ঢাকা, ১৫ আগস্ট, ২০২০(বাসস): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এএএমএস আরেফিন সিদ্দিক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পুরো হত্যাযজ্ঞের পেছনের ষড়যন্ত্র উদঘাটনে সার্বিক অনুসন্ধান চালাতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন।
জাতীয় শোক দিবসের প্রাক্কালে তিনি আজ বাসসের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেন, সার্বিকভাবে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র উদঘাটনে তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত পরিবারের প্রায় সকল সদস্যসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্র অনুসন্ধানে প্রকাশিত গোপন বিদেশী তথ্যের ওপর অধিকাংশভাবে নিভর্রশীল। হত্যাযজ্ঞের পুরো ষড়যন্ত্র উদঘাটনে আমাদের এখন স্থানীয় সূত্রগুলো খুঁজে দেখার পাশাপাশি বিদেশীসূত্র থেকে পাওয়া তথ্য একত্রিত এবং সেসব মিলিয়ে দেখা প্রয়োজন। আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ধাপে ধাপে দীর্ঘকাল ধরে এই ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছে। আমরা যদি প্রতিটি ধাপ খতিয়ে দেখি বা বিশ্লেষণ করি, তাহলে হয়তো পুরো ঘটনার চেহারাই পাল্টে যাবে এবং দেখা যাবে একটি ঘটনার সাথে অন্যটি কিভাবে জড়িত।
জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দৃশ্যপটের নেপথ্য নায়কদের কেউ হয়তো ওয়াশিংটন কিংবা অন্য কোথাও বসে এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল, আর অন্যরা হয়তো পর্দার আড়ালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্যে ঘাতকদের পাঠিয়েছিল।
আমেরিকান সিআইএ’র এ হত্যাযজ্ঞে হাত থাকতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইতিহাসের স্বার্থে তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন।
সাবেক এই উপাচার্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তারা প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, মহাত্মা গান্ধী, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীকে হত্যার পর এ ধরণের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যার সাতদিনের মধ্যে ১৯৬৩ সালের ২৯ নভেম্বর তদন্তের জন্যে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন যা অনানুষ্ঠানিক ভাবে ওয়ারেন কমিশন নামে পরিচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর হত্যা করা হয়।
যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষজ্ঞ সিদ্দিক আরো বলেন, ওয়ারেন কমিশন সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করেছিল, যা পরে সকলের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়। এটি লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে যেন বিশ্ববাসী আততায়ীদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাযজ্ঞকেন্দ্রিক সঠিক তথ্যসমূহ জানতে পারে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা কেবল একজন ব্যক্তি কিংবা একটি পরিবারের হত্যাযজ্ঞ নয় বরং এটি দেশের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধসে পড়ারই নামান্তর।
সাবেক এই উপাচার্য আরো বলেন, দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু এই হত্যার নীল নকশা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বহু আগ থেকেই শুরু হয়েছে এবং পরেও দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। কমিশনের মাধ্যমেই এর উদঘাটন করা উচিত।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত আছে। তাই ভবিষ্যতে এ ধরণের ষড়যন্ত্র যাতে না ঘটে সে জন্যে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন এবং এই হত্যাযজ্ঞের কেন্দ্রে থাকা পুরো দৃশ্যপট উদঘাটনে কমিশন গঠন জরুরি। তিনি বলেন, এই কমিশন গঠনের অর্থ কাউকে নতুন করে শাস্তি দেয়া নয়। কারণ, ইতোমধ্যে অপরাধীদের বিচার করা হয়েছে। এই কমিশন গঠনের লক্ষ্য ঐতিহাসিক রেকর্ডসমূহ সংরক্ষণ করা এবং প্রজাতন্ত্রের মালিক হিসেবে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে কে তাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছে।
চলবে-বাসস/এসপিএল/এমকেডি/জুনা/১১১০/কেএমকে