বাসস ক্রীড়া-১ : শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে পিএসজি

113

বাসস ক্রীড়া-১
ফুটবল-চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে পিএসজি
লিসবন, ১৩ আগস্ট ২০২০ (বাসস) : সিরি-এ লিগে এবারের মৌসুমে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল আটালান্টার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইটা যে মোটেই সহজ হবে না তা আগেই অনুমান করে ফেলেছিল ফরাসি জায়ান্ট প্যারসি সেইন্ট-জার্মেই। পরাজয়ের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে পৌঁছে গেলেও শেষ পর্যন্ত নাটকীয় এক জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে নেইমার-এমবাপ্পেরা। বদলী খেলোয়াড় এরিক চুপো-মটিংয়ের ইনজুরি টাইমের গোলে আটালান্টাকে ২-১ গোলে পরাজিত করে শেষ চারে উঠেছে পিএসজি।
লিসবনের এস্তাদিও দা লুজের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ২৬ মিনিটে মারিও পাসালিচের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আটালান্টা। কিন্তু শেষ মিনিটে মারকুইনহোসের গোলে সমতায় ফিরে পিএসজি। ম্যাচটি যখন নিশ্চিতভাবেই অতিরিক্ত সময়ের দিকে গড়াচ্ছিল তখনই কিলিয়ান এমবাপ্পের সহযোগিতায় চুপো-মোটিং দলের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। দুর্দান্ত এক গোলে তিনি দলের জয় নিশ্চিত করেন। সেই সাথে ২৫ বছর পর পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চার উপহার দেন।
ক্যামেরুনের ৩১ বছর বয়সী এই এ্যাটাকারের সাথে জুনেই পিএসজি’র বর্তমান চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল এইটের কারনে আরো দুই মাস তার সাথে চুক্তি বৃদ্ধি করা হয়। ম্যাচ শেষে চুপো-মোটিং বলেছেন, ‘আমি যখন মাঠে নামি তখন নিজেকে একটি কথাই বলেছি আমাদের পরাজিত হলে চলবে না। আমরা এভাবে বাড়ি ফিরতে পারিনা। বাকিটা এখন ইতিহাস।’
১৯৯৫ সালের পর এই প্রথমবারের মত ইউরোপের এলিট ক্লাব প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালের টিকিট পেল ফরাসি চ্যাম্পিয়নসরা। কাতারী মালিকের অধীনে প্রায় এক দশক আগে পুনর্গঠিত পিএসজি এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটের বাঁধা পেরুতে সক্ষম হলো। কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট দলটির মালিকানা পাবার পর থেকেই বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে চলেছে।
বিশে^র সবচেয়ে দামী ফুটবলার ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার বলেছেন, ‘বাড়ি ফিরে যাওয়া কখনই আমার মাথায় আসেনি। শুর থেকে শেষ পর্যন্ত, ওয়ার্ম-আপ শুরুর সময় থেকেই আমার মাথায় একটিই চিন্তা ছিল সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করা। এখন আমি ফাইনালে খেলতে চাই। কেউ আমাকে এই চিন্তা থেকে দুরে সড়িয়ে আনতে পারবে না।’
পিএসজির জয়ের দিনে এই ফলাফলটা আটালান্টার জন্য ছিল খুবই হতাশার। অন্তত আরো কয়েকটি দিন তারা রূপকথার এই যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। চলতি বছরের শুরুতেই উত্তর ইতালিয়ান এই শহরটিতে করোনা মহামারী আকারে হানা দেয়। কোভিড-১৯’এ আক্রান্ত হয়ে সেখানে সবচেয়ে বেশী মৃত্যু হয়েছে। আটালান্টার কোচ গিয়ান পিয়েরো গাসপেরিনি বলেছেন, ‘আমরা খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। এমন মনে হচ্ছিল আমরা মনে হয় লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছি।’
তারপরেও একটি স্মরণীয় ও সফল মৌসুমের কারনে গাসপেরিনিকে অনেকদিন আটালান্টা মনে রাখবে। মার্চে শেষ ১৬’র লড়াইয়ে ভ্যালেন্সিয়াকে দুই লেগ মিলিয়ে আট গোল দিয়েছিল আটালান্টা। করোনা মহামারীর কারনে বিশ^জুড়ে ফুটবল বন্ধ হয়ে যাবার ঠিক আগে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এরপর তৃতীয় স্থানে থেকে আটালান্টা এবারের সিরি-এ মৌসুম শেষ করেছে। পুরো মৌসুমে তারা ৯৮টি গোল করেছে। পিএসজিকে পরাজিত করা কিছুটা কঠিন মনে হলেও আটালান্টা প্রায় লক্ষ্যেও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। নেইমার একা যে পরিমান অর্থ আয় করেন পিএসজি থেকে তার সমান আটালান্টার পুরো বছরের সকলের বেতন। যে কারনে বলাই যায় পিএসজির মত দলের বিপক্ষে এই ধরনের লড়াই চালিয়ে যাওয়াও আটালান্টার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
করোনা মহামারীর কারনে উয়েফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল লিসবনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল এইটের সবগুলো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে প্রতিটি ম্যাচই হবে সরাসরি নক আউট পদ্ধতিতে।
যে কারনে পিএসজি জানতো দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আটালান্টার বিপক্ষে তারা দ্বিতীয় কোন সুযোগ পাবে না। কোচ থমাস টাচেলও তাই কোন ধরনের দ্বিতীয় চিন্তা মাথায় আনেননি। যদিও ইনজুরি আক্রান্ত এমবাপ্পেকে দ্বিতীয়ার্ধে বদলী হিসেবে নামাতে বাধ্য হয়েছিলেন টাচেল। তার অনুপস্থিতি প্রথমার্ধে বেশ অনুভূত হয়েছে। তার উপর এক গোল হজম করায় টাচেল আর কোন ঝুঁকি নিতে চাননি। গত ২৪ জুলাই ফরাসি কাপের ফাইনালে সেইন্ট-এতিয়েনের বিপক্ষে গোঁড়ালির ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমবাপ্পে। শেষ ৩০ মিনিট খেলার জন্য টাচেল তাই তাকে যথেষ্ঠ ফিট মনে করেছেন। তার আগেই ইনজুরির কারনে মার্কো ভেরাত্তি ও নিষেধাজ্ঞার কারনে এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। শুরু থেকেই নেইমার বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছে। আটালান্টার গোলরক্ষক মার্কো স্পোর্টিয়েলোকে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন নেইমার। তার পরিবর্তে আটালান্টা তাদের সুযোগ দারুনভাবে কাজে লাগায়। ২৬ মিনিটে ১৫ গজ দুর থেকে পাসালিচের জোড়ালো শট আটকানোর সাধ্য ছিল না পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের। ৫৮ মিনিটে আলবেনিয়ান ডিফেন্ডার বেরাত ডিমসিটি ব্যবধান দ্বিগুন করতে পারেননি। অন্যদিকে এমবাপ্পেকে পেয়ে পিএসজি যেন নতুন রূপ ফিরে পায়। ইনজুরির কারন নাভাসের পরিবর্তে পিএসজির গোলবার সামলানোর দায়িত্ব পান সার্জিও রিকো। ৯০ মিনিটে নেইমারের এসিস্টে মারকুইনহোস পোস্টের খুব কাছে থেকে পিএসজিকে সমতায় ফেরান। আর এরপর চুপো-মোটিং নাটকীয় ম্যাচটির ইতি টানেন। ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে নেইমারের কাছ থেকে পাওয়া বলে এমবাপ্পের লো ক্রসে চুপো-মোটিং কোন ভুল করেননি।
বাসস/নীহা/১৫৩০/স্বব