২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে

449

ঢাকা, ২৮ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : ভয়াবহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বি¯েম্ফারক আইনে দায়ের করা দুই মামলার বিচার এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
তবে আসামীপক্ষ কালক্ষেপণের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় এখন আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৫ জুলাই ছিল এ মামলার যুক্তিতর্ক পেশ করার ১০১ তম দিন। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৩ আসামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বাসস এর সঙ্গে আলাপকালে আসামীপক্ষ কালক্ষেপণের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আসামীপক্ষ এ মামলায় আইনে প্রদত্ত সব ধরণের সূযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। তবে তিনি বলেন আসামীপক্ষ ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যুক্তিতর্কে প্রাসঙ্গিক নয় এমন বিষয়েরও অবতারণা করছেন আসামীপক্ষ। ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলার শিকার বিচারপ্রার্থীগণ ন্যায়বিচারের আশায় রয়েছেন।
এ মামলার প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল বাসস’কে জানান, পৃথক মামলায় মোট আসামীর সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামীর অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামীর বিচার চলছে। ১৮ জন এখনো পলাতক। আসামীদের মধ্যে ৪৫ জনের যুক্তিতর্ক পেশ হবে। ইতোমধ্যে ৪৩ জনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। মামলার অন্যতম আসামী বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর পক্ষে গত ২৫ জুলাই চতুর্থ দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেছেন তার আইনজীবী। এ যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত রয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে আগামী ৩০, ৩১ জুলাই এবং ১ আগষ্ট। তিনি বলেন, আদালত পরবর্তী তিন ধার্য তারিখের দুই দিন পিন্টুর আইনজীবীকে এবং এক দিন পিন্টুকে বক্তব্য রাখার জন্য আদেশ দিয়ে তার পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করতে বলেছে। এছাড়াও অপর আসামী বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী লৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীকে যুক্তিতর্ক পেশের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য এডভোকেট ফারহানা রেজা বাসস’কে জানান, মামলায় পলাতক আসামীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে আইনে সর্বোচ্চ সাজার ধারায় অভিযোগ রয়েছে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্ট্যাট ডিফেন্স) আইনজীবী ছিল। পলাতক চারজন আসামীর বিষয়ে রাষ্ট্র আইনজীবী নিয়োগ দেয়ানি। তারা হচ্ছেন-আসামী সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। এডভোকেট ফারহানা রেজা জানান, এ চার আসামীর আইন অনুযায়ি সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদন্ড হতে পারে এমন কোন ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তার ‘স্ট্যাট ডিফেন্স বা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাবেন না। মামলার শুরু থেকেই উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আসামীপক্ষ সময় ক্ষেপনের চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী ফারহানা রেজা।
যুক্তিতর্ক উপস্থাপন কালে আসামীপক্ষকে আদালতও মামলার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বক্তব্য পেশের জন্য তাগিদ দিয়েছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামীপক্ষে সাক্ষিদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দে জেরার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামী ৫২ জন। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। অন্য দিকে তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। জামিনে থাকা আসামিরা হলেন- বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণেন্দ্রীয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।