বাসস দেশ-৪৬ : প্রবাসে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বঙ্গমাতার অনুসরণীয় জীবন ও কর্ম তুলে ধরতে লন্ডনের স্মারক অনুষ্ঠানে বিশেষ গুরুত্বারোপ

212

বাসস দেশ-৪৬
লন্ডন-বঙ্গমাতা-জন্মদিন
প্রবাসে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বঙ্গমাতার অনুসরণীয় জীবন ও কর্ম তুলে ধরতে লন্ডনের স্মারক অনুষ্ঠানে বিশেষ গুরুত্বারোপ
ঢাকা, ৯ আগস্ট ২০২০ (বাসস) : বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডন আয়োজিত স্মারক অনুষ্ঠানের আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যেমন সমার্থক, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাও তেমনি সমার্থক। তাঁরা ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতিটি ঘটনার সাথে বঙ্গমাতা ওতোপ্রোভাবে জড়িত ছিলেন।’
তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রাম বিশেষ করে তিনি যখন দীর্ঘসময় কারাগারে বন্দী ছিলেন সেই দুঃসময়ে বঙ্গমাতার দুর্দান্ত সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাঙ্গালি জাতির মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটময় মূহূর্তে বঙ্গমাতা পরামর্শক ও দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর প্রেরণাতেই বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেও মহামূল্যবান দুটি বই লিখেছেন।
আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনের উদ্যোগে গতকাল ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব : এ সিম্বল অব সেক্রেফাইস, কারেজ এন্ড ডিউটি’ শীর্ষক এক স্মারক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট বক্তারা তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং সকল প্রজন্মের বাঙালি নারী ও বাঙালি জাতির এই অসাধারণ এবং অনুসরণীয় রোল মডেলের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা ও ইংরেজি ভাষায় আন্তর্জাতিক প্রকাশনার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট রাজনৈতিক কর্মী ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং উপমহাদেশের বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ও লেখক সেলিনা হোসেন।
স্মারক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রবাসী সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় সদস্য সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও বঙ্গমাতা বেগম মুজিবের সাথে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক হালিমা বেগম আলম। এই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবীণ ও নবীন বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ওয়েবিনারের মাধ্যমে বঙ্গমাতার প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।
তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রাম বিশেষ করে তিনি যখন দীর্ঘসময় কারাগারে বন্দী ছিলেন সেই দুঃসময়ে বঙ্গমাতার দুর্দান্ত সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাঙ্গালি জাতির মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটময় মুহূর্তে বঙ্গমাতা পরামর্শক ও দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর প্রেরণাতেই বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেও মহামূল্যবান দু’টি বই লিখেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতা সেসময় ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রেও ছিলেন অসীম প্রেরণার উৎস। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পিছনে তাঁর সক্রিয় সমর্থন ছিল।
বঙ্গমাতার চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রসঙ্গে সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে বঙ্গবন্ধুর দেয়া এক সাক্ষাতকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কামানের প্রচন্ড গোলাগুলির মধ্য দিয়ে যখন আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তখনো আমার স্ত্রী ছিলেন অবিচল।
তোফায়েল আহমেদ ‘একজন ভাল মা একটি ভাল জাতি গঠন করতে পারে’ এই উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন তেমনিই একজন মা যিনি বাঙ্গালি জাতিকে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রেহানার মতো রতœসম সন্তান উপহার দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন সংগ্রামী সহধর্মিনী ও মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় ও দূরদর্শিতায়, দেশ প্রেমে ও আত্মত্যাগে, অসাধারণ সাহসীকতায় ও আপোষহীনতায় এবং সর্বোপরি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ‘বঙ্গমাতা‘ মর্যাদায় বাঙ্গালি জাতির হৃদয়ে এবং বাঙালি জাতির ইতিহাসে একজন অসাধারণ এবং অনুসরণীয় রোল মডেল হিসেবে চির-ভাস্বর হয়ে আছেন।
হাইকমিশনার আরো বলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নতুন প্রজন্মকে বঙ্গমাতার জীবনাদর্শে আরো সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য হাইকমিশন থেকে এই মহীয়সী নারীর ওপর বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রকাশনার ইংরেজি সংস্করণ বের করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, অসাধারণ মানুষ বঙ্গমাতা রাজনীতিতে সবসময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিশেষভাবে বিরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনসহ দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী ও দিক-নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন।
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে বঙ্গমাতার জীবনীসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেন।
বঙ্গমাতাকে মহীরুহ অভিধায় আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অতন্দ্র প্রহরীর মতো বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে বঙ্গমাতা যেমন প্রেরণা যুগিয়েছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ রেহানাও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছায়াসঙ্গী হয়ে আছেন।
আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ম্যাক্সিম গোর্কির ‘‘মা” উপন্যাসের মায়ের সঙ্গে বঙ্গমাতার তুলনা করে বলেন, ‘গোর্কির মায়ের মতোই বঙ্গমাতাও বাঙ্গলি জাতির মায়ের ভূমিকায় অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন।’
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ‘জয় বাংলা’কে স্বাধীন বাংলার শ্লোগানে পরিণত করতে ও পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা‘-কে জাতীয় সংগীত করার ক্ষেত্রেও বঙ্গমাতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনে এবং নারী শক্তির উত্থান ও উন্নয়নে বঙ্গমাতার অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করে জাতীয় পর্যায়ে আজো তাঁর সঠিক মূল্যায়ন হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বাঙ্গালি জাতি গঠনের ইতিহাসে সবচেয়ে সাহসী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারী হিসেবে বঙ্গমাতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার ষ্টাডিজ বিভাগে তাঁর জীবনী যথাশিগগিরই পাঠ্য তালিকাভূক্ত করার প্রস্তাব করেন।
সুলাতান মাহমুদ শরীফ ও জনাব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক যুক্তরাজ্যে প্রবাসী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর মতো বঙ্গমাতার জীবনাদর্শ আরো বেশি করে তুলে ধরতে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য লন্ডন হাই কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
স্মারক অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতাকে উৎসর্গ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সিনিয়র সাংবাদিক উর্মি মাযহার কবি অপূর্ব শর্মার একটি কবিতার মর্মস্পর্শী আবৃত্তি করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গমাতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ও তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করা হয়। এরপর বঙ্গমাতার জীবনের ওপর একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
স্মারক অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুলকার নাইন, মিনিস্টার (কনস্যুলার) মোঃ লুৎফুল হাসান, সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রশীদ, মিনিস্টার (প্রেস) আশিকুন নবী চৌধুরী, মিনিস্টার (পলি্িটক্যাল) এ,এফ,এম, জাহিদুল ইসলাম, কমার্শিয়াল কাউন্সিলার এস, এম, জাকারিয়া হক, কাউন্সিলার (পলিটিক্যাল) দেওয়ান মাহমুদুল হক, কাউন্সিলার ও দূতালয় প্রধান স্বদীপ্ত আলম, সহকারী সামরিক উপদেষ্টা লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ, প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা) এ,এফ, এম, ফজলে রাব্বী, প্রথম সচিব (পলিটিক্যাল) মাহফুজা সুলতানা, প্রথম সচিব (পলিটিক্যাল) এ,কে,এম, মনিরুল হক ও এটাসে (কনস্যুলার) এইচ, এম, ফয়সাল আহমেদসহ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাসস/সবি/২১৪৯/আরজি