উজ্জীবিত মেসির ওপর ভর করে কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনা

257

বার্সেলোনা, ৯ আগস্ট ২০২০ (বাসস) : ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে প্রথমবারের মত ইতালিয়ান জায়ান্ট নাপোলিকে আতিথেয়তা দিয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু অতিথিদের প্রথম সফরের স্মৃতিটাকে স্মরণীয় করে রাখতে দিলনো কিকে সেতিয়েনের শিষ্যরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬’র ফিরতি পর্বে নাপোলিকে ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শেষ আট নিশ্চিত করেছেন কাতালান জায়ান্টরা।
ম্যাচে লিওনেল মেসির একক প্রচেষ্টার দুর্দান্ত গোলটি নিঃসন্দেহে এবারের আসরের সেরা গোলের তকমা পেতেই পারে। কারন এ ধরনের গোল সাধারনত প্রতিদিন দেখার সুযোগ হয়না, আর গোলটি যে দিয়েছেন ‘মেসি’- যার তুলনা সে নিজেই।
কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনার প্রতিপক্ষ দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ। জার্মান চ্যাম্পিয়নদের ঘায়েল করতে হলে আরো একবার যে মেসির উপরই পুরো দলকে নির্ভর করতে হবে তা গতকাল বেশ ভালই প্রমান দিয়েছেন বার্সা অধিনায়ক।
ক্যাম্প ন্যুতে গতকাল ক্লেমেন্ট ল্যাঙ্গেল্টের হেড, মেসির দুর্দান্ত গোল ও স্পট কিক থেকে লুইস সুয়ারেজের গোলে বিরতির আগে ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সা। সুয়ারেজের পেনাল্টিও আদায় করে নিয়েছিলেন মেসি। যদিও বিরতির ঠিক আগ মুহুর্তে লরেনজো ইনসিগনের গোলে নাপোলি কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল পায়নি সফরকারীরা।
ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ সেতিয়েন বলেছেন, ‘দ্বিতীয় গোলটি অনেকদিন যাবত নাপোলির মনে থাকবে। এই ধরনের গোল প্রতিপক্ষকে শুধু হতাশাই দেয়।’
বিরতির আগে সেনেগালের ডিফেন্ডার কালিডু কুলিবালির কঠিন একটি চ্যালেঞ্জে মেসিকে মাঠে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জের থেকেই পেনাল্টি আদায় করে নেয় বার্সেলোনা। সেতিয়েন বলেন, ‘এটা খুব খারাপ একটি ট্যাকেল ছিল। আশা করছি এ কারনে মেসির বড় কোন সমস্যা হবে না।’
লা লিগায় পাঁচ পয়েন্ট পিছনে থেকে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে শিরোপা হারিয়েছে বার্সেলোনা। সে কারনেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরুর আগে দলের ফর্মহীনতা ও কোচের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা, সব মিলিয়ে মোটেই সুখকর পরিস্থিতিতে ছিলনা বার্সা। শুক্রবার সেতিয়েন বলেছিলেন তিনি পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন না। কিন্তু লিগের পর ইউরোপেও ব্যর্থ হলে বিষয়টা আর তার হাতে থাকবে না। নাপোলির বিপক্ষে এই জয়ে কিছুটা হলেও তার উপর থেকে চাপ সড়ে এসেছে। কিন্তু পুরো দলের পারফরমেন্স এখনো সন্তোষজনক নয়। এমনকি তিন সপ্তাহের বিশ্রামের পর শুধুমাত্র মেসি ছাড়া আর কোন খেলোয়াড়কেই সেভাবে আত্মবিশ^াসী মনে হয়নি।
এদিকে গত সপ্তাহে লিগ শেষ হওয়ায় নাপোলির জন্য ছন্দ ধরে রাখার বিষয়টি কিছুটা হলেও সুবিধা ছিল। কিন্তু প্রথমার্ধেই তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার পর এই ধরনের প্রতিযোগিতায় সাধারনত ফিরে আসাট কঠিন। আর প্রতিপক্ষ যদি হয় বার্সেলোনার মত কোন দল তাহলে তো কথাই নেই।
এবারের গ্রীষ্মে কুলিবালির ইউরোপীয়ান বেশ কয়েকটি ক্লাবের সাথে আলোচনার গুজব রয়েছে। অন্যান্যদের তুলনায় বিশেষ করে তার পারফরমেন্সই সবচেয়ে বেশী হতাশ করেছে।
যদিও বায়ার্নের মুখোমুখি হবার আগে বার্সেলোনাকে বেশ কয়েকটি জায়গায় অবশ্যই উন্নতি করতে হবে। চেলসিকে দুই লেগ মিলিয়ে সাত গোল দেয়া বায়ার্নকে নি:সন্দেহে এবারের আসরের ফেবারিট মানা হচ্ছে। কোয়ার্টার ফাইনালকে সামনে রেখে সেতিয়েনও স্বীকার করেছেন বায়ার্নের বিপক্ষে ম্যাচটি বেশ কঠিন হবে।
শেষ তিনটি ম্যাচে এনিয়ে চার গোল করলেন মেসি। লিসবনের এক লেগের নক আউট পর্বে এই আর্জেন্টাইনের সাফল্যের দিকেই তাকিয়ে আছে পুরো দল। কিন্তু বায়ার্নের ইন-ফর্ম স্ট্রাইকার রবার্ট লিওয়ানদোস্কির সাথে পুরো দলের ভারসাম্যপূর্ণ পারফরমেন্স দারুনভাবে বার্সার থেকে তাদেরকে এগিয়ে রেখেছে।
প্রথমার্ধে দ্রিয়েস মার্টিনসের একটি শট পোস্টে লাগার পর শুরুতেই হোঁচট খায় নাপোলি। ৯ মিনিটে ইভান রাকিটিচের কর্ণার থেকে লেঙ্গেল্টের হেডে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। ২৩ মিনিটে তিনজন ডিফেন্ডরারের মধ্য দিয়ে মেসির দুর্দান্ত কার্লিং শট ব্যবধান দ্বিগুন করে। এই গোলটি করতে গিয়ে মেসি পড়েও গিয়েছিলেন। কিন্ত কোনভাবেই বলের নিয়ন্ত্রন হারাননি। ফ্রেংকি ডি জংয়ের দারুন একটি পাসে মেসি আরেকটি গোল করলেও হ্যান্ডবলের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু খুব বেশীক্ষন তাকে হতাশা নিয়ে থাকতে হয়নি। কুলিবালির বিপক্ষে আদায় করা পেনাল্টি থেকে তিনি কার্যত দলকে তৃতীয় গোল উপহার দিয়েছেন। গোলটি শুধুমাত্র করেছেন সুয়ারেজ, কিন্তু এর নেপথ্য কারিগর ছিলেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে রাকিটিচ ডি বক্সের মধ্যে মার্টিনসকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় নাপোলি। স্পট কিক থেকে এক গোল পরিশোধ করেন ইনসিগনে।
দ্বিতীয়ার্ধে নাপোলি বেশ আকমনাত্মক হয়ে উঠলেও গোল আদায় করতে পারেনি। যদিও দুই বদলী খেলোয়াড় আরকাদিয়াজ মিলিকের হেড এবং হার্ভিং লোজোনোর শেষ মুহূর্তের হেড পোস্টে না লাগলে ম্যাচের ভাগ্য হয়ত ঘুরে যেতে পারতো।