আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাতৃ ও শিশু পুষ্টি বিষয়ে এসডিজি অর্জন করবো : প্রধানমন্ত্রী

128

ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০২০ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন, আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাতৃ ও শিশু পুষ্টি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করবো।
তিনি বলেন, “আমি আশা করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা মাতৃ ও শিশু পুষ্টি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করব। আমি দেশের সর্বস্তরে শিশুকে মায়ের দুধ ও ঘরের তৈরি পরিপূরক খাবার খাওয়ানোর অগ্রগতির ধারাকে জোরদার করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রচেষ্টা ও সফলতার জন্য সাধুবাদ জানাই।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২০’ উদযাপন করা হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘোষিত বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘মাতৃদুগ্ধদানে সহায়তা করুন-স্বাস্থ্যকর পৃথিবী গড়ুন’ অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত হয়েছে। এ প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ মায়েদের মাতৃদুগ্ধদান কাউন্সেলিং এ অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃদুগ্ধ যেকোন সদ্যজাত শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক-মানসিক বিকাশের প্রাথমিক খাদ্য উপাদান এবং রোগ-জীবাণুসহ নানা প্রতিকূলতার মহৌষধ। শিশুকে মায়ের দুধ ও ঘরের তৈরি পরিপূরক খাবার খাওয়ানোর সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক।
তিনি বলেন, মাতৃদুগ্ধদানের সহযোগী পরিবেশ তৈরিতে মাতৃত্ব/পিতৃত্বকালীন সুরক্ষা, স্বাস্থ্য পেশাজীবি এবং মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণ, শিশু-বান্ধব হাসপাতাল স্থাপন, মাতৃদুগ্ধদান বিষয়ক কাউন্সেলিং প্রদানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃদুগ্ধ আইন, ১৯৮০ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী গত এগারো বছরে আমরা স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মায়েরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। ২০০৮ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে পুনরায় আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করি।’
এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসব ক্লিনিকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকার ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। আমরা জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, ২০১১ প্রণয়ন করেছি। অন্যদিকে, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা’ অর্জনকে অগ্রাধিকার দিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ প্রান্তে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধি এবং মাতৃ ও শিশু পুষ্টি উন্নয়নের কার্যক্রম টেকসই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানোর ২০০৭ সালের লক্ষ্য ৪৩ শতাংশ থেকে বর্তমানে ৬৫ শতাংশে উন্নীত করতে পেরেছি।
আওয়ামী লীগ সরকার গৃহীত চতুর্থ সেক্টর হেলথ, নিউট্রিশন ও পপুলেশন প্রোগ্রাম এবং দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনার আওতায় মাতৃ ও শিশু পুষ্টিসহ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও গুঁড়া দুধ ও কৌটাজাত শিশু খাদ্যের ব্যবহার সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে আনতে ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ এবং বিধিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ ৬ মাসে উন্নীত করেছি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্টফিডিং কর্ণার স্থাপন করা হচ্ছে। কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল থেকে কর্মজীবী মায়েদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনকে আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নে জনগণের পুষ্টি স্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে মুজিববর্ষে শিশুকে মাতৃদুগ্ধপান করানোর উপকারিতা এবং গুঁড়াদুধ খাওয়ানোর অপকারিতা বিষয়ে প্রচারণা কার্যক্রমে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২০’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মকান্ডের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।